ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা অন্যদের তুলনায় মধ্যপ্রাচ্যকে বেশি চাপে ফেলেছে। লেবানন ও ইয়েমেনের মতো যেসব দেশ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অভ্যন্তরীণ সংঘাত মোকাবিলায় জেরবার হচ্ছিল, সেসব দেশে খাদ্যসংকটের প্রভাব দারুণভাবে আঘাত করেছে। মিশরও এ সংকট সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু পারস্য উপসাগরীয় মোকাবিলা করছে। এ নিয়ে লিখেছেন জোসেফ ডানা। আজ প্রথম কিস্তি।
ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা অন্যদের তুলনায় মধ্যপ্রাচ্যকে বেশি চাপে ফেলেছে। লেবানন ও ইয়েমেনের মতো যেসব দেশ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অভ্যন্তরীণ সংঘাত মোকাবিলায় জেরবার হচ্ছিল, সেসব দেশে খাদ্যসংকটের প্রভাব দারুণভাবে আঘাত করেছে। ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে আমদানি করা গম এবং অন্যান্য শস্যের ওপর চরম নির্ভরশীল দেশ মিসরও এ সংকট সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল এখন পর্যন্ত এ ঝড়কে অসাধারণভাবে মোকাবিলা করছে। এ দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তার দৃষ্টিভঙ্গি বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় ভূমিকা রাখতে পারে। খাদ্য উৎপাদনের জন্য মধ্যপ্রাচ্য যে প্রতিকূল জায়গা, সে কথা সুবিদিত। খাদ্যনিরাপত্তা ইস্যু এ অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অসন্তোষের উৎস হিসেবে কাজ করে। ২০১১ সালের আরব বসন্ত বিক্ষোভের প্রাথমিক কারণগুলোর মধ্যে এটি ছিল অন্যতম। সেচের জলেরঅভাব ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রচলিত কৃষিপদ্ধতি ব্যবহার করে এ অঞ্চলে বড় আকারের কৃষি খামার করা কার্যত অসম্ভব। এ প্রতিকূলতা এখানকার অনেক দেশকে উল্লেখযোগ্যভাবে উদ্ভাবনী কৌশলে বিশদ আকারের কৃষি খামার করতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
ইসরায়েলই প্রথম জলের অভাবের সমস্যা প্রশমনে প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করে। উন্নত সেচ কৌশল এবং সমুদ্রের পানিকে লবণমুক্ত করার (ডিস্যালাইনেট) ব্যবস্থা বিকাশের মাধ্যমে ইসরায়েলিরা স্বাদুপানিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা পেয়ে গেছে। এটি তাদের বড় আকারের চাষাবাদে সক্ষম করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো উপসাগরীয় দেশগুলোকে খাদ্য ও জল সরবরাহ সুরক্ষিত করতে একই রকম পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত হল বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডিস্যালাইনেটেড জলাধারের দেশ। দেশটির লিবা মরুভূমির একটি জলাধারে ২ হাজার ৬০০ কোটি লিটার পানি মজুত রয়েছে এবং এ জলাধার ভরতে প্রায় তিন বছর সময় লেগেছে। জরুরি প্রয়োজনে রিজার্ভটি প্রতিদিন ১ কোটি লিটার জল সরবরাহ করতে পারে। আবুধাবি প্রতিদিন ৪১ লাখ ৩০ হাজার ঘনমিটার লবণমুক্ত জল উৎপাদন করে। কৃষি এবং খাদ্য সরবরাহব্যবস্থা সুরক্ষিত করতে সৌদি আরবের নেতৃত্বে উপসাগরীয় দেশগুলো খাদ্য উৎপাদনের জন্য বিশ্বব্যাপী বিপুল পরিমাণ জমি কিনেছে। মিশর যেমন ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে খাদ্য আমদানি করায় তাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, ধনী উপসাগরীয় দেশগুলো তেমন করে পরের ওপর নির্ভরশীল হয়নি। এ দেশগুলো অন্যান্য দেশে জমি কিনেছে এবং তারা তাদের ভৌগোলিক সীমানার বাইরে গিয়ে খাদ্য উৎপাদন করছে। বৈশ্বিক মন্দার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এই অঞ্চল জোর পদক্ষেপ নেয়। জ্বালানির দাম কমে যাওয়া এবং আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় উপসাগরীয় সরকারগুলো স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে যেতে বাধ্য হয়। এর ফলে তারা আফ্রিকায় অনেক জমি কিনেছে। ২০১৫ সালে একটি উচ্চাভিলাষী চুক্তির আওতায় আবুধাবিভিত্তিক আল দাহরা অ্যাগ্রিকালচারাল কোম্পানি সুদানের উর্বর আল হাওয়াদ উপত্যকায় এক হাজার কোটি ডলারের কৃষি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর অংশ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে সেখানে তারা এক শ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct