সাইফুল লস্কর, বারুইপুর, আপনজন: ব্রিটিশ ভারতে ইসলাম ধর্মের প্রসারে ইসলাম সম্বন্ধে বহু বই লিখে প্রসিদ্ধ অর্জন করেছিলেন মুনশী মেহেরুল্লাহ। এবার সেই মুনশী মেহেরুল্লাহকে স্মরণ করে তার মৃত্যুর ১১৫ বছর পরে সংখ্যালঘু সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম পথিকৃৎ ‘আলিয়া সংস্কৃতি সংসদ’ মুনশি মেহেরুল্লাহ পুরস্কারে ভূষিত করলেন ‘মক্কা মদীনার পথে-প্রান্তরে’র স্রষ্টা প্রাক্তন পুলিশ অফিসার মহিউদ্দিন সরকারকে। রবিবার অপরাহ্নে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর লেগেটের পাশে এস পি কমিউনিটি হল-এ এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানে মহিউদ্দিন সরকারের হাতে মুনশী মেহেরুল্লাহ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। সাম্প্রতিক কালে রাজ্যের সংখ্যালঘু সাহিত্য চর্চা ও মনন নিয়ে এক অনন্য কর্মসূচি নিয়ে চলেছে ‘আলিয়া সংস্কৃতি সংসদ’, যার মূল কর্ণধার অধ্যাপক সাইফুল্লা শামিম। তার নিপুণ সঞ্চালনায় এদিন অনুষ্ঠিত হয় গুণীজন সংবর্ধনা ও সংস্কৃতি বীক্ষণ। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আমজাদ হোসেন সহ বিদ্বজ্জনদের উপস্থিতিতে এদিনের এই অনুষ্ঠান সাহিত্য অনুরাগীদের কাছে এক অনাবিল সংস্কৃতি রসদ জোগায়। ‘মুনশী মেহেরুল্লাহ’ পুরস্কারপ্রাপ্ত মহিউদ্দিন সরকার এদিন তার বক্তব্যে সংখ্যালঘু সাংস্কৃতিক উজ্জীবনে আলিয়া সংস্কৃতি সংসদের অনন্য ভূমিকার কথা তুলে ধরে বলেন, রাজ্যের সংখ্যালঘুরা যখন ইসলাম ও সংখ্যালঘু চর্চা নিয়ে যখন প্রায় স্তিমিত তখন আলিয়া সংস্কৃতি সংসদ নিয়মিত সাংস্কৃতিক অলোচনার আয়োজন করে ইসলামের প্রকৃত বার্তাকে তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। কুরআনের প্রথম বাণ ’ইকরা’ বা পড়, তাকে মূলধন করে আলিয়া সংস্কৃতি সংসদের নিরলস সাংস্কৃতিক চর্চার তিনি ভূয়সী প্রশংসা করেন।
মুর্শিদাবাদের ভূমিপুত্র হলেও মহিউদ্দিন সরকার তার সুদীর্ঘ ৩৮ বছরের পুলিশের চাকরি জীবন কাটান কলকাতাতেই। সেই সূত্রে কলকাতার শহরতলি বারুইপুর শহরেই তিনি স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যান। পুলিশে জীবনের মাঝে তিনি সাহিত্য চর্চার করতে ভোলেননি। কর্মজীবনের মধ্যেই তিনি ইসলাম নিয়ে চর্চার পাশাপাশি তা নিয়ে লেখায় মনোনিবেশ করেন। তারই এক অনন্য ফসল ‘মক্কা মদীনার পথে প্রান্তরে। হজব্রত করতে গিয়ে তার স্মৃতিচারণার এক অকপট ভ্রমণকাহিনীর মধ্যে তিনি ইসলামের রূপরেখা সহ মক্কা ও মদীনার ব্যাপ্তির কথা তুলে ধরেন এই বইয়ে। তা হজযাত্রীদের কাছে এক অনন্য নির্দেশনা হিসেবে সমাদৃত হয়। এছাড়া. ‘কুরআন ও হাদীসের মাহাত্ম্য’ শীর্ষক বই সহ আরও অনেক ইসলাম সমৃদ্ধ লেখা লিখেছেন। বলা যায়, তারই স্বীকৃতি হিসেবে মহিউদ্দিন সরকারের মিলেছে এদিনের মুনশী মেহেরুল্লাহ পুরস্কার। এদিন সত্তরোর্ধ্ব মহিউদ্দিন সরকার তার বক্তব্যে, এই বাংলায় যেসব সংখ্যালঘু সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চায় বিশেষ ভূমিকা নিয়ে চলেছেন তাদের কথা স্রোতাদের মাঝে তুলে ধরেন। ‘উদার আকাশ’ সম্পাদক ফারুক আহমেদ, বাংলার রেনেসাঁ সম্পাদক আজিজুল কিংবা কথা সাহিত্যিক মুসা আলি, আলোর দিশা পত্রিকার আব্দুল মান্নানের নিরলস ত্যাগ ও পরিশ্রমে সংখ্যালঘু জগতে যে সাহিত্য চর্চা হচ্ছে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, আলিয়া সংস্কৃতি সংসদের ড. সাইফুল্লা ও ড. আমজাদ হোসেন যেভাবে সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে ইসলামকে পুনরুজ্জীবিত করতে সক্রিয় রয়েছেন তাতে তাদের পাশে সচেতন মুসলিমদের দাঁড়ানো উচিত।
এদিন কয়েকটি পর্বে অনষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়। সংস্কৃতি-বীক্ষণ পর্বে কথাসাহিত্যিক মুসা আলি, বাংলার রেনেসাঁ সম্পাদক আজিজুল হক, নীল দিগন্ত সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের সম্পাদক তারাপদ দাস, বাচিকশিল্পী সেলিম দুরানি বিশ্বাস, সংস্কৃতি সংগঠক রুহুল আমিন বক্তব্য মনোজ্ঞ বক্তব্য রাখেন। আলিয়া সংস্কৃতি চর্চার কর্ণধার ড. সাইফুল্লা সুচারু সঞ্চালনায় এদিনের সংবর্ধনার মর্ম কথা ও সাহিত্য চর্চায় ইসলাম স্মরণের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন।এদিনের এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ হাজির ছিলেন। বিশিষ্টজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন টাইম অফ ইন্ডিয়া, ইকনোমিক টাইমস ও এই সময় পত্রিকার প্রাক্তন প্রকাশক এস আলি, পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক আহম হাসান ইমরান, ড. ফারুক রহমান, ড. মেহেদি কালাম, প্রাক্তন পুলিশ অফিসার ও কবি হাবিবুর রহমান, অধ্যক্ষ ড. আফসার আলি, শিক্ষাবিদ-সমাজেসেবক হাফিজুর রহমান, বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক একরামূল এইচ সেখ, আইনজীবী হাফিজুর রহমান, শিক্ষাবিদ আমানুল্লাহ, সমাজসেবক সাজ্জাদ হোসেন আখন, গল্পকার সেখ আব্দুল মান্নান প্রমুখ। জনাকীর্ণ সভাগৃহে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct