মার্কিন-আসিয়ান বিশেষ শীর্ষ সম্মেলনের এক সপ্তাহ পর এশিয়া সফর শুরু করেন জো বাইডেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথম তাঁর এশিয়ায় আসা। এই সফরে তাঁর বক্তব্য এবং এর প্রভাব বিচার করে বলা যায়, প্রথম এশিয়া সফরে বাইডেনের তিনটি কৌশলগত অভিপ্রায় উন্মোচিত হয়েছে। বাইডেনের লক্ষ্য ছিল আমেরিকাকে কেন্দ্র করে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় জোটব্যবস্থাকে মার্কিন নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করা। এবিষয়ে লিখেছেন দোং চুনলিং। আজ শেষ কিস্তি।
যে যেহেতু মার্কিন নীতিগুলো প্রধান শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা, তাই দেশটি স্বাভাবিকভাবেই অঞ্চলভিত্তিক কিছু দেশকে তার ‘পক্ষে নিতে’ বাধ্য করে, যা আঞ্চলিক সহযোগিতার মধ্যে ফাটল ধরায়। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন জোট আসলে একটি ‘শীতল যুদ্ধেরই রেশ’ এবং এ অঞ্চলে শীতল যুদ্ধ যুগের রেখে যাওয়া ধারাবাহিক নিরাপত্তা সমস্যা এখন প্রধান শক্তিগুলোর মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষের প্ররোচনা হিসেবে কাজ করছে। ‘চীনা হুমকি’র কথা বলে বলে এবং জোটকে শক্তিশালী করে যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত একটি নতুন শীতল যুদ্ধ শুরু করতে সক্ষম হতে পারে এবং এই অঞ্চলটিকে জোটভিত্তিক সংঘাতে নিমজ্জিত করতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপকে কৌশলগত দিক থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের সঙ্গে আবদ্ধ করে নিয়েছে এবং শীতল যুদ্ধের একটি লৌহ পর্দা ইউরেশিয়ায় এসে পড়েছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ায় জোট সংঘাতকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছে, যা সন্দেহাতীতভাবে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য একটি বিপজ্জনক সংকেত। আঞ্চলিক ‘স্বাধীনতা এবং মুক্ত পরিবেশ’ প্রচারের নামে আইপিইএফের লক্ষ্য হচ্ছে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত আধিপত্যে অংশগ্রহণ করতে মিত্রদের টেনে আনা এবং এশিয়ায় আমেরিকাকেন্দ্রিক একটি একচেটিয়া অর্থনৈতিক সমান্তরাল ব্যবস্থা গড়ে তোলা। সম্ভবত এই প্রক্রিয়াটিই এশিয়াকে একটি নতুন শীতল যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে।
প্রায় সময়ই বলা হয় যে একবিংশ শতাব্দী হচ্ছে এশিয়ার শতাব্দী। যা হোক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা অতি সন্তর্পণে স্থাপন করা একটি নতুন ঠাণ্ডা যুদ্ধের ফাঁদ এশিয়াকে একটি নতুন কৌশলগত ক্রস রোডে নিয়ে আসছে। একবার এই ফাঁদে পড়ে গেলে এশিয়া একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দুই দশকে গড়ে ওঠা দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা হারাবে এবং প্রধান শক্তিগুলোর প্রধান যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হবে। অতীতের শীতল যুদ্ধের রেখে যাওয়া এশিয়ার নিরাপত্তা সমস্যাগুলো যুদ্ধের নতুন গানপাউডারে পরিণত হবে। কিভাবে এই ফাঁদ থেকে দূরে সরে যাওয়া যায় এবং ‘এশিয়ার শতাব্দী’কে কিভাবে ‘এশিয়ার ট্র্যাজেডি’তে পরিণত হওয়া থেকে আটকানো যায়? শীতল যুদ্ধের ধারণার বাইরে নিরাপত্তার একটি নতুন ধারণা এবং ‘হয় মারো না হয় মরো’ জাতীয় খেলার বাইরে একটি নতুন নিরাপত্তা চর্চার প্রয়োজন। এটিই এখন এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সব দেশের জন্য একটি পরীক্ষা।
(সমাপ্ত)
লেখক চিনের ইনস্টিটিউট অব আমেরিকা স্টাডিজের অ্যাসিস্ট্যান্ট রিসার্চ ফেলো
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct