নিজস্ব প্রতিবেদক, মালদা, আপনজন: বাবা পেশায় কৃষক। মা বাড়িতেই বিড়ি বাঁধার কাজের সঙ্গে যুক্ত। অভাবের সংসারে এবারে উচ্চ মাধ্যমিকস্তরে মাদ্রাসার ফাজিল পরীক্ষায় রাজ্যে শীর্ষস্থান অধিকার করেছে ছাত্র মহম্মদ আলকামা। মাদ্রাসার ফাজিল পরীক্ষায় রাজ্য সেরা হওয়ার খবরের পর আলকামার বাড়িতে এখন অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাতে শিক্ষক, বিভিন্ন সংস্থা থেকে বিশিষ্টজনেরা ভিড় করছেন। মালদার মোথাবাড়ি থানার উত্তর লক্ষ্মীপুরের সুকুরদিটোলা গ্রামের বাসিন্দা আলকামা এবারের ফাজিল পরীক্ষায় ৬০০’র মধ্যে ৫৫৫ নম্বর পেয়ে রাজ্যস্তরে প্রথম স্থান দখল করেছে। এবছর কালিয়াচক থানার দারিয়াপুর সিরাজুল উলুম সিনিয়ার মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পরীক্ষার দিয়েছিলেন ওই ছাত্র মহম্মদ আলকামা। তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৫৫।
সে বাংলায় পেয়েছে ৯৪, ইংরেজিতে ৮৫, আরবিতে ৯৫, থিওলজি অর্থাৎ হাদিস-কোরানে পেয়েছেন ৯৩, ইসলামিক হিস্ট্রিতে ৯৪ এবং ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে ৯৪ পেয়েছে মহম্মদ আলকামা। সংশ্লিষ্ট বাসিন্দা হোসেন আলীর তিন মেয়ে ও এক ছেলে। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। এক মেয়ে পড়াশোনা করছে। বাড়ির একমাত্র ছেলে আলকামা। তার মা নাদিরা বিবি বিড়ি বাঁধেন। বাড়ি থেকে আলকামার স্কুলের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। প্রতিদিন সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতেন কৃতী ওই ছাত্র। ফাজিল পরীক্ষায় তার সাফল্যে গ্রামবাসীরাও গর্ববোধ করছেন। কৃতী ওই ছাত্র আলকামার বাবা হোসেন আলী জানিয়েছেন, কৃষি কাজ করে কোনরকমে সংসার চলে। অভাব মেটাতে তার স্ত্রী নাজিরা বিবিও বাড়িতে বিড়ি বাঁধার কাজ করে কিছু রোজগার করেন। এরইমধ্যে ছেলেকে কোনরকমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা। ছেলের এই সাফল্যে গর্ববোধ করলেও, আগামীতে তার উচ্চশিক্ষার জন্য দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পরিবারের লোকেরা। এজন্য প্রশাসন ও সরকারের কাছে ছেলের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা দরবার করেছেন কৃতি ওই ছাত্রের পরিবার।
কৃতী ছাত্র মহম্মদ আলকামা বলেন, কিছুদিন আগে আমি উত্তরপ্রদেশে আরবিক অনার্স নিয়ে পড়বো বলে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলাম। তারই মধ্যে অনলাইনে ফাজিল পরীক্ষায় আমার রাজ্য সেরা হওয়ার বিষয়টি জানতে পারি। পরিবারের অভাব রয়েছে। এই অবস্থায় উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা দরবার করেছেন কৃতী ওই ছাত্র। তিনি বলেন , ভবিষ্যতে আরবিক বিষয় নিয়ে গবেষণা করে অধ্যাপক হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তাঁর।
এদিকে নিজের বিধানসভা কেন্দ্র মোথাবাড়িতে ফাজিল পরীক্ষায় রাজ্য সেরা হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেই কৃতী ওই ছাত্র আলকামার সঙ্গে দেখা করার কথা জানিয়েছেন রাজ্যের সেচ ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, ওই ছাত্র জেলার নাম গর্বিত করেছে। মুখ্যমন্ত্রী ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে গোটা রাজ্যের দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। সেক্ষেত্রে আলকামার উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে কোন অসুবিধা হবে না। তাকে সবরকম ভাবে সহযোগিতা করা হবে। মাদ্রাসার ফাজিল পরীক্ষায় রাজ্য সেরা মহম্মদ আলকামার বাড়িতে গিয়ে বুধবার দুপুরে সংবর্ধনা জানান মালদা জেলা আন এডেড প্রাইভেট স্কুল এসোসিয়েশন। সংস্থার সভাপতি আমিরুল ইসলাম, সম্পাদক আতিকুর রহমান, এজাবুল হক প্রমুখ ৮/১০ জন সদস্য সংবর্ধিত করেন আলকামাকে। তার হাতে পুষ্পস্তবক, মিষ্টান্ন, স্মারক উপহার তুলে দিয়ে সংবর্ধিত করেন ও ভবিষ্যতে যাতে আরো সাফল্যের সাথে এগিয়ে যায় সেই বার্তা তুলে ধরেন উপস্থিত আনএডেড প্রাইভেট স্কুল এসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষ। সংগঠনের সভাপতি আমিরুল ইসলাম বলেন, আমরা চাই যারা মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছে তারা ভবিষ্যতে আরো সাফল্যের সাথে এগিয়ে যাক। মোথাবাড়ির উত্তরলক্ষীপুরের আলকামা ও যুগ্মভাবে তৃতীয়কালিয়াচকের বাইসি মাদ্রাসার ছাত্রী আজিজা খাতুনকে উৎসাহদান ও পাশে থাকার বার্তা দেওয়া হল আমাদের তরফে। ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষার উন্নয়নে আমরা পাশে আছি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct