বাম জামানার উপ মুখ্যামন্ত্রী প্রয়াত বিনয় চৌধুরী এক সময় মন্তব্য করেছিলেন, “বাম সরকার অফ দি কন্ট্রাক্ট ,বাই দি কন্ট্রাক্টর ,ফর দি কন্ট্রাক্টর। তখন আমরা কলেজের ছাত্র।সমস্ত সংবাদ পত্রে পরেরদিন সংবাদ শিরোনাম। জ্যোতি বাবু তখন বাংলার তখতে। বহুবছর পরে আবার যেন সেই কথারই প্রতিধ্বনি শুনছি সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণে। দল করলে কন্ট্রাক্টরি চলবে না। আর কন্ট্রাক্টরি করলে দল করা চলবে না। তাঁর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। লিখেছেন এস এম শামসুদ্দিন।
বাম জামানার উপ মুখ্যামন্ত্রী প্রয়াত বিনয় চৌধুরী এক সময় মন্তব্য করেছিলেন, “বাম সরকার অফ দি কন্ট্রাক্ট ,বাই দি কন্ট্রাক্টর ,ফর দি কন্ট্রাক্টর। তখন আমরা কলেজের ছাত্র।সমস্ত সংবাদ পত্রে পরেরদিন সংবাদ শিরোনাম। জ্যোতি বাবু তখন বাংলার তখতে। বহুবছর পরে আবার যেন সেই কথারই প্রতিধ্বনি শুনছি সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণে। দল করলে কন্ট্রাক্টরি চলবে না। আর কন্ট্রাক্টরি করলে দল করা চলবে না। তাঁর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আরে বাবা পেটে পাথর বেঁধে কি দল করবে কর্মীরা -দলীয় কর্মী অথচ কন্ট্রাক্টরদের স্বাগক্তি কান খাড়া করলেই শুনতে পাওয়া যায়। তাঁদের ও সংসার ধর্ম আছে। কে দেবে খরচ। নেতাদের কি বাবার টাকার কল আছে।আর যাঁর যত সমর্থক তত বড় সে নেতা।তাই সহজ উপায় দলও করো -মালও কামাও, এ এখন আকসার মুড়ি মুড়কির মতো চোখে পড়ে।
দল করে - তাই তাঁকে কাজ দিতে হবেই। কাজে ফাঁকি বা অসম্পূর্ণ কাজ আবার কোথাও কাজ না করেও সেটিং করে ভাগাভাগি এ আর নতুন বিষয় নয়। দলের একশ শতাংশ কন্ট্রাক্টররা সব এমন করছে তা নয় কিন্তু যাঁরা করছে তাঁদের সংখ্যাও কম নয়। যাঁরা দলের দায়িত্বে থাকেন তাঁরা পড়েন মহা বিড়ম্বনায়। যেহেতু দলের কর্মী তাই নেতৃত্ব যাঁরা থাকেন তাঁরা কিছু বলতে পারেন না – ভুল জেনেও নীরব থাকতে হয়। ফলে জনগণের চোখে দলের ভাবমূর্তি তলানিতে ঠেকে।এ যেন দলীয় সমর্থক কন্ট্রাক্টরদের অধিকার। ফলত কাজের ফাঁকি।জনগণ বুঝেও ঝঞ্ঝাট এড়াতে চোখে ঠুলি।আমার জানা একটা জায়গায় একলাখ টাকার কাজের বরাত পেয়ে কাজ করছেন কন্ট্রাক্টর। স্থানীয় মানুষ হিসেবে করে দেখেন মেরে কেটে পঞ্চাশ হাজার হবে। স্থানীয় মানুষের জিজ্ঞাসায় কন্ট্রাক্টর বললেন আরে ভাই ও সব বুঝবেন না আপনারা। আমি তো দু পয়সা লাভের জন্য কাজ করছি না কি ? তারউপর আছে ভাগ এবং ভাগের পর ভাগ। কাজ করো না করো তাঁদেরভাগ আগে জমা দিয়ে কাজ তবে পেয়েছি । তাই বেশি বক বক করো না , যেটা হচ্ছে সেটাও হবে না।জনগণ আর কি করবে। কে ঝঞ্ঝাট চায়। একলাখের কাজ পঞ্চাশে শেষ করে বিল হয়ে বের হয়ে যায়।প্রতিবাদের জায়গা বন্ধ।
আসলে একটা শ্রেণী যাঁরা তাল বোঝে , শাসক পরিবর্তন আর ক্ষমতা বানদের গতি প্রকৃতি বোঝে , বুঝে লাল থেকে নীল আবার নীল থেকে গেরুয়া। গেরুয়া থেকে নীল বা আবার অন্য কোথাও নয় শাসন ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে জানে ,তাঁরা চিরকালই আখের গোছাতে ওস্তাদ।তাঁরা আখের গোছায় আর দলের দুর্নাম হয়। নেতৃত্বের অলিন্দে অথবা সরাসরি ক্ষমতায় আসীন হয়ে যায় তাঁরা ।আমার জানা এক বাবু তিনি এক কেন্দ্রের নেতা। কন্ট্রাক্টর নন তিনি কিন্তু তাঁর পুত্র জামাই আত্মীয় সকলেই ঠিকাদার কন্ট্রাক্টর। আর তিনি একটা ব্লকের নেতৃত্ব ও প্রশাসনের মাথায়, প্রধান চেয়ারে। চেয়ারে বসার আগে ছিল টিনের ছাওয়া একতলা বাড়ি।এই কয়বছরে তাঁর সুরম্য প্রাসাদ। সমস্ত বাড়ি ,বাথরুম পর্যন্ত এসি। সাইকেল থেকে কয়েকটি মোটর সাইকেল ও কয়েকটি চার চাকা এ সি গাড়ি। বাবু এ সি চড়ে বের হন -আর ফেরেন। জনগণ শুধু দেখেন অন্তরে জ্বলেন আর মিটি মিটি হাসেন।না হাসলে ভাগ্যে দুঃখ নেমে আসে। দল বদল করে তিনি সৌভাগ্যের চাকা একশ শতাংশ ঘুরিয়ে দিয়েছেন কৌশলে আরও কারো কারো বায়না পূরণ করে হয়ত। এই রাশ কি টানা সম্ভব! নৈতিক মূল্যবোধের যাঁরা গলাটিপে মেরেছে তাঁদের কাছ থেকে আশা করা কতটা সমীচীন জানিনা।
আসলে দল নয়, সামাজিক অবক্ষয় রোগে আমরা এখন মারাত্মকভাবে সংক্রামিত। ভোগবাদের শিকার। গাড়ি - সুরম্য বাড়ি না থাকলে সমাজে তাঁর কদর নেই।কেউ পাত্তাও দেয় না। দূর ফেকলু - বলে এড়িয়ে চলে। স্বচ্ছতা সততা যোগ্যতাকে এখন কেউই মূল্য দেয় না। এ রোগের শিকার কোনও বিশেষ দল বলে নয় , এ এক সামাজিক নৈতিক মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়।এ নৈতিক ক্ষয় রোধের চেষ্টা করার আহবানকে আন্তরিক সাধুবাদ জানাই। যাঁরা অন্য দলের সমর্থক এই সবের সমালোচনা করেন তাঁরাও কি বুক ঠুকে বলতে পারবেন এই ক্ষয় রোধ করতে পারবেন তাঁরা। আসলে শুরু তো হয়েছে গত শাসন থেকেই ,তাই তো বিনয় চৌধুরী এই দ্রুব সত্য কথাটি বড় খেদের সঙ্গে সাংবাদিকদের সামনেই বলেছিলেন। আজ অভিষেক ব্যানার্জির কথায় সেই প্রতিধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। কিছুদিন আগে পাঞ্জাবে আপ দলের এক মন্ত্রীর দুর্নীতির খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে বহিস্কার করার সংবাদ আমরা জেনেছি এবং গ্রেফতারের খবর আমাদের অজানা নয়। এমন দৃষ্টান্ত মূলক সিদ্ধান্ত নিতে পারলে দলের জীবনী শক্তি বাড়বে সন্দেহ নেই। কিন্তু রাজনীতি যদি পেশা হয়, আর দ্বিতীয় আয়ের কোনও উৎস না থাকে তাঁকে তো আমরাই ঠেলে দিচ্ছি অন্যাপথে। দলের নেতৃত্বে যাঁরা আসবেন তাঁদের নির্দিষ্ট আয়ের উৎস বা তিনি স্বাবলম্বী কি না ভেবে দেখা একান্ত আবশ্যক।যাঁরা দেশ রাজ্য চালান তাঁরা নিশ্চিতভাবে নিজেদের ও দলের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ রাখতে আন্তরিক সচেষ্ট।তাঁদের ঘোষণা যদি আন্তরিক হয় সমাজ ও দেশ বাঁচবে সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়নের সঠিক স্বাদ পাবে জনগণ সন্দেহ নেই।
লেখক শিক্ষক ও বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct