‘বায়োনিক রিডিং’ দ্রুত পড়ার নয়া পদ্ধতি
ফৈয়াজ আহমেদ
_______________________
পড়তে আপনার কেমন লাগে? একেকজনের কাছে এর উত্তর একেক রকম। বইপড়ুয়া কারও কাছে বই হলো স্বপ্নের মতো, সুন্দর সময়ের সবচেয়ে জরুরি অনুষঙ্গ। আবার অনেক আছেন, বই নিয়ে বসলেই ঘুম পায়। মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন। কারও তো পড়ার বই বাদে অন্য বই ধরার সময়ই হয় না, ইচ্ছাও করে না। উত্তর যে রকমই হোক না কেন, জীবনের বড় একটা সময়জুড়ে, কমবেশি সবার জন্যই বই আবশ্যকীয় এক উপাদান। পড়াশোনার পাট চুকানোর পর অনেকেরই বইয়ের সঙ্গে সম্পর্কটা আর থাকে না। যে কারণে পড়াশোনা থেকে যেমন মানুষের আগ্রহ চলে যায়, তেমনই বড় লেখা দেখলেই কেমন যেন ভয় ভয় লাগে। মনে প্রশ্ন জাগে, এত বড় লেখা কিংবা এত বড় বই কীভাবে পড়ে শেষ করব? অনেকে আছেন, দীর্ঘ লেখা দেখলেই গুটিয়ে পড়েন। ভাবেন, এত বড় লেখা মনোযোগ ধরে রেখে শেষ করবেন কীভাবে? এই ব্যাপারকে বলা হয় ‘রিডার্স ব্লক’।
পড়তে পড়তে হঠাৎ মনোযোগ হারিয়ে যাওয়া বা দীর্ঘক্ষণ কোনো বড় লেখায় মনোযোগ ধরে রাখতে না পারাকে ‘রিডার্স ব্লক’ হিসেবেই ধরা হয়। কিন্তু কেমন হবে যদি রিডার্স ব্লক থাকা সত্ত্বেও অনায়াসে লম্বা লেখা পড়ে ফেলা যায়? সেটারই চেষ্টা করছেন লেখক ও গ্রাফিক ডিজাইনার রেনাটো ক্যাসাট, যিনি ‘জুয়ান বুইস’ নামে লেখেন। বড় লেখা পড়ার এক নতুন নিয়ম আবিষ্কার করেছেন তিনি। যাতে করে পড়াও যেমন দ্রুত হবে, তেমনি মনেও থাকবে অনেক সময় ধরে। যার নাম দিয়েছেন তিনি ‘বায়োনিক রিডিং’। বায়োনিক রিডিং হলো পড়ার একটা নতুন পদ্ধতি। বেশ কিছুদিন ধরেই নতুন অক্ষর নিয়ে কাজ করছিলেন সুইজারল্যান্ডের টাইপোগ্রাফিক ডিজাইনার রেনাটো ক্যাসাট। সেখান থেকেই তৈরি করেছেন ‘বায়োনিক রিডিং’ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে কোনো শব্দের প্রথম বা সংক্ষিপ্ত অংশটুকু হাইলাইট (বোল্ড) করে দেওয়া হয়। যাতে মানুষের চোখ ঠিক সেই জায়গাতেই যায়। এতে করে পুরো লেখার মাঝে ওই নির্দিষ্ট অক্ষরগুলো বেশি চোখে পড়ে। ফলে শব্দের প্রথম অংশ পড়েই পাঠক শব্দটা বুঝতে পারে। বাক্যের সঙ্গে মিলিয়ে অনুমান করে নেয়। দ্রুত পড়া হয় বলে মনোযোগটাও সেখানে থাকে।
এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়। এর আগেও দ্রুত পড়ার পদ্ধতি নিয়ে এসেছিল ‘স্পিড রিডিং’। যাতে করে একটা বাক্যের কয়েকটি শব্দ পড়লেই পুরো বাক্যটি পড়া হয়ে যেত। কিন্তু তাতে খুব একটা সাফল্য আসেনি। কেননা, স্পিড রিডিংয়ের জন্য পড়ুয়াদের নতুন করে পদ্ধতিটি শিখতে হতো। যেটি এ ক্ষেত্রে দরকার হয় না। রেনাটো ক্যাসাটের মতে, বায়োনিক রিডিং নতুন করে শেখার দরকার নেই। কেবল পড়তে পারলেই হবে। অনেকে এমনিতেই দ্রুত পড়তে পারেন। কারও আবার ডিসলেক্সিয়া (শব্দের অক্ষর গুলিয়ে ফেলার সমস্যা) আছে, তাঁদের জন্য বেশ উপকার হবে এই পদ্ধতি। এমনকি পেশাগতভাবেও যাঁদের দ্রুত পড়ার দরকার হয়, তাঁদেরও সাহায্য হবে। ‘ডিসলেক্সিয়া সেন্টার অব উটাহ’র মতে, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রতি পাঁচজনের একজনের ডিসলেক্সিয়া আছে। ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত অনেকেই এই পদ্ধতিকে তাদের জন্য বেশ উপকারী বলে রায় দিয়েছেন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই পদ্ধতিকে ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে লোকজন। এটিকে দ্রুত সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন অনেকে। বর্তমানে বায়োনিক রিডিংয়ের ওয়েবসাইটে গেলে ফ্রিতেই যেকোনো লেখাকে ‘বায়োনিক রিডিং’ পদ্ধতিতে পরিণত করতে পারবেন। প্লে স্টোর ও অ্যাপল স্টোরে তাদের অ্যাপও আছে। সেখান থেকেও সহজে ব্যবহার করা যাবে এই পদ্ধতি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct