একজন গর্ভবতী মা গর্ভধারণের পর থেকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগ পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রাখেন। শুধু মা-ই নন, মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠা শিশুরও যত্ন প্রয়োজন, যাকে বলা হয় গর্ভকালীন সেবা। এই গর্ভকালীন যত্নের লক্ষ্য হলো মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং গর্ভজনিত কোনো জটিলতা দেখা দিলে তা প্রতিরোধ বা চিকিৎসা করা । এককথায় মায়ের স্বাস্থ্যের কোনো অবনতি না করে পরিবার, সমাজ ও দেশকে একটি সুস্থ শিশু উপহার দেওয়া। আর তাই নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, নিরাপদ মাতৃস্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস ও নবজাতকের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। তাই গর্ভবর্তী নারীর প্রতি অবহেলা নয়, চাই মানবিকতা। এটা একটা সামাজিক দায়িত্ব পালনের মতো। এ নিয়ে লিখেছেন মাহতাব হোসাইন।
২৮ মে, শনিবার ছিল বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। একজন নারীর জীবনে পূর্ণতা আনে মাতৃত্বের স্বাদ। আর সে মাতৃত্বকে নিরাপদ করতে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ১৯৮৭ সালে কেনিয়ায় নাইরোবি কনফারেন্স এ নিরাপদ মাতৃত্বের ঘোষণা করা হয়। মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে আনাই এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। ২০১৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ উদ্যোগ টেকসই উন্নয়নের অন্তর্ভুক্ত করে। প্রতিবছরের মতো এবারও ২৮ মে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। একজন গর্ভবতী মা গর্ভধারণের পর থেকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগ পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রাখেন। শুধু মা-ই নন, মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠা শিশুরও যত্ন প্রয়োজন, যাকে বলা হয় গর্ভকালীন সেবা। এই গর্ভকালীন যত্নের লক্ষ্য হলো মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং গর্ভজনিত কোনো জটিলতা দেখা দিলে তা প্রতিরোধ বা চিকিৎসা করা । এককথায় মায়ের স্বাস্থ্যের কোনো অবনতি না করে পরিবার, সমাজ ও দেশকে একটি সুস্থ শিশু উপহার দেওয়া। আর তাই নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, নিরাপদ মাতৃস্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস ও নবজাতকের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা।
গর্ভাবস্থা, যদিও একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে সুখী পর্যায়গুলোর মধ্যে একটি, একইসঙ্গে গুচ্ছ মানসিক ও শারীরবৃত্তীয় চাপ তৈরি করে। গর্ভবতীদের তাই তাদের জীবনের এই পর্যায়ে নিজেদের যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। যত্ন, খাদ্য এবং পুষ্টি বিষয়ে, গর্ভাবস্থায় কোন খাবার খেতে হবে তা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। গর্ভবতীদের নিজেদের এবং তাঁদের শিশুদের উভয়ের পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে উভয়ের জন্যই জন্য খেতে হবে। আর গবেষণায় দেখা গেছে যে, গর্ভবতীদের প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ অতিরিক্ত ক্যালোরি প্রয়োজন। এই অতিরিক্ত ক্যালোরির প্রয়োজনের সঙ্গে ১ হাজার ২০০ মিলিগ্রামের ক্যালসিয়াম, ৬০০ থেকে ৮০০ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট এবং ৭০০ মিলিগ্রামের লোহা প্রয়োজন। একটি খাদ্যের মাধ্যমে ওপরের সব পুষ্টির প্রয়োজনীয়তাগুলো মেটানো কঠিন মনে হতে পারে; ভালো খবর এটাই যে অতিরিক্ত পুষ্টি পাওয়া যতটা কঠিন মনে হয় ততটা কঠিন নয়। আমাদের পুষ্টি গ্রহণ মূলত আমরা যে খাবার বেছে নিই তার ওপর নির্ভর করে। এ জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, মৌসুমি ফল–শাকসবজি খেতে হবে। এ সময় প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ জল পান করতে হবে। অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো।
নারীর গর্ভকালীন সময়ে প্রথম দু-তিন মাস ও শেষের তিন মাস অতিরিক্ত পরিশ্রম না করে হালকা হাঁটাচলা করা উচিত। ভারী জিনিস বহন করা বা তোলা যাবে না। পিচ্ছিল স্থানে হাঁটা যাবে না এবং সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এ সময় দিনের বেলা কমপক্ষে দু-ঘণ্টা ঘুম বা বিশ্রাম এবং রাতে কমপক্ষে আট ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক। ঘুমানো বা বিশ্রামের সময় বাঁ-কাত হয়ে শোয়া ভালো। গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস ও শেষ তিন মাস দীর্ঘ ভ্রমণে না যাওয়াই ভালো। উঁচু-নিচু পথ কিংবা ঝাঁকির আশঙ্কা আছে এমন যানবাহনে ভ্রমণ করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। সকালে ও বিকেলে কিছু সময়ের জন্য স্বাস্থ্যকর ও মনোরম পরিবেশে ভ্রমণ গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভালো, এতে শরীর সুস্থ ও মন প্রফুল্ল থাকে। তাই ফুলের বাগান, লেকের পাড়, পার্ক—এসব স্থানে ভ্রমণ করা উচিত। অতিরিক্ত আবেগ, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, ভয়, রোগ-শোক ইত্যাদি গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, তাই এসব এড়িয়ে ভালো চিন্তা করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা যাবে না। জলশূন্যতা রোধে স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সব ধরনের ঝুঁকি এড়াতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া আবশ্যক। পরিশেষে বলতে চাই, গর্ভাবস্থায় প্রত্যেক নারীর বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। কারণ, একজন নারী যতবারই গর্ভধারণ করেন ততবারই জটিলতা দেখা দিয়ে, তাঁর জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তাই গর্ভধারণ করলে নারীর নিজের ও পরিবারের সদস্যদের উচিত তাঁর শরীরের প্রতি যত্ন নেওয়া ও প্রসবের জন্য আগে থেকে পরিকল্পনা করা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct