আপনজন ডেস্ক: ভারতে সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মুসলিমরা যাদের জনসখ্যা প্রায় ২০ কোটি। প্রায়শ তাদের বিবাহ ও প্রজনন সম্পর্কে এমন তথ্য পরিবেশন করা হয় যা মানুষের মধ্যে একটা বিশেষ ধারণা তৈরি হয়। কিন্তু এর মধ্যে কতটুকু সত্য এবং কতটুকু কল্পকাহিনি তা নিযে বরাবরই নানা প্রশ্ন চিহ্ন রয়ে গেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে ৫ (এনএফএইচএস-৫) এর সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরলে মুসলিম সম্প্রদায় সম্পর্কে বিবাহ, প্রজনন নিয়ে বিকৃত প্রচারণা চলছে তা স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
সমাজে ধারণা রযেছে যে মুসলিমদেরই কেবল বাল্য বিবাহ হয়। যেহেতু মুসলিম পার্সোনাল ল অনুযায়ী মুসলিম মেয়েদের ১৫ বছর বয়স হলেই বিবাহ যোগ্য তাই, তাদের কম বয়সে বিয়ের একটা প্রচলিত ধারণা রয়েছে। কিন্তু ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে-৫ রিপোর্ট বলছে মুসলিম ও হিন্দু মেয়েদের বিয়ের গড় বয়স সমান। এনএফএইচএ-৫ রিপোর্ট বলছে একজন মুসলিম নারীর বিয়ের গড় বয়স ১৮.৭ বছর। যার অর্থ এই সম্প্রদায়ের অর্ধেকেরও বেশি মহিলা ১৮-১৯ বছর বয়সে বিয়ে করেন। হিন্দু মহিলাদের মধ্যে বিবাহের গড় বয়স প্রায় একই ১৮.৭ বছর। অর্থাৎ মুসলিমদের মধ্যেই শুধু কম বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়ে এই ধারণা যে ভুল তা প্রমাণ করে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য সমীক্ষা। অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মধ্যে, মহিলাদের বিয়ের গড় বয়স শিখ, ২১.২ বছর; খ্রিস্টান, ২১.৭ বছর এবং জৈন ২২.৭ বছর। মুসলমানদের বিরুদ্ধে করা সবচেয়ে বড় অভিযোগগুলির মধ্যে একটি হল যে তাদের অনেক বেশি সন্তান রয়েছে, যা ভারতের জনসংখ্যা বিস্ফোরণ। আর তা জনসংখ্যার ভারসাম্যকে বিঘ্নিত করে তুলবে। প্রকৃতপক্ষে, ২০১৫ সালে, দক্ষিণপন্থী হিন্দু নেতা উন্নাওয়ের সাংসদ সাক্ষী মহারাজ বলেছিলেন, মুসলমানদের থেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য হিন্দুদের অবশ্যই কমপক্ষে চারটি সন্তানের জন্ম দিতে হবে।
যাইহোক, টোটাল ফার্টিলিটি রেট (টিএফআর, একজন মহিলা তার জীবদ্দশায় যে গড় সংখ্যক সন্তানের জন্ম দিতে পারে) এর দিকে নজর দিলে দেখা যায় যে মুসলিম সম্প্রদায় উচ্চ জন্ম হার নথিভুক্ত করে, তবে এটি অন্যান্য সম্প্রদায়ের তুলনায় খুব বেশি নয়। এনএফএইচএস-৫ এর মতে, ১৯৯৮-৯৯-এ মুসলিমদের টিএফআর যেখানে ছিল ৩.৬ তা ২০১৯-২১ কমে হয় ২.৩৬। এর অর্থ ১০০ জন মহিলার দ্বারা ২৩৬টি সম্ভাব্য সন্তানের জন্ম দেয়, যা প্রতিটি মহিলা দুইয়ের বেশি কিন্তু তিনটিরও কম শিশুর জন্ম দেয় বোঝায়। হিন্দুদের মধ্যে টিএফআর ১.৯৪ হিসাবে রেকর্ড করা হয়েছে। অর্থাৎ একজন হিন্দু মহিলা দুজনের কম সন্তানের জন্ম দেন। বিবাহ সংক্রান্ত সমীক্ষায় দেখা গেছে, মাত্র ১৫.৮ শতাংশ মুসলিম মহিলা রক্তের আত্মীয় (চাচাতো ভাই বা অন্যান্য রক্তের আত্মীয়) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বৌদ্ধ / নব্য বৌদ্ধ সম্প্রদায় ১৪.৫ শতাংশ, খ্রিস্টানরা ১১.৯ শতাংশ ও হিন্দুরা আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে করেন ১০.১ শতাংশ। মুসলিম পার্সোনাল ল’-এ ১৫ বছর বয়সের পর নারী-পুরুষের বিয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct