নাজিম আক্তার,চাঁচল,আপনজন: তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় প্রতিবাদী যুবকের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে মালদার রতুয়া বিধানসভার বিধায়কের দলবলের বিরুদ্ধে। গ্রামে ঢোকার রাস্তা পাকা করার জন্য ফোন মারফতে বিধায়ককে জানিয়েছিলেন এক তৃণমূল কর্মী।এতে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বিধায়ক। ফোনে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে বিধায়ক বলে অভিযোগ। অশ্লীল ভাষা প্রয়োগের জন্য তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে এই দাবি জানিয়ে বিধায়কের বিরুদ্ধে পথ অবরোধও করেছিলেন বাসিন্দারা। শাসকদলের বিধায়কের বিরুদ্ধে এত সাহস দেখানো যে ভালো নয় তার প্রমাণ হাড়েহাড়ে পেলেন বিধায়কেরই নির্বাচনি বুথ পোলিং এজেন্ট। বাড়ি থেকে বাজার যাওয়ার পথে হামলার শিকার হন তিনি। পিছন থেকে মাথায় আঘাত পেয়ে লুটিয়ে পড়েছিলেন বাড়ির কাছেই। প্রায় আধঘণ্টা পর বাড়ির লোকজন তাঁকে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এই খবর চাউর হতেই আরও একবার শোরগোল পড়ে যায় রতুয়া-১ ব্লকের দেবীপুর পঞ্চায়েতের বাণীকান্তটোলা গ্রামে। স্থানীয়রা শুক্রবার রাতেই আহতকে স্থানীয় রতুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। মাথায় সেলাই আর ব্যান্ডেজের পর প্রথমে হাসপাতালের বেডেই দীর্ঘক্ষণ নেতিয়ে পড়ে থাকেন প্রশান্ত মণ্ডল নামে ওই প্রতিবাদী যুবক। অবশ্য খানিক পরে সুস্থতা অনুভব করায় রতুয়া থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। যদিও এই বিষয়ে বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।এদিকে অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে রতুয়া থানার পুলিশ।এখনো পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি বলে খবর।
রতুয়া-ভালুকা রাজ্য সড়কের দুর্গাপুর থেকে বাণীকান্তটোলা গ্রামটির দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি পাকা করার দাবিতে স্থানীয় দেবীপুর পঞ্চায়েতের পাশাপাশি বিধায়কের দ্বারস্থ হয়েছিলেন গ্রামবাসীরা।শেষ পর্যন্ত তাঁরা গ্রামেরই প্রশান্ত মণ্ডলের দ্বারস্থ হন। কারণ,গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রশান্তবাবু ওই কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী সমর মুখোপাধ্যায়ের বুথ পোলিং এজেন্ট ছিলেন। গ্রামবাসীদের স্বার্থে প্রশান্তবাবু বিধায়ককে ফোন করে রাস্তা পাকা করার আর্জি জানান।কিন্তু রাস্তা পাকা করার আশ্বাস দেওয়া তো দূরের কথা,ফোনে অশ্রাব্য ভাষায় তাঁকে গালিগালাজ করে ফোন কেটে দেন সমরবাবু। তার অডিয়ো রেকর্ডিংও প্রশান্তবাবুর কাছে রয়েছে।বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামের বাসিন্দারা।পাকা রাস্তার দাবি আর দুর্ব্যবহারের জন্য বিধায়কের ক্ষমা চাওয়া উচিত মনে করে গত বুধবারই তাঁরা দুর্গাপুর বাসস্ট্যান্ডে পথ অবরোধ করলেও রতুয়া থানার পুলিশের হস্তক্ষেপে ঘণ্টাখানেক পর সেদিনের মতন অবরোধ উঠে যায়।
সেদিনের অবরোধে যে ক’জন নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন প্রশান্তবাবু।৭২ ঘণ্টার মধ্যেই তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটায় অভিযোগের তীর বিধায়কের দিকে। অভিযোগ, শুক্রবার সন্ধেয় তিনি বাড়ি থেকে দুর্গাপুর বাজারে যাচ্ছিলেন। বাড়ির কিছুটা দূরেই একটি আমবাগানে পিছন থেকে তাঁর মাথায় কেউ বা কারা আঘাত করে। মাথা ফেটে যায় তাঁর। জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়েন বাগানে। সেভাবেই পড়ে থাকেন প্রায় আধঘণ্টা। এরপর বাড়ির লোকজনের নজরে পড়ে বিষয়টি। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে আরও একবার শোরগোল বেধে যায় গোটা গ্রামে। তড়িঘড়ি তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় রতুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে। রাত বাড়লে সেই খবর ছড়িয়ে পড়ে রতুয়া জুড়ে। বন্ধ হয়ে যায় ৮৫ বছর বয়সী বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়ের ফোন। তবে এতকিছুর পরেও হাল ছাড়তে নারাজ প্রশান্ত। হাসপাতালে চিকিৎসার পর খানিকটা ধাতস্থ হয়ে প্রশান্ত জানান, ‘রাস্তার দাবিতে পথ অবরোধ করায় বিধায়ক সমর মুখার্জি আমায় মেরে ফেলার জন্য লোক লাগিয়েছেন। এর আগেও তিনি আমাকে হুমকি দিয়েছিলেন। রাস্তা নিয়ে বেশি কথা বললে আমাকে খুন করাবে বলেছিল। গতকাল সকালে দীপক মণ্ডল নামে সমর মুখার্জির এক সঙ্গী আমাকে হুমকি দেয়, বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে। হাসপাতালে প্রশান্তবাবুর স্ত্রী ফুলন মণ্ডল বলেন, ‘সেদিন রাস্তার দাবিতে ও পথ অবরোধ করেছিল। তার জন্যই এমন কাণ্ড ঘটে গেল। রাস্তার দাবি করায় ফোনে সমর মুখার্জি ওকে গালাগালি করেছিল। আমার সন্দেহ বিধায়কের ইন্ধনেই এই ঘটনা ঘটেছে। রতুয়ার আইসি সুবীর কর্মকার জানিয়েছেন, রাতের অন্ধকারে হামলার অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct