ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ যখন পুরো বিশ্বপরিস্থিতি আমূল পাল্টে দেয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি করছে তখন মধ্যপ্রাচ্যে ঘটনাবলির নতুন বিন্যাসের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এই অঞ্চলে দৃশ্যমান ও অদৃশ্য নানা ঘটনা ঘটছে, যাতে মনে হয় বিশ্বের সবচেয়ে সংবেদনশীল এই এলাকায় বড় কোনো বিন্যাস তৈরি হচ্ছে। কূটনৈতিক তৎপরতায় ওয়াশিংটনের কিছু ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ‘উত্তেজনা কমানো’ এবং ‘পুনর্বিন্যাস’ নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে। এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবে দেখা হয়। মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে লিখেছেন মাসুম খলিলী। আজ প্রথম কিস্তি।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ যখন পুরো বিশ্বপরিস্থিতি আমূল পাল্টে দেয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি করছে তখন মধ্যপ্রাচ্যে ঘটনাবলির নতুন বিন্যাসের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এই অঞ্চলে দৃশ্যমান ও অদৃশ্য নানা ঘটনা ঘটছে, যাতে মনে হয় বিশ্বের সবচেয়ে সংবেদনশীল এই এলাকায় বড় কোনো বিন্যাস তৈরি হচ্ছে।গত সপ্তাহে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান সৌদি আরব সফর করেন। সেখানে তিনি বাদশাহ সালমান এবং ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে দেখা করেন। এপ্রিলের শেষের দিকে, ইরানি মিডিয়া নিশ্চিত করেছে যে, সৌদি আরব এবং ইরানের ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ইরাকি ও ওমানি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত স্বাভাবিকীকরণ আলোচনার পঞ্চম দফায় বৈঠক করেছেন। মার্চ মাসে ইসরাইলের রাষ্ট্রপতি আইজ্যাক হারজোগ তুরস্ক সফর করেন। ১৪ বছরের মধ্যে সে দেশে একজন সিনিয়র ইসরাইলি কর্মকর্তার এটিই প্রথম সফর। একই মাসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দুবাইয়ের এক্সপো-২০২০-এ অংশ নেন এবং আমিরাতি নেতাদের সাথে দেখা করেন। আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স গত নভেম্বরে তুরস্কে যাওয়ার পর এরদোগান ফেব্রুয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেন। আর শীতকালে আমিরাত এবং ইরানের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রতিনিধিদল বিনিময় হয়।এসব কূটনৈতিক তৎপরতায় ওয়াশিংটনের কিছু ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ‘উত্তেজনা কমানো’ এবং ‘পুনর্বিন্যাস’ নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে। এটিকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে মার্কিন প্রত্যাহারের সমর্থকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবে দেখা হয়। তাদের যুক্তি হল, যদি আঞ্চলিক অভিনেতারা দায়িত্বশীল আচরণ করে এবং তাদের মতপার্থক্য মীমাংসা করে, তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য থেকে সরে দাঁড়াতে পারে এবং শুধু কোনো সঙ্কটের ক্ষেত্রে আবার ফিরে আসতে পারে। প্রশ্ন হল, বাস্তবে কি সেটিই ঘটবে? আমেরিকান ফরেন পলিসি সাময়িকীর কলামিস্ট স্টিভেন এ কুক মনে করেন, কূটনীতির এই সাম্প্রতিক উজ্জীবন মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি, ভালোবাসা এবং বোঝাপড়ার কিছু নতুন পরিবেশের সূচনা করেছে। অধিকন্তু, এই অঞ্চলে চলমান বিভিন্ন পুনর্গঠন ও বিন্যাসের মাধ্যমে এখানকার নেতারা গত দশকের মতো একই প্রতিযোগিতা এবং দ্বন্দ্বকে অনুসরণ করতে পারেন।
নিকট ইতিহাস
প্রায় ৫০ বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিসরের অবস্থান পাল্টে দেয়। স্নায়ুযুদ্ধের শূন্য-সমষ্টির কূটনীতিতে এটি তাদের বড় জয় ছিল। মিসরীয়রা এমন একটি প্রভাববলয়ের ক্লাবে যোগ দেয়, যেখানে সৌদি, জর্দানি, ইসরাইলি এবং ছোট পারস্য উপসাগরীয় রাজ্যগুলো ছিল। পরবর্তী দশকগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে আরো প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হওয়ার ফলে সেই দেশগুলো মার্কিনবান্ধব একটি রাষ্ট্রগোষ্ঠীর ভিত্তি গঠন করে, যা ওয়াশিংটনের জন্য এই অঞ্চলে তার লক্ষ্য অনুসরণ করা সহজ করে তোলে। এর মাধ্যমে এই অঞ্চল থেকে তেল, ইসরাইলি নিরাপত্তায় সাহায্য করা, সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা, গণবিধ্বংসী অস্ত্রের বিস্তার রোধ এবং সেই সাথে ইরাক আক্রমণের মতো অন্যান্য অতি উচ্চাভিলাষী আমেরিকান নীতি বাস্তবায়নের সিরিজ কাজ চলে।
টানাপড়েন
মধ্যপ্রাচ্যে, বিশেষ করে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের অংশীদারদের সাথে ওয়াশিংটনের সম্পর্কের বিশদ বিবরণ প্রকাশ হয়েছে। অবশ্যই ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের সাথে বিশ্বব্যাপী দাম বেড়ে যাওয়ায় সৌদি বা আমিরাত কেউই তেল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বাইডেন প্রশাসনের অনুরোধ গ্রহণ করেনি। আমিরাত সরকার জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার আক্রমণের নিন্দা প্রস্তাব থেকে বিরত থাকে। আর যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বকে একত্রিত করার চেষ্টা করেন, সৌদি আরব বা সংযুক্ত আরব আমিরাত কেউই ওপেক প্লাস-এ তাদের অংশীদার রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করেনি। মার্চের মাঝামাঝি আমিরাত দুবাইতে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে আতিথ্য দেয়। আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান বিশাল আকারে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তির সফর থেকে কী বার্তা পাঠাচ্ছেন তা কল্পনা করা কঠিন, তবে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের সম্পর্কের একটি ফাটল স্পষ্ট করেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct