রিনির ভাবনা
শঙ্কর সাহা
______________
সেদিন কলেজ থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে আসে রিনা। সামনেই তার ফাইনাল পরীক্ষা। কলেজ থেকে ফিরে এসেই পড়তে বসে সে । রিনা মেডিক্যাল কলেজের স্টুডেন্ট। বাবা-মার স্বপ্ন সে যেন বড় ডাক্তার হয়! আজ বাবা মার স্বপ্নকে সত্যি করতে স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যায় সে। সেদিন সকাল থেকেই ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়ছিল।একদিকে আষাঢ় মাস অন্যদিকে বৃষ্টিতে যেন চারিদিক জলে পরিপূর্ণ । সন্ধ্যে পড়তেই রাস্তাটি যেন বড় শুনশান হয়ে গেছে। জানালার পাশে বসে রিনা তার পড়ায় ব্যস্ত। হঠাৎ কিছু একটি শব্দ কানে আসে তাঁর। কিছু না ভেবে আবার পড়ায় মন দেয় রিনা। কিছুক্ষণ পরে শব্দটি জোরালো হতে থাকে। কিসের শব্দ জানতে উপর থেকে টর্চ জ্বালিয়ে চারিদিকটা ভালো করে দেখে নেয় সে। কিন্তু কিছুই নজরে পড়েনা তার। পাশের জানালাটি বন্ধ করে শুয়ে পড়ে সে।
রাত্রি একটু গভীর হতেই শব্দটি আরও জোরালো হতে থাকে। হঠাতই বিছানা থেকে উঠে পড়ে সে। সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসে বাইরে বেরোতেই স্তম্ভিত ফিরে আসে রিনার। একটি অসহায় বাচ্চা বৃষ্টির জলে ভিজে ঠান্ডায় কাতরাচ্ছে। রিনা ছুটে যায় তার কাছে। ‘ তোমার নাম কি? কোথায় থাকো?’ রিনার কথা শেষ না হতেই বাচ্চাটি মাটিতে পড়ে যায়। অসহায় অবস্থা বুঝে রিনা তাকে তুলে নিয়ে উপরে আসে। গায়ে চাদর জড়িয়ে দিয়ে কিছু একটি জিজ্ঞেস করতেই তার মুখ থেকেই বারে বারে বেরিয়ে আসে একটিই কথা, ‘ ভাত খাবো,একটু ভাত দাওনা?’ রান্না ঘর থেকে থালায় ভাত নিয়ে এসে তাকে খেতে দেয় রিনা। ভাত পেয়েই গোগ্রাসে খেতে থাকে বাচ্চাটি।অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে রিনা জিজ্ঞাসা করে,’খুব ক্ষিদে পেয়েছে তাইনা রে?’ মাথা নেড়ে বাচ্চাটি বলে, ‘তিন দিন কিছুই খায়নি দিদি’ ‘সে কি !’রিনা বিস্ময়াপন্ন। এত ছোটো বাচ্চা। আর না খেয়ে..?আজ রিনার নিজের বাবার কথাগুলো খুব মনে পড়ছে। বাবা বলতেন, এই পৃথিবীতে এখনো কত মানুষ দুবেলা দুমুঠো ভাত পায়না। বাচ্চাটির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রিনা..
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct