UDISE শব্দটির সাথে বিশেষভাবে পরিচিত, বিশেষত প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকারা। প্রাথমিক থেকে উচ্চ বিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাহ্যিক পরিকাঠামো, শিক্ষক শিক্ষিকা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য, ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য, পরীক্ষার ফল সংক্রান্ত তথ্য, UDISE এর মাধ্যমেই করা হয়ে থাকে। UDISE পদ্ধতিতে বিদ্যালয় গুলিকে তথ্য সংগ্রহের ইউনিট হিসেবে ধরা হয়ে থাকে, তথাপি জেলা শিক্ষা দপ্তর কে তথ্য সরবরাহের ইউনিট হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। এ নিয়ে লিখেছেন সজল মজুমদার।
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিকভাবে উৎকর্ষ সাধনে শিক্ষা যোগাযোগ প্রযুক্তির (ICT) গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। সার্বিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি এই সময়ের কভিড অতিমারির প্রেক্ষাপটে ভার্চুয়াল মাধ্যমে পাঠদান অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। তবে শুধু তাই নয়, পাঠদান ব্যতীত সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনায় শিক্ষা যোগাযোগ প্রযুক্তির অভিন্ন অঙ্গ হিসেবে শিক্ষা সমন্বিত জেলা তথ্য আদান প্রদান পদ্ধতি বা Unified District Information System for Education বা সংক্ষেপে UDISE এর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। সমস্ত বিদ্যালয় শিক্ষক শিক্ষিকা রা এই UDISE শব্দটির সাথে বিশেষভাবে পরিচিত, বিশেষত প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকারা। প্রাথমিক থেকে উচ্চ বিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাহ্যিক পরিকাঠামো, শিক্ষক শিক্ষিকা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য, ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য, পরীক্ষার ফল সংক্রান্ত তথ্য, UDISE এর মাধ্যমেই করা হয়ে থাকে। UDISE পদ্ধতিতে বিদ্যালয় গুলিকে তথ্য সংগ্রহের ইউনিট হিসেবে ধরা হয়ে থাকে, তথাপি জেলা শিক্ষা দপ্তর কে তথ্য সরবরাহের ইউনিট হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। উল্লেখ্য UDISE সংক্রান্ত অনলাইন তথ্য সংগ্রহের যে ফর্ম রয়েছে (DCF) সেটি 11 টি বিভিন্নভাগে বিভক্ত, এবং প্রতিটি বিভাগ বিদ্যালয় সংক্রান্ত নানা ধরনের প্রশ্ন বিভক্ত, যার মাধ্যমেই সমস্ত বিদ্যালয় সমূহের কর্মক্ষমতার মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। প্রসঙ্গত UDISE সফটওয়্যারের ইতিহাস সম্পর্কে যদি পর্যবেক্ষণ করা যায়, তাহলে এটির সৃষ্টির ইতিহাস ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা আরো সুস্পষ্ট হবে। 1994 সালের গোড়ার দিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমকে(DPEP) আরও নিখুঁত এবং শক্তিশালী করে তোলার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের সুপারিশে জাতীয় শিক্ষা পরিকল্পনা এবং পরিচালনা বিশ্ববিদ্যালয় বা National University of Educational Planning and Administration, বিদ্যালয় কেন্দ্রিক একটি কম্পিউটারাইজড তথ্য আদান প্রদান পদ্ধতি চালু করে যাকে DISE সফটওয়্যার বলা হয়। পরবর্তীকালে কাজের সুবিধার জন্য এই সফটওয়্যারটিকে উচ্চ বিদ্যালয় স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে যুক্ত করা হয় যা কিনা Secondary Education Management Information System (SEMIS) নামে পরিচিত। বর্তমানে তাই সেই অর্থেই এই সামগ্রিক ব্যবস্থাটিকে UDISE নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। UDISE এর একেবারে নতুন সংস্করণটিকে UDISE+ নামে বলা হয়। এবারে দেখে নেওয়া যাক UDISE এর কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যের দিকে:
প্রথমত: বর্তমানে UDISE সফটওয়ারটির মাধ্যমে দেশের 1.5 মিলিয়ন বিদ্যালয়, 9.6 মিলিয়নেরও বেশি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যাবতীয় তথ্য এবং 264 মিলিয়ন পড়ুয়াদের সামগ্রিক তথ্য নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে।
দ্বিতীয়: এই পদ্ধতির মাধ্যমে বিদ্যালয় অবস্থান সংক্রান্ত তথ্য, বিদ্যালয় পরিচালনা, গ্রাম্ ও শহরকেন্দ্রিক বিদ্যালয় সমূহের তালিকাভুক্তকরণ, পাঠদানের মাধ্যম, প্রতিবন্ধী ছাত্রদের চিহ্নিতকরণ, পরীক্ষার ফল সংক্রান্ত তথ্য, প্রতিবছর পড়ুয়াদের ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য প্রভৃতি সংগ্রহ ও সরবরাহ করা হয়ে থাকে। উল্লেখ্য প্রতিটি বিদ্যালয়কে UDISE UNIQUE CODE এর মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়।
তৃতীয়: এই পদ্ধতি তথা সফটওয়্যার এর মাধ্যমে যে কোন রাজ্যের অন্তর্গত যে কোনো জেলা তাদের নিজস্ব তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহের ক্ষেত্রটিকে বাড়াতে পারে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন বিদ্যালয় গুলিকে ক্লাস্টার বা ব্লক লেভেলে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। চতুর্থত, এই পদ্ধতির মাধ্যমে সমগ্র বিদ্যালয় সমূহের তালিকা, দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখনোও অনুপস্থিত প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তালিকা, এক শিক্ষক বিশিষ্ট বিদ্যালয়ের তালিকা, বিভিন্ন বিদ্যালয় এ ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত এর সংখ্যা বিশেষভাবে নিরীক্ষণ করা হয়ে থাকে।
পঞ্চমত: এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন বিদ্যালয়গুলোকে আলাদাভাবে বিভক্ত করে যুক্তিসংগত দিক থেকে বিচার করে অনলাইন তথ্য সংক্রান্ত ফর্ম বা DCF এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রসঙ্গত কাজের সুবিধার জন্য UDISE+ সফটওয়্যার টিকে বর্তমানে National Informatics centre এর সার্ভারের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। সুতরাং, UDISE সফটওয়্যার এর সর্বাধিক গ্রহণযোগ্যতা বিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থায় থাকলেও সামান্য কিছু সীমাবদ্ধতাও এটির রয়েছে, যেমন বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহের ক্ষেত্রে তথ্য নিরীক্ষণ এবং বিশ্লেষণের কিছু অভাব থেকে যায় তথাপি বিভিন্ন পর্যায়ে সমন্বয় ও তদারকির ক্ষেত্রেও এটির খামতি রয়েছে, কিন্তু এতদসত্ত্বেও UDISE সফটওয়ারটির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রচুর সুবিধা থাকার জন্য দেশের বিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থাকে বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা বার ক্ষেত্রে এটির বিকল্প নেই।
(শিক্ষক ও বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct