এম মেহেদী সানি,কলকাতা,আপনজন: আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাকসার্কাস এবং নিউটাউন ক্যাম্পাসে অনলাইনে পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলন করছে ছাত্রছাত্রীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফলাইনে পরীক্ষার নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে অনড়। আর সেই দাবিতে ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভের জেরে চরম ভোগান্তির শিকার হলেন অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা এই অভিযোগ উঠল। ফলে, আরও একবার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় অচলাবস্থার দিকে এগিযে চলছে বলে অনেকে আশং্কা করছেন। ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি প্রসঙ্গে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের অভিযোগ, মঙ্গলবার পাকসার্কাস ক্যাম্পাসে দুপুর থেকে রাত্রি পর্যন্ত প্রায় ১২ ঘন্টা মেইন গেটে তালা লাগিয়ে আটকে রাখে ছাত্র-ছাত্রীরা পাশাপাশি তাঁরা বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করে দেয়। ফলে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেক অধ্যাপকরা। বুধবার নিউটাউন ক্যাম্পাসে ভিসির উপস্থিতিতে পরীক্ষা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং চলাকালীন আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা গেটে তালা মেরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে বলেও অভিযোগ জানানো হয়েছে অধ্যাপকদের তরফ থেকে। বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় উপাচার্যসহ অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা আটকে রাখা হয়, এমনটাই অভিযোগ আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের। যদিও তাদের সেই দাবি মানতে নারাজ আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা। অবশ্য বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য অধ্যাপক-অধ্যাপিকা ও শিক্ষাকর্মীদের আন্দোলনের ফলে অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন ক্যাম্পাসের ভিতরে আটকে থাকা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য আবু তাহের কামরুদ্দিন, রেজিস্টারসহ সকল অধ্যাপক-অধ্যাপিকা।
অভিযোগ, দীর্ঘক্ষণ অবরোধের জেরে অনেকেরই শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। বুধবার গভীর রাতে বিশাল পুলিশ বাহিনী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেও ছাত্র-ছাত্রীদের বিক্ষোভের জেরে ক্যাম্পাসের মধ্যে অবরুদ্ধ থাকা কাউকেই বের করে আনতে পারেনি। ছাত্র-ছাত্রীদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে তারা ক্যাম্পাস ছেড়ে বেরিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার দুপুর বারোটার দিকে বিক্ষোভের জেরে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভিতরে আটকে থাকা উপাচার্যসহ অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের বের করে আনতে কলেজের অন্যান্য অধ্যাপক-অধ্যাপিকা ও শিক্ষাকর্মীরা আন্দোলনে নামেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির নিউটাউন ক্যাম্পাসে অধ্যাপক-অধ্যাপিকা ও ছাত্র-ছাত্রীদের পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভের জেরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। তবে আন্দোলনরত অধ্যাপকরা ক্যাম্পাসের ভিতরে আটকে থাকা উপাচার্যসহ সকল অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের বাইরে বের করে আনতে সমর্থ হয়। অন্যদিকে ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন করছিলাম, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে হয়তো বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ ছিল সেজন্য আমরা দায়ী না। পাশাপাশি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে অনলাইনে পরীক্ষা না হলে তাঁরা পরীক্ষা বয়কট করার সিদ্ধান্তে অনড়। তাদের দাবি যেহেতু তারা ছয় মাসের সিলেবাস শেষ করার জন্য মাত্র দুই মাস সময় পেয়েছে ও রাজ্যের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে তাই তাদের পরীক্ষাও অনলাইনে নিতে হবে। তবে, সিলেবাস সময়ে শেষ না হওয়ায় প্রস্তুতি নিতে না পারায় পরীক্ষা পিছনোর দাবি না তুললে অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে পড়ুয়ারা অনড়।
আলিয়ার মাদ্রাসা ছাত্র ইউনিয়নের সম্পাদক মাসুদুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহৃদয়বান হওয়ার অনুরোধ করছি। এই সেমিস্টারটি অনলাইন মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া হোক এবং অতি দ্রুত যে সমস্ত বিভাগে শিক্ষক নেই সেই সমস্ত বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ করা হোক। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন থিওলজি বিভাগে এগারোশো ছাত্র-ছাত্রীর জন্য মাত্র পাঁচজন অধ্যাপক, থিওলজি বিভাগে দীর্ঘ দু-মাস ক্লাস হয়নি বলে মাসুদুর রহমান দাবি করেন। তবে এবিষয়ে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ও ভূগোলের অধ্যাপক জুলফিকার আলী বলেন, আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতি ও ছাত্র-ছাত্রী যাতে তাদের লক্ষ্যের দিকে সফলভাবে এগিয়ে যান এটাই চাই। উচ্চ শিক্ষাদপ্তর যেহেতু পরীক্ষার ব্যাপারটা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরেই ছেড়ে দিয়েছে তাই আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্র-ছাত্রীদের কথা মাথায় রেখেই পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। রাজ্যের বেশকয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার কথা বললেও অন্যান্য বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় অফলাইনে পরীক্ষা নেওয়ারও বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। আর তাই সবদিক বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্র-ছাত্রীদের প্রস্তুতি ও অন্যান্য বিভিন্ন দিক মাথায় রেখেই পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনের ব্যাপারে তিনি বলেন, যারা আন্দোলন করছে তাদের বুঝতে কোথাও ভুল হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত অধ্যাপক-অধ্যাপিকা ছাত্র-ছাত্রীদের উন্নতি ও ভালোর জন্যই আছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অবশ্যই আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে। তবে তাদের আন্দোলনের ফলে তাদের অভিভাবকসম অধ্যাপক-অধ্যাপিকা ও শিক্ষাকর্মীদের মানসিক অবসাদ ও হেনস্থা্র শিকার হওয়া মোটেও কাম্য নয়।
ছবি ও তথ্য সহায়তা: রাকিবুল আলম
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct