স্বস্তির কথা, সুপ্রিম কোর্ট দেশদ্রোহ আইনের প্রয়োগ স্থগিত রেখেছেন। কেন্দ্রীয় সরকার আইনটি পুনর্বিবেচনা ও পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের ওই নির্দেশ। পুনর্বিচারে রাজি হলেও সরকার অবশ্য আইন স্থগিত রাখার পক্ষে ছিল না। অবশ্য বিবেচনার অর্থ এই নয় যে সরকার শেষমেশ আইনটি খারিজের পক্ষে মত দেবে। সে যা-ই হোক, সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশ সরকারের কাছে এক বড় ধাক্কা। কেন্দ্রীয় সরকার দেশদ্রোহ আইন পর্যালোচনায় রাজি হল। এ নিয়ে লিখেছেন সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ প্রথম কিস্তি।
স্বস্তির কথা, সুপ্রিম কোর্ট দেশদ্রোহ আইনের প্রয়োগ স্থগিত রেখেছেন। কেন্দ্রীয় সরকার আইনটি পুনর্বিবেচনা ও পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের ওই নির্দেশ। পুনর্বিচারে রাজি হলেও সরকার অবশ্য আইন স্থগিত রাখার পক্ষে ছিল না। অবশ্য বিবেচনার অর্থ এই নয় যে সরকার শেষমেশ আইনটি খারিজের পক্ষে মত দেবে। সে যা-ই হোক, সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশ সরকারের কাছে এক বড় ধাক্কা। রাতারাতি ১৮০ ডিগ্রি অবস্থান বদলে কেন্দ্রীয় সরকার কেন দেশদ্রোহ আইন পর্যালোচনায় রাজি হল, সে প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর কারও জানা নেই। হলফনামায় বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নাকি ঔপনিবেশিক সব বোঝা ঝেড়ে ফেলতে চান। তাই দেড় শ বছরের পুরোনো এই আইন পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত। কিন্তু যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সলিসিটার জেনারেল এক শনিবার আইন চালু রাখার পক্ষে জোরালো যুক্তিজাল বুনলেন, ৪৮ ঘণ্টা কাটতে না কাটতে মঙ্গলবার সেই প্রধানমন্ত্রীর নববোধোদয় ঘটল কেন? আবার ঘটলই যখন, তখন আইন প্রয়োগ স্থগিত রাখতে তীব্র আপত্তিইবা কেন? এই হেঁয়ালি এখনো অনুদ্ঘাটিত।
জনপ্রিয় অনুমান, সরকারের নিমরাজি হওয়ার পেছনে পশ্চিমা দুনিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি কিছুটা মলিন হওয়া হয়তো একটা সম্ভাব্য কারণ। দেশীয় রাজনীতিতে বিরোধীকুলের অগোছালো ও ছন্নছাড়া হালের দরুন শাসক দলের পায়ের তলার জমি দিন দিন শক্ত হলেও আন্তর্জাতিক স্তরে ইদানীং প্রধানমন্ত্রী মোদির ভাবমূর্তি ক্ষীয়মাণ জ্যোৎস্নার মতো ক্রমে ম্লান হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ) এই নিয়ে পরপর তিন বছর ভারতকে ‘উদ্বেগজনক দেশ’ বলে অভিহিত করেছে। ভারতকে তারা স্থান দিয়েছে বিশ্বের ১৪টি ‘অকেজো’ রাষ্ট্রের তালিকায়, যাদের মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, মিয়ানমার, পাকিস্তান, চীন, উত্তর কোরিয়া, সৌদি আরব ও রাশিয়ার মতো ‘কর্তৃত্ববাদী’ও ‘অসহিষ্ণু’ দেশ। এই রিপোর্ট এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় যেসব স্বাধীন সংগঠন কাজ করে চলেছে, যেমন ‘ফ্রিডম হাউস’ বা ‘ভি-ডেম ইনস্টিটিউট’, ধারাবাহিকভাবে তারা মোদির ভারতের সমালোচনা করে চলেছে। জাতিসংঘও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পশ্চিমা দুনিয়ার চোখে যা ‘গণতন্ত্রী স্বৈরতান্ত্রিকতা’, তা থেকে মুক্ত হওয়ার তাগিদ এই ভোলবদলের অদৃশ্য কারণ হতে পারে বলে অনেকের ধারণা। কিন্তু তা সত্ত্বেও আইন স্থগিত রাখার নিদান সরকার মোটেই ভালো মনে নেয়নি। নিলে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু বিচার বিভাগকে ‘লক্ষ্মণরেখা’ অতিক্রম না করার পরামর্শ দিতেন না। সহজ বাংলায় এটা হুমকিই। দেশদ্রোহ আইন শেষ পর্যন্ত খারিজ হবে কি না, সে বিষয়ে শেষ কথা বলার সময় এখনো আসেনি। ১৯৬২ সালে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের কনস্টিটিউশন বেঞ্চ রক্ষাকবচসহ আইনটি জারি রাখার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। সেই আইন খারিজ করতে গেলে আরও বড় বেঞ্চকে তা বিবেচনা করতে হবে। মামলাকারীদের দাবিও তা-ই। তা মেনে নিলে সাত বিচারপতির বেঞ্চে মামলাটি পাঠাতে হবে। যদি ধরেও নেওয়া যায়, একদিন না একদিন দেশদ্রোহ আইনের পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটবে, তা হলেও রাষ্ট্র যে নিঃস্ব হয়ে যাবে, তেমন মনে করার বিন্দুমাত্র কারণ নেই। কেননা এমন নির্মম আরও আইন এ দেশে রয়েছে।
(সৌজন্যে: প্র. আ.)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct