টানা কয়েক মাস ধরে যুদ্ধ বিদ্ধস্ত কিয়েভে চিরন্তন মানব প্রেমের এক করুন ছবি দেখে চোখে জল ধরে রাখতে পারছি না। বিশ্বের মহাশক্তিধর রাশিয়ার আগ্ৰাসী হামলায় ক্ষতবিক্ষত কিয়েভ। সেখানকার বাতাসে শুধু কালো ধোঁয়া। মুহুর্মুহু বোমারু বিমান, মর্টার, শেল, গোলাগুলির শব্দ, সেই সঙ্গে সতর্কতা জারি করতে সাইরেন বেজে চলেছে। এমন ভীত, সন্ত্রস্ত,রক্তাক্ত রণাঙ্গনে এক রাশিয়ান সৈনিক কাঁধে বন্দুক নিয়ে এক কিয়েভ বালিকার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখা যায়। এ নিয়ে লিখেছেন সুবল সরদার।
যুদ্ধ মানে শুধু ভয়ংকরতা ? প্রেমহীন? টানা কয়েক মাস ধরে যুদ্ধ বিদ্ধস্ত কিয়েভে চিরন্তন মানব প্রেমের এক করুন ছবি দেখে চোখে জল ধরে রাখতে পারছি না। বিশ্বের মহাশক্তিধর রাশিয়ার আগ্ৰাসী হামলায় ক্ষতবিক্ষত কিয়েভ। সেখানকার বাতাসে শুধু কালো ধোঁয়া। মুহুর্মুহু বোমারু বিমান ,মর্টার ,শেল ,গোলাগুলির শব্দ ,সেই সঙ্গে সতর্কতা জারি করতে মুহুর্মুহু সাইরেন বেজে চলেছে। এমন ভীত ,সন্ত্রস্ত,রক্তাক্ত রণাঙ্গনে এক রাশিয়ান সৈনিক কাঁধে বন্দুক নিয়ে এক কিয়েভ বালিকার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখা যায়। তার বন্দুকের নল মাটির দিকে নামানো আছে। রবি ঠাকুরের ‘কাবুলিওয়ালা’ র মতো সেও মিনির মতো তার ছোটো মেয়েকে দেখতে পায়। বাড়ির কথা মনে পড়ে। তার ছোটো মেয়ের মুখ হঠাৎ চোখে ভাসে। মনে হয় সৈনিক কঠোর পোশাক এখনই সে খুলে ফেলে। তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে তার খুব ইচ্ছা করে। তার সরল ,মিষ্টি মুখে অকৃত্রিম ভালোবাসার ছোঁয়া স্নেহের উদ্রেক করে। ভালোবাসার কী আকুতি! কী নীরব আবেদ! তার সামনে দাঁড়াতে সেই মেয়েটা ইউক্রেনীয় ভাষায় ক্রুদ্ধ স্বরে বলতে চাইলো -- কেন তারা তাদের দেশ দখল করতে এসেছে ? কেন তারা তাদের জনগণকে মেরে ফেলছে ?
সে রেগে গিয়ে বলতে চাইলো - এখনই তারা তাদের দেশ ছেড়ে চলে যাক। ওই সৈনিক রুশ ভাষায় স্নেহের স্বরে বললো -ঠিক আছে ,সে চলে যাচ্ছে। সৈনিকেরও প্রেম আছে! সে চলে যাচ্ছে ,মেয়েটা ক্রোধে পিছনে পিছনে গিয়ে নির্দ্ধিতায় ,নির্ভয়ে তার পিঠে সজোরে এক ঘা কিল মারে ঠিক যেন এক ছোটো মেয়ে তার প্রিয় অবাধ্য বাবাকে রেগে গিয়ে মারছে। ফুলের ঘায়ে কে মূর্চ্ছা যায়! ওই সৈনিক চলে যায় কিন্তু রেখে যায় চিরন্তন মানব প্রেমের ছবি , শাশ্বত প্রেমের অমর গাঁথা। সারা বিশ্বের চোখ ছিল রক্তাক্ত যুদ্ধ ক্ষেত্রের ওই অসম বয়সী দুই বন্ধুর উপর। কে শক্র! কে মিত্র! ঠিক যেন রবি ঠাকুরের ‘কাবুলিওয়ালা’কে দেখছি যেখানে রহমত তার ছোটো মেয়ে রাবেয়াকে দেখতে পায় মিনির ভিতরে। ‘কাবুলিওয়ালা’ র মতো সে মিনির মতো তার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে ,সে তার মুখ দেখতে চায় না। কে বোঝে সৈনিকের ব্যাথা! ওই রাশিয়ান সৈনিক হয়তো ‘কাবুলিওয়ালা’র মতো তার মেয়ে রাবেয়ার খোঁজ পেয়েছিল ওই রক্তাক্ত কিয়েভে । ভালোবাসা কি কাল, স্থান বিচার করে! কে বলে যুদ্ধ আর প্রেম কোনো নিয়ম মানে! কে বলে ‘ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য ‘! ওই মেয়েকে দেখে যেমন ওই সৈনিকের হৃদয় বিগলিত হয় তেমনি ওই অসম দুই বন্ধুর ছবি দেখে আমাদেরও হৃদয় বিগলিত হয় ; এতো যুদ্ধ, এতো রক্ত ,এতো মনুষ্যত্বের সংকটের মাঝে ও ! রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান পুতিন এমন প্রেমের দৃশ্য দেখলে নিশ্চয় জ্বলে মরতেন। প্রেমহীন হৃদয় কখনো প্রেম বোঝে ? তিনি হয়তো ইউক্রেনকে জয় করতে পারেন কিন্তু তিনি কখনো ভালোবাসাকে জয় করতে পারবেন না। তিনি কখনোই ওই ছোটো মেয়ের হৃদয় জয় করতে পারেন না। প্রেম ভালোবাসা দিয়ে যা সহজে জয় করা যায় তার জন্যে এতো যুদ্ধ! ভালোবাসা মানে সৃষ্টি আর যুদ্ধ মানে ধ্বংসের কারণ এটা যদি পুতিন বুঝতে পারত , আজ ইউক্রেন মাতৃভূমির জন্যে এতো লড়াই করত! ভালোবাসার মিলন আছে কিন্তু যুদ্ধের কোনো মিলন নেই, শুধু বিয়োগ। আছে শুধু স্বজন হারানোর বুক ফাটা কান্না। তবু দেশে দেশে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে সৈন্য কেবল সৈন্য মারে, জনগণ ছাড় পায় ? জানি না ওই যুদ্ধ কবে শেষ হবে ? কবে ফির যাবে দেশে ওই রাশিয়ান সৈন্য ? ফিরে পাবে তার ছোটো প্রিয় মেয়েকে যে বাবা বলে ছুটে আসবে তার কোলে। কিয়েভের ওই ছোটো মেয়ে কি কখনো ভুলে যাবে ওই যুদ্ধের কথা ? আবার সে খেলে বেড়াতে পারবে তার বন্ধুদের সাথে ? আবার স্কুলে যাবে। দ্রুত শেষ হোক ওই মারণ যুদ্ধ। শান্ত হোক পৃথিবী।
(লেখক বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct