রাষ্ট্র বিজ্ঞান কথাটির প্রথম প্রয়োগ ঘটে ১৭০১ খ্রিস্টাব্দে। রাষ্ট্র বিজ্ঞান কে ‘আবহবিদ্যা’র সাথে তুলনা করা যেতে পারে। এই রাষ্ট্র বিজ্ঞান সম্পর্কে যাঁদের একটু ধারণা আছে তাঁরা সকলেই নিশ্চয়ই একথা মানবেন যে,রাষ্ট্র প্রতিটা নাগরিকের কাছে পিতৃসম। রাষ্ট্রের মস্তিষ্ক হল সরকার। তাই কোনো রাষ্ট্র নাগরিকের প্রতি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে সবার প্রথমে সেই ব্যর্থতার দায়ভার সরকারের উপরে এসে যে বর্তাবে সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ থাকে না। নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্রের কর্তব্য নিয়ে লিখেছেন সনাতন পাল। আজ প্রথম কিস্তি।
রাষ্ট্র বিজ্ঞান কথাটির প্রথম প্রয়োগ ঘটে ১৭০১ খ্রিস্টাব্দে। রাষ্ট্র বিজ্ঞান কে ‘আবহবিদ্যা’র সাথে তুলনা করা যেতে পারে। এই রাষ্ট্র বিজ্ঞান সম্পর্কে যাঁদের একটু ধারণা আছে তাঁরা সকলেই নিশ্চয়ই একথা মানবেন যে,রাষ্ট্র প্রতিটা নাগরিকের কাছে পিতৃসম। রাষ্ট্রের মস্তিষ্ক হলো সরকার। তাই কোনো রাষ্ট্র নাগরিকের প্রতি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে সবার প্রথমে সেই ব্যর্থতার দায়ভার সরকারের উপরে এসে যে বর্তাবে সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ থাকে না। শাসক রাষ্ট্র কে যে ভাবে ব্যবহার করেন সেই বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই মার্কস মনে করতেন যে- “রাষ্ট্র শ্রেণী শাসনের যন্ত্র মাত্র “ । ‘পাশবিক বলই রাষ্ট্রের ভিত্তি ‘ একথা বলপ্রয়োগ মতবাদে বলা রয়েছে। এই কথা জানার পরেই বেশ খানিকটা পরিষ্কার হয় যে মার্কস কেন রাষ্ট্র কে শ্রেণী শাসনের যন্ত্র বলেছেন। রাষ্ট্র বিজ্ঞানের জনক হলেন গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল এবং আধুনিক রাষ্ট্র বিজ্ঞানের জনক হলেন মেকিয়াভেলি। ইনারা রাষ্ট্র কি এবং রাষ্ট্রের একটা পরিচিতি মানুষের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। পাশাপাশি যুক্তি দিয়ে নানা ভাবে রাষ্ট্রের মত একটা বিমূর্ত বিষয়কে মূর্ত করে তোলার চেষ্টা করেছেন। অপর দিকে রাষ্ট্র বিজ্ঞান কে অ্যারিস্টটল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান বলে অভিহিত করেছেন। রাষ্ট্র কি এবং কাকে বলে এবিষয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন রকম দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করেছেন। এই তত্ত্বগত বিতর্ক চলতেই থাকবে। কিন্তু সেই দিকটা বাদ দিয়ে যেহেতু আমরা সকলে গণতন্ত্রের পথকে মেনে নিয়েছি এবং বর্তমানে সেই পথে চলার প্রবণতাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে । তাছাড়া আমরা যেহেতু ভারতীয় সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সেই কারণে সংসদীয় রীতিনীতিতে নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব কর্তব্য কি হতে পারে সেই বিষয়ে মধ্যে এই আলোচনাকে সীমাবদ্ধ রাখলেই বর্তমান পরিস্থিতি এবং সময়োপযোগী আলোচনা করা একটু সহজ হবে । আমাদের দেশের সংবিধান অনুযায়ী নাগরিকের কিছু দায়িত্ব কিছু কর্তব্য যেমন রাষ্ট্রের প্রতি রয়েছে, তেমনি নাগরিকের প্রতিও রাষ্ট্রের কিছু দায়িত্ব এবং কর্তব্য রয়েছে । সেগুলো না মানাটা আইনের চোখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অর্থাৎ রাষ্ট্রের নির্দেশ মেনে চলাটাই নাগরিকের দায়িত্ব । রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, অখন্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখার জন্য প্রত্যেক নাগরিককে সর্বদা সজাগ এবং চরম ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন এবং সংবিধান মেনে চলা এবং আইনের প্রতি সম্মান দেখানো নাগরিকদের অন্যতম কর্তব্য। একথা গুলো আমরা কমবেশি প্রায় সকলেই জানি। এবিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই কিন্তু নাগরিক প্রতি রাষ্ট্রের কর্তব্য পালন করা নিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন রয়েছে । নাগরিক অধিকার, রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতি ও মৌলিক কর্তব্য ভারতীয় সংবিধানের তিনটি অংশ। এই তিনটি অংশে নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্রের মৌলিক দায়দায়িত্ব এবং রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকদের কর্তব্য-গুলির বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এই অংশ গুলি সরকারি নীতি নির্ধারণ ও নাগরিকদের আচার- আচরণের ক্ষেত্রে একটি সাংবিধানিক অধিকার পত্রের ভূমিকা পালন করে। এই অংশ তিনটি ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৯ সালের মধ্যবর্তী সময়ে গণপরিষদে রচিত মূল সংবিধানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি অংশ বলে বিবেচিত হয়। তবে যে কথাটি বলা দরকার সেটা হলো বার বার করে নাগরিকের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে বলা হয়। কেউ সে কর্রত্য পালনে ব্যর্থ হলে তার সাজাও হয়। কিন্তু সরকার যদি নাগরিকের উপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালন না করে তাহলে সরকারের কি সাজা হয় ? অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা সেটা যাতে দেশের সমস্ত নাগরিক সঠিক ভাবে পান, এটা দেখা কি সরকারের কাজ নয়? এই কাজ কি সরকার ঠিক ঠাক করে ? যদি করে তাহলে এখনও ভারতবর্ষে এতো ভিখারি শনি এবং রবিবার হলেই’ হরে কৃষ্ণ’ বলে বাড়ীর সামনে এসে হাত পাতেন কেন? সরকার এমনই দায়িত্ব পালন করে যে, এখনও রাতে দেশের কোটি কোটি মানুষ শুধু জল খেয়ে ঘুমাতে যান। বহু শিশু রাতে ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদতে কাঁদতে মায়ের আঁচল চুষতে চুষতে পেটে খিদে নিয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। অভুক্ত মানুষ এবং এই শিশুরা যাতে একটু পেট পুরে খেতে পারেন তেমন কোনো পরিকল্পনা করাকে সরকারের কাজ নয়? যদি কাজ হয় তাহলে এবিষয়ে সরকারের কি পরিকল্পনা রয়েছে? দেশে বেকার সমস্যা হুহু করে বেড়ে চলেছে। শুধু করোনা-তেই প্রায় কুড়ি কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন।
(লেখক শিক্ষক এবং বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct