ঐক্যবদ্ধতা ও সচেতনতা বৃদ্ধিই হোক মূল মন্ত্র
বিশ্ব পরিবার দিবস
মোসাররাফ হোসেন (শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক)
__________________________________
১৫ই মে বিশ্ব পরিবার দিবস৷ তামাম পৃথিবী জুড়ে পরিবার সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে প্রতিবছর বিশ্ব পরিবার দিবস পালন করা হয়৷সমাজের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে পরিবার হলো সর্ব নিম্ন স্তরের ক্ষদ্রতম একক৷ তবে পরিবার সমাজের ক্ষুদ্রতম একক হলেও সেখানে থেকেই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং ভবিষ্যৎ সমাজের নাগরিক তৈরি হয় ৷সমাজ গঠনে ও মানব সভ্যতার অস্তিত্ব রক্ষা এবং বিকাশে পরিবারের ভূমিকা অতুলনীয় ৷পরিবার গঠনের উদ্দেশ্য ও সঠিক কাঠামো বজায় রাখতে মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে ৷কিন্তু বিশ্বজুড়ে আজ বর্তমান সময়ে পরিবারগুলি নানা কারণে নানাভাবে বিপন্ন ; যা বর্তমান প্রজন্মকে আতঙ্কিত করে তোলে ৷ প্রতিবছর মে মাসের ১৫ তারিখ বিশ্ব পরিবার দিবস পালন করা হয় ; ১৯৯৩ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, মানব সম্প্রদায়ের সাথে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিবারগুলির একটি ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে ৷তাই বিশ্ব পরিবার দিবসের মধ্যে দিয়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে একে অপরের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যা বিষয়ে সম্যক ধারণা তৈরি করা হয় ৷ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি৷ তাই এই বিষয়কে সামনে রেখে ১৯৯৬ সাল থেকে প্রতিবছর ১৫ ই মে বিশ্ব পরিবার দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে ৷
একাধিক মানুষের সমষ্টি ও সদস্যদের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক,পারস্পরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য, পারিবারিক প্রধানের অধীনতা, পারিবারিক মূল্যবোধ ইত্যাদির সমন্বয়ে একটি সুষ্ঠু পরিবার গঠিত হয় ৷পরিবার সমাজের ক্ষুদ্রতম একক হলেও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে পৃথিবীতে সুষ্ঠুভাবে বসবাস করার জন্য পরিবার গঠনের ভূমিকা অপরিহার্য ৷পৃথিবীতে সব সমাজেই অস্তিত্ব রক্ষায় পরিবার গঠনের প্রয়োজনীয়তা ও সার্বিক প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায় ৷তাই পরিবারকে হতে হয় সর্বজনীন । সামাজিক,পারিবারিক, অর্থনৈতিক আচরণের মধ্যেই নিহিত থাকে ভবিষ্যতের নাগরিক৷তবে সামাজিক বিবর্তনের ফলে পারিবারিক গঠনগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় ! যৌথ পরিবারের চাইতে বর্তমানে একক ও ক্ষুদ্র পরিবার বেশি দেখা যাচ্ছে ! বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন সংস্কৃতির পরিবারের ভূমিকা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পরিলক্ষিত হয়। এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বৈচিত্র্যপূর্ণ নানামুখী ধারা যে কারণে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের সঙ্গে একটি পরিবারের গঠন ও অন্যান্য অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে এবং হচ্ছে।
পরিবারের প্রভাব সবচাইতে বেশি পড়ে একটি শিশুর উপর ; যে আসলে ভবিষ্যতের নাগরিক ৷একটি শিশু পরিবার থেকেই নৈতিক শিক্ষা সহ সব ধরণের পেয়ে থাকে৷যেমন মিথ্যা কথা না বলা, সর্বদা সত্য পথে চলা, গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি করা,গুরুজনদের কথা মেনে চলা ইত্যাদি ৷একটি পরিবার থেকেই একটি শিশু স্বপ্ন দেখতে শেখে এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য পথ ও পরিশ্রমের , সেই পরিবার থেকেই পেয়ে থাকে ৷ তবে একটি পরিবার অবস্থান যে সমাজ গোষ্ঠীতে, সেই পরিবারে শিশু সেই সামাজিক প্রভাবে প্রভাবিত হবে এটাই স্বাভাবিক ৷ পরিবার গঠনে পরিবেশ ও অর্থনীতির সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত ৷ কারণ মানুষ সমাজবদ্ধ জীব৷ অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর উপর নির্ভর করে যে পরিবেশে মানুষ বাস করে এবং সেখানকার অর্থনৈতিক পরিকাঠামো যেমন হয়,ঠিক তেমনি সেই পরিবেশের একটি পরিবার গঠনে ৷ব্যক্তি মানুষের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো ও রোজগার একটি পরিবারে ব্যয় বহন, শান্তি-শৃঙ্খলা,সমৃদ্ধি এবং আর্থিক-অনার্থিক অগ্রগতির দীর্ঘস্থায়িত্ব পারিবারিক অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর উপর নির্ভর করে ৷
পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার পাশাপাশি ভোগ বিলাস সামগ্রীর বিপণন প্রক্রিয়ার প্রভাবে পরিবারের আভ্যন্তরীণ পরিবেশটা বদলাতে থাকে ! শিল্পায়নের ফলশ্রুতি হিসেবে যৌথ পরিবারে যথেষ্ট ভাঙ্গন ধরেছে ! অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আজকের এই যৌথ পরিবারের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর ফলশ্রুতি হিসেবে পরিবারগুলি নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে ! ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নাগরিক তৈরির ক্ষেত্রেও অশান্তিতে ভূগছেন পরিবারের সদস্যগণ !যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে নিরাপত্তাহীনতা, শান্তি শৃঙ্খলার অভাব, অর্থনৈতিক ভাঙ্গন ইত্যাদি নানান ধরণের সমস্যা পারিবারিক জীবনকে প্রতিনিয়ত ভারাক্রান্ত করে তুলেছে ! পরিবার নামক সমাজের এই ক্ষুদ্র একককে অধিক কার্যকরী ভূমিকায় উন্নীত করতে হলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে একান্তভাবেই সচেতনতা ও ঐক্যবদ্ধতা দরকার ৷ পরিবারের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সমৃদ্ধ ঘটানোর ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের বেশি বেশি সচেতন হতে হবে ৷ পরিবারের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও সমাজ গঠনে কার্যকরী ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা লাভের মধ্যে দিয়েই বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের সার্থকতা লুকিয়ে আছে ৷ কেবল ১৫ মে -ই নয় ; প্রতিটি দিনই হোক পরিবার দিবস ৷ পরিবারের সকল সদস্যদের মধ্যে একাত্মতাবোধ গড়ে উঠুক ৷সুষ্ঠু পরিবার গঠনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠুক বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ৷
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct