আপনজন ডেস্ক: ভারতে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে এখন কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। সুপ্রিম কোর্ট এই আইনের পর্যালোচনা শেষ না করা পর্যন্ত এই নির্দেশ বহাল থাকবে। বুধবার এক যুগান্তকারী আদেশে এ কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট বুধবার জানিয়েছে, তারা এই আইন খতিয়ে দেখবে। যতদিন পর্যন্ত তারা আইনের পর্যালোচনা করবে, ততদিন নতুন করে কাউকে এই আইন প্রয়োগ করে গ্রেফতার করা যাবে না। যাদের ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা জামিনের আবেদন করতে পারবেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও এখন স্থগিত থাকবে। নতুন করে এই আইনে কাউকে গ্রেফতার করলে তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারবেন।
এব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এনভি রামানা বলেছেন, পরবর্তী পুনরায় পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আইনের এই বিধানটি ব্যবহার করা যাবে না। আশা করি যে কেন্দ্র ও রাজ্য ১২৪ এ (রাষ্ট্রদ্রোহ আইন) এর অধীনে কোনও এফআইআর দায়ের করা থেকে বিরত থাকবে। উল্লেখ্য, দেশে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন প্রথম চালু হয় ব্রিটিশ আমলে ১৮৭০ সালে। মূলত শূলত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিরুদ্ধে এই আইন প্রয়োগ করারর উদ্দেশ্যে এই আইনটি চালু হয়। তারপর থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার ৭৫ বছর পরেও ওই প্রবল বিতর্কিত আইন চালু আছে। সুপ্রিম কোর্টে আবেদনকারীদের পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী কপিল সিবাল। তিনি শুনানির সময় বলেছেন, সারা দেশে ৮০০টি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়েছে। তার জেরে ১৩ হাজার মানুষকে জেলে আছেন।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য উদ্ধৃত করে ইকনমিক টাইমসের রিপোর্ট জানাচ্ছে, ২০১৬-র তুলনায় ২০১৯ সালে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলার সংখ্যা ১৬০ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৯ সালে ৯৬ জনকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তার মধ্যে মাত্র দুইজনের শাস্তি হয়েছে। গ্রেফতার করা ৯৬ জনের মধ্যে ৫৫ জনের বয়স ১৮ থেকে ৩০-এর মধ্যে। ওই বছর কর্ণাটকে সবচেয়ে বেশি মানুষকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। তালিকায় এর পরেই আছে আসাম, জম্মু ও কাশ্মীর এবং উত্তরপ্রদেশ।
মোদী সরকার প্রথমে সুপ্রিম কোর্টে জানায়, সরকার যতক্ষণ এই আইন খতিয়ে না দেখছে, ততক্ষণ সুপ্রিম কোর্ট যেন পর্যালোচনা না করে। পরে তারা এই অবস্থান থেকে সরে আসে। সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা সর্বোচ্চ আদালতকে জানান, কেন্দ্রীয় সরকার এই আইনে কিছু বদল করতে চায়। বদলটা হলো, পুলিশ সুপার বা তার সমান পদমর্যাদার কোনো অফিসার যদি মনে করেন, রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা যায়, তাহলেই তা করা যাবে। আর ওই অফিসারকে লিখিতভাবে জানাতে হবে, কেন রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের আবেদন ছিল, রাষ্ট্রদ্রোহের যে মামলা চলছে, সেগুলিকে থামিয়ে দেয়া উচিত হবে না। কারণ, এর সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ, টাকা নয়ছয় ও অর্থ বিদেশে পাঠানোর ঘটনা জড়িত থাকতে পারে। এগুলি নিয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতই সিদ্ধান্ত নিক। বিচারবিভাগকে ভরসা করা উচিত।
কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। তিন বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, যতদিন তারা বিষয়টি বিবেচনা করবেন, আইন পর্যালোচনা করবেন, ততদিন এই আইন প্রয়োগ করে কোনো নতুন করে মামলা হবে না। বিচারপতিরা জানিয়েছেন, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উপর তাদের ভরসা আছে যে, তারা নতুন করে এই আইন প্রয়োগ করবেন না। যদি কারো বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের কারণে এফআইআর হয়, তিনি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাতে পারবেন। আর এখন দেশদ্রোহের অভিযোগে করা সব মামলার বিচার বন্ধ থাকবে। সুপ্রিম কোর্ট যতদিন কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়, ততদি্ন পর্যন্ত মামলাগুলি নিয়ে আর এগোনো যাবে না। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা জামিনের আবেদন জানাতে পারবেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct