উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বিড়া এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম বালিশাতে গড়ে উঠেছে এম আর হাসপাতাল। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে চিকিৎসা, উন্নত পরিষেবা, এবং ব্যতিক্রমী স্বাস্থ্য পরিষেবা কার্ড “ভরসা”-র সূচনার মধ্যে দিয়ে সাড়া ফেলেছে বিভিন্ন এলাকায়। রাজ্যে যখন বহুলালোচিত স্বাস্থ্য সাথী কার্ড চালু রয়েছে ঠিক তখন “এম আর চ্যারিটেবল ট্রাস্ট” পরিচালিত এম আর হাসপাতালে রাজ্যে এই প্রথম চালু হলো একাধিক পরিষেবা যুক্ত জনকল্যাণমুখী ব্যতিক্রমী স্বাস্থ্য পরিষেবা কার্ড “ভরসা”। ব্যতিক্রমী স্বাস্থ্য পরিষেবা কার্ড “ভরসা”-র রূপকার তথা এম আর হাসপাতালের ডাইরেক্টর ড. জাহিদুল সরকার আপনজন প্রতিনিধিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন “ভরসা” কার্ডের খুঁটিনাটি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন এম মেহেদী সানি।
আপনজন: রাজ্যে যখন বহুলালোচিত স্বাস্থ্যসাস্থী কার্ড চালু রয়েছে, সেক্ষেত্রে ‘ভরসা’ কার্ডের কথা কেন ভাবলেন? এতে অতিরিক্ত কী সুবিধা আছে?
ড. জাহিদুল সরকার: আমরা যখন হাসপাতাল প্রথম শুরু করি, যেহেতু প্রত্যন্ত গ্রামের একটি হাসপাতাল, প্রান্তিক দরিদ্র মানুষগুলো আমাদের এখানে চিকিৎসা নিতে আসত এবং আজও আসছে। তখন দেখলাম অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্য সাথী কার্ড নিয়ে আসছেন, স্বাস্থ্য সাথী কার্ড এর মাধ্যমে আমরা চিকিৎসা করার চেষ্টা করলাম কিন্তু সরকারের কিছু নীতি আছে, একটি মানুষের একশো শতাংশ চিকিৎসা তো আর স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের মাধ্যমে দেওয়া সম্ভব নয়, ঔষধ, চিকিৎসা স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে সেই অর্থে নেই, আছে সাময়িক সহায়তা। অপারেশন যেগুলো আছে সেগুলোও সবসময় উন্নতমানের হয় না, আমাদের করতে হয় বাধ্য হয়ে, অনেক সময় ভাল চিকিৎসক স্বাস্থ্য সাথী কার্ড এর প্যাকেজ কম থাকায় আমরা আনতে পারি না। একটি গ্রামের যদি একবছরে কুড়িজন হাসপাতালে ভর্তি হন তার মধ্যে ১০-১২ জন গর্ভবতী মায়েরা থাকেন। স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে মাতৃত্বকালীন সুবিধা নেই, শতকরা প্রায় ৪৫ থেকে ৫৫ জন মানুষের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পাইলস হয় সেই পাইলস অপারেশনের সুযোগ স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে নেই। ৪০ বছরের উর্দ্ধে বয়স হয়ে গেলে বেশিরভাগ মানুষ চোখের ছানির সমস্যায় ভোগেন, কিন্তু ছানি অপারেশনের সুবিধা স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে নেই। পশ্চিমবঙ্গে এখনও পর্যন্ত আয়ুষ্মান ভারত চালু হয়নি, ফলে আয়ুষ্মান ভারত এর প্যাকেজ সম্পর্কে মানুষের আইডিয়া নেই, অথচ গরিব মানুষ গুলো স্বাস্থ্য সাথী কার্ড নিয়ে হসপিটালে চিকিৎসা করতে আসছে। কিন্তু আমরা চিকিৎসা দিতে পারছিনা। তখন চিন্তা করলাম যেহেতু চ্যারিটেবল ট্রাস্টের হসপিটাল এবং এটা একটি নন প্রফিট মেকিং ভিউস থেকে হাসপাতাল তৈরি করা। তো আমরা কি উপায়ে সাধারণ মানুষকে না ফিরিয়ে চিকিৎসা দিতে পারি, তখন এম আর চ্যরিটেবল ট্রাস্টের এর পক্ষ থেকে আমরা একটা মেম্বারশিপ কার্ড করলাম, ৪৯৯৯ টাকা দাম কার্ডটির, এক বছরের জন্য কার্ড হোল্ডার এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত সমস্ত প্রকার চিকিৎসা করাতে পারবেন। নথিভূক্ত হওয়ার পর প্রথম দিন থেকে ১ বছর পর্যন্ত সমস্ত প্রকার রোগের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হবে।
আপনজন: রাজ্যে অন্য কোন করপোরেট হাসপাতাল এই পরিষেবা দিতে পারিনি, কিন্তু আপনারা কিভাবে এই পরিষেবা দিচ্ছেন?
ড. জাহিদুল সরকার: অন্য করপোরেট হাসপাতাল এই পরিষেবা কেন দিতে পারেনি জানিনা। তবে চাইলেই দিতে পারতো, কিন্তু চিকিৎসাটা তাদের কাছে হয়তো ব্যবসা তাই তারা এই জনকল্যাণমুখী পরিষেবা গুলো দেয়না। আমরা চিকিৎসাটা সেবার ব্রত হিসাবে নিয়েছি, সেজন্যই হয়তো দিতে পারছি। আগামী দিনে আমাদের এই কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যদি কেউ সহমত পোষণ করে আমাদের সঙ্গে আসেন, তবে তাঁরাও সেবা করতে পারেন সারা রাজ্যের প্রত্যেকটি হাসপাতাল আমাদের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে পারেন। তাঁরাও মাত্র পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে এক লক্ষ টাকার পরিষেবা দিতে পারেন। সাধারণ মানুষ যারা চিকিৎসার জন্য আসছেন তাঁরা ঠকবেন না। তাঁরা চিৎকার করবেন না, হাহাকার করবেন না, সমস্ত রকম চিকিৎসা পাবে।
আপনজন: ভরসা কার্ড চালু করবার ভাবনা কোথায় পেলেন ?
ড. জাহিদুল সরকার: স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে একটি রোগী চিকিৎসা নিতে আসলে, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী 5 হাজার নগত টাকা নিয়ে রোগীর ইনভেস্টিগেশন করতে পারি। তখন আমি দেখলাম পাঁচ হাজার টাকা নগত যখন দিতেই হচ্ছে সরকারি সুবিধা নিতে গিয়ে, তাহলে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে আমি কেন তাঁর পুরো চিকিৎসাটা করাবো না। সেই ধারণা থেকে এম আর চ্যারিটেবল ট্রাস্টের উদ্যোগে আমাদের নিজস্ব একধরনের মেম্বারশিপ কার্ড, তার মাধ্যমে আমরা এক লক্ষ টাকার চিকিৎসা এক বছরে দিচ্ছি। বর্তমানে সাফল্যের সঙ্গে এই পরিষেবা সকলের কাছে পৌঁছে দিতে পেরে আমরা ভীষণ ভাবে আনন্দিত। আমরা চাইবো এই খবরটি মানুষের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে যাক।
আপনজন: ‘ভরসা’ কার্ডের মাধ্যমে কত মানুষ উপকৃত হয়েছেন ?
ড. জাহিদুল সরকার: আমরা ভরসা কার্ড সাড়ম্বরে সঙ্গে যখন চালু করলাম, তারপর থেকে ভরসা কার্ডের প্রতি মানুষের পরিচিত বাড়ছে। পাঁচশো কার্ড প্রতি একটি করে ইউনিট, ইতিমধ্যেই আমাদের একাধিক ইউনিট চালু হয়েছে। এক বছরে আমরা পাঁচ হাজার মানুষকে এই সহোযোগিতা করতে পারবো। এই পর্যন্ত যত মানুষ কার্ড কিনেছেন যারা অসুস্থ হয়েছেন তাঁরা চিকিৎসা নিচ্ছেন, একাধিক ওটি হয়েছে।
আপনজন: একেবারে দরিদ্রদের জন্য কোনও পরিকল্পনা রয়েছে?
ড. জাহিদুল সরকার: সাধারণত সবজায়গায় দেখা যায় দরিদ্রদের জন্য আর্থিক ছাড়, আমরা কিন্তু অসুস্থদের জন্য এই ব্যবস্থাটা করেছি, ধনী দরিদ্র ব্যাপার নেই এখানে। এর পরেও যদি কিছু মানুষের একদমই টাকা না থাকে, ভরসা কার্ডও না থাকে, স্বাস্থ্য সাথী কার্ডও না থাকে, তবুও সে যেন আমার হাসপাতালে আসতে ভুল না করে। অবশ্যই আসুন বাকিটা আমরা নিশ্চয়ই দেখবো।
আপনজন: আপনাদের লক্ষ্য কি?
ড. জাহিদুল সরকার: আমাদের উদ্দেশ্য যেহেতু ব্যবসা নয়, ফলে আমার চাই মানুষ এসে আমাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভরসা কার্ডকে আরও শ্রীবৃদ্ধি করুক।
পাশাপাশি আমাদের হাসপাতালে যেটি মোটো “আর নয় ভেলোর” আমার ভেলোরের সঙ্গে নিজেদের তুলোনা করছি না, তবে আমরা চাই বাঙালিরা ভেলোর মুখী যেমন হয়েছে, তাঁরা নিজের এলাকাতে চিকিৎসার উপর ভরসা করুক ভরসা কার্ডের উপর ভরসা রেখে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct