উনিশ শতকের শিল্পবিপ্লবের কারণে মানুষ প্রযুক্তি উন্নয়নের ব্যাপারে তৎপর হয়ে উঠেছে। মানব মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়ে উদ্ভাবিত হচ্ছে নতুন নতুন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি। তার মধ্যে অন্যতম হলো ইন্টারনেট আবিষ্কার। এসব নতুনত্বের কারণে বিশ্ব মানুষের হাতের মুঠোয়। ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, মানুষের সর্বজনীন কল্যাণ সাধন করা।অনলাইন যুগের কারণে আমাদের পড়াশোনাসহ সব ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। শিশুদের করোনার সময়ে অনলাইন পাঠদান করাটা ছিল উল্লেখযোগ্য অবদান। অনলাইন দুনিয়া শিশুদের কাছে আসলেই অন্যরকম এক জগৎ তৈরি করেছে। এ নিয়ে লিখেছেন রবিন আহমেদ।
উনিশ শতকের শিল্পবিপ্লবের কারণে মানুষ প্রযুক্তি উন্নয়নের ব্যাপারে তৎপর হয়ে উঠেছে। মানব মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়ে উদ্ভাবিত হচ্ছে নতুন নতুন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি। তার মধ্যে অন্যতম হলো ইন্টারনেট আবিষ্কার। এসব নতুনত্বের কারণে বিশ্ব মানুষের হাতের মুঠোয়। ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, মানুষের সর্বজনীন কল্যাণ সাধন করা। অনলাইন যুগের কারণে আমাদের পড়াশোনাসহ সব ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। শিশুদের করোনার সময়ে অনলাইন পাঠদান করাটা ছিল উল্লেখযোগ্য অবদান। অনলাইন দুনিয়া শিশুদের কাছে আসলেই অন্যরকম এক জগৎ তৈরি করেছে। যেখানে তারা সারাটা দিন ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল, টিকটকের মতো সাইটগুলোয় ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। কেউ কিছু কিছু সাইটকে ভালো কাজে ব্যবহার করলেও অধিকাংশ শিশুর অনলাইন সাইটগুলোর খারাপ বিষয়গুলোর সঙ্গে পরিচিত হয়ে যায়। অজান্তে বা না বুঝে সেগুলো ব্যবহারও করে তারা। আমাদের দেশে দেখা যায় তরুণ-তরুণীরা রীতিমতো স্মার্টফোনে আসক্ত হয়ে পড়েছে। তাদের অনেকে পর্নোগ্রাফির মতো সাইটগুলোয় বিচরণ করে থাকে। যার ফলস্বরূপ তাদের মধ্যে আচরণগত সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। তাদের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে দেখা যায়। নানা ধরনের অনৈতিক সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েন তারা। অনেকে অনলাইন জুয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। অল্পবয়সী শিশুরা সারাদিন কার্টুনের মতো কনটেন্ট দেখে দিন পার করে দেয়। যার প্রভাবে তাদের আচার-আচরণ অস্বাভাবিক হয়ে যায়। ওই সব শিশুরা ঠিকমতো পড়াশোনা, খাবার, খেলাধুলা অর্থাৎ সময়ের কাজ সময়ে করে না। যার ফলে তাদের শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। পড়াশোনাতেও ব্যাঘাত ঘটছে। এর ফলে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, যে বয়সে একটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা অর্জনে খেলাধুলা কিংবা শারীরিক কসরতে ব্যস্ত থাকার কথা ছিল; সেই বয়সের একটি শিশু আজকাল স্মার্টফোন আসক্তিতে নিমগ্ন থাকে। আজকাল কোনো রেস্টুরেন্ট, দাওয়াতের জায়গা কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডারত অবস্থাতেও শিশু-কিশোরদের স্মার্টফোন আসক্তি যেন পিছু ছাড়ে না। বিভিন্ন ভিডিও, কার্টুন কিংবা গেমসের মাধ্যমে ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের শান্ত রাখতে হয় অনেক অভিভাবক সন্তানদের হাতে নানা ধরনের গেজেট তুলে দিচ্ছে। অনেক অভিভাবকই নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে সন্তানকে নিজের চোখের সামনে রাখতে মুঠোফোন কিংবা ল্যাপটপ তুলে দিয়ে আপাতত স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন। অনেকে কর্মস্থলে ব্যস্ততার দরুনও শিশুকে সময় দিতে না পেরে গেজেট কিনে দিচ্ছেন। বর্তমান যুগে ব্যস্ততম জীবনযাপনের জন্য মা-বাবাদের আগের মতো শিশুদের সময় দেওয়া কিংবা দেখাশোনা করাটা বহুলাংশে কমে এসেছে। সন্তানের হাতে স্মার্টফোন তুলে অনেকাংশে তাঁরা নির্ভার থাকতে চান। সাম্প্রতিক করোনার প্রেক্ষাপটেই আমরা দেখতে পাই, শিশু-কিশোরের হাতে স্মার্টফোনের দেখা মেলা ছিল ভার, আজ তার হাতে রয়েছে চকচকে নতুন একটি স্মার্টফোন। স্মার্টফোন আসক্তি শিশুর ধৈর্য ও মনোযোগ কমিয়ে দেয়। এ কারণে শিশু ধীরে ধীরে অসহিষ্ণু, অসামাজিক ও উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়ে। তার সহজাত সামাজিক গুণাবলির বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। অনেক সময় ধরে ফোন ব্যবহারের কারণে শিশুরা পর্যাপ্ত ঘুম থেকে বঞ্চিত হয়। ছোট্টবেলা থেকেই শিশুর হাতে স্মার্টফোনের পরিবর্তে বিভিন্ন গল্প বা উপন্যাসের বই তুলে দিন। শিশুদের মধ্যে বেশি বেশি বই পড়ার অভ্যাস যেন গড়ে ওঠে তার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করুন। খেলার মাঠের প্রতি তাদের প্রবল উৎসাহ, সেটিকে আরও উৎসাহিত করুন। সন্তানকে অধিক সময় দেওয়ার পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক সংযোগ বাড়াতে হবে। এমনকি বই পড়া, পরিবারের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া ও সৃজনশীল কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে, যাতে করে মোবাইলে আসক্ত হওয়ার মতো সময় তার না থাকে। প্রকৃতির সান্নিধ্যে শিশুদের খেলাধুলা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা মোবাইল বা অন্যান্য ইলেকট্রনিকস ডিভাইসের প্রতি আসক্ত হয়ে না পড়ে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct