কবি প্রণাম
শঙ্কর সাহা
___________
সকাল থেকেই আজ ফটিকের মনখারাপ। এবারে স্কুলে রবীন্দ্রজয়ন্তী হবেনা। শুয়ে শুয়ে গতবছরের কথাগুলো মনে পড়ছে তার। সে বারে রবীন্দ্রজয়ন্তীতে স্কুলের প্রোগামে পোস্টমাস্টার নাটকে রতন চরিত্রে অভিনয় করেছিল ফটিক।গতবারের কথাগুলো মনে পড়ে আজ ফটিক যেন সকাল থেকেই আজ প্রায় উদাসীন হয়ে জানালার পাশ দিয়ে তাকিয়ে আছে। ফটিকের পড়ার ঘরে একটি রবিঠাকুরের ছবি আছে সেখানেই প্রতিবার স্কুলে যাবার আগে ফটিক ও তার দাদা পঁচিশে বৈশাখ পালন করে। গতকালই রাতের খাবারের টেবিলে বসে ফটিককে সান্ত্বনা দিয়ে বাবা বলেছিল ,”ফটিক ,এবারতো লকডাইনে বাইরে যেতে পারবিনা তাই দাদাকে নিয়ে বিকেলে বাড়িতেই কবিকে স্মরণ করিস। তোর ঘরে তো একটি ছবি আছে তাইনা বাবা?”ফটিক কোনো কথা বলেনা। আজ খাবারের প্রতিও তার যে মন নেই।
ফটিক জানালার পাশ দিয়ে আজ বৈশাখের আকাশটিকে একভাবে দেখছে। আকাশের বুকে আজ মেঘগুলোও কেমন যেন জমাট বেঁধে আছে। এদিকে নীচ থেকে ছেলেকে বার বার ডেকে সাড়া না পেয়ে উপরের পড়ার ঘরে আসে হিরণ্ময়ী।‘ফটিক,কি করছিস ওখানে দাঁড়িয়ে?”ফটিক চুপ করে থাকে।‘নীচে চল,দেখ দাদা রবিঠাকুরের জন্যে কত সুন্দর মালা গেঁথেছে।চল বাবা?দাদা যে ডাকছে?”হিরণ্ময়ী ছেলের কাছে যেতেই ফটিক মাকে জড়িয়ে ধরে। চোখটি তার জলে ভেজা। হিরণ্ময়ী বুঝতে পারে ছেলের মনের অবস্থা। তাই ছেলের দিকে চেয়ে বলে ,“বাবারে রবিঠাকুরতো আমাদের সকলের জীবনের সাথেই জড়িয়ে আছেন। এইবার না হয় স্কুল বন্ধ।তুই নাটকও করতে পারলিনা কিন্তু সামনে বার ঠিক হবে দেখবি? চল রবিঠাকুরকে মন থেকে শ্রদ্ধাজ্ঞলী জানাবি? চল ফটিক..”ফটিক মার শাড়ির আঁচলে কাঁদতে থাকে। দরজায় তখন দাঁড়িয়ে ফটিকের দাদা অমল ও বিভূতিবাবু। আড়ালে হিরণ্ময়ী সকলকে চুপ থাকতে বলে। ছেলেকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নেয়। ফটিকও মাকে জড়িয়ে ধরে। আর ভাবে সেবছরের পোস্টমাস্টার নাটকে রতনের কথা...
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct