সোলজ ঘোষণা করেছিলেন জার্মানি ইউক্রেনকে ১ বিলিয়ন ডলার দেবে। এটি সংসদীয় অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ রাশিয়া এখনো তার তেল ও গ্যাস বিক্রির মাধ্যমে জার্মানি ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ থেকে প্রতিদিন বিলিয়ন ডলার পায়। জার্মানি বাকি ইউরোপের তুলনায় রাশিয়ার গ্যাস ও তেলের ওপর বেশি নির্ভরশীল। তবে তা জার্মানির জন্য ভয়াবহ অর্থনৈতিক পরিণতি ঘটাবে না। রাশিয়া ও জার্মানির বিরোধ নিয়ে লিখেছেন আনা গ্রিজমালা বুসে। আজ প্রথম কিস্তি।
ইউক্রেনে বর্বর যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় বিশ্ব আশা করেছে যে জার্মানি, ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি এবং একটি রাজনৈতিক হেভিওয়েট দেশ হিসেবে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন ও বন্ধ করার লড়াইয়ে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু ইউক্রেনকে সমর্থন করার ব্যাপারে জার্মানি আসলে কতটা সিরিয়াস? ২৭ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের প্রতিক্রিয়া হিসাবে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ সোলজ একটি ‘ঐতিহাসিক পরিবর্তন’ ঘোষণা করেছিলেন। ব্যাপকভাবে সমর্থিত বক্তৃতায় সোলজ জার্মানির পররাষ্ট্রনীতি উলটে দেন। শোলজ বলেছিলেন, সংকটপূর্ণ অঞ্চলে অস্ত্র না পাঠানোর অবস্থান পরিত্যাগ করে জার্মানি এখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে রক্ষার জন্য অস্ত্র পাঠাবে। জার্মানি তার সামরিক ব্যয় বাড়িয়ে তুলবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। সোলজের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস দলের বিরুদ্ধে প্রচারণাও চালিয়েছিল। বলা হয়েছিল, এটি রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে লক্ষ্যবস্ত্ত করবে, নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করবে, এমনকি সুইফট ব্যাংকিং সিস্টেমে রাশিয়ার প্রবেশাধিকার অস্বীকার করবে। সোলজ রাশিয়া থেকে বিতর্কিত নর্ড স্ট্রিম-২ প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইনের সমাপ্তি বন্ধ করে দিয়েছেন, যা রাশিয়ার ওপর জার্মানির শক্তিনির্ভরতা নিশ্চিত করবে।
এই পদক্ষেপগুলো ছিল জার্মানির ‘ওয়ান্ডেল দুর্খ হান্ডেল’ অথবা ‘বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন’-এর দীর্ঘস্থায়ী নীতি থেকে ১৮০ ডিগ্রি সরে যাওয়ার ঘোষণা। ঐ দীর্ঘস্থায়ী নীতির মাধ্যমে রাশিয়াকে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক একীকরণের সুযোগ ছিল। প্রতিবেশী দেশগুলো এবং বিদেশি সমালোচকেরা জার্মানির এই নীতিকে রাশিয়ার ওপর ঝুঁকিপূর্ণ নির্ভরতা হিসেবে দেখেছিল। জার্মানিতে ক্ষমতায় আসা সরকারগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে আরো ভালো সম্পর্ক স্হাপন হিসেবে দেখেছিল। তার পরও সোলজের ঐতিহাসিক ঘোষণার প্রায় দুই মাস পরে, এই ফ্রন্টগুলোর কোনোটিতেই খুব বেশি কিছু ঘটেনি। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক এবং তার নিজস্ব মন্ত্রীদের সমালোচনা সত্ত্বেও জার্মান সরকার ইউক্রেনের প্রতি তার সমর্থনের ব্যাপারে ধীরগতিতে হাঁটছে। জার্মানির পক্ষ থেকে সামরিক সাহাঘ্য এখনো দেওয়া হয়নি। এস্তোনিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্র জার্মানির চেয়ে অনেক ছোট দেশ হয়েও যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে জার্মানির চেয়ে বেশি অস্ত্র ইউক্রেনকে দিয়েছে। ট্যাংক, আর্টিলারি বা উন্নত বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্হার মতো ভারী অস্ত্র একেবারেই সরবরাহ করা হয়নি। ইউক্রেনের ডোনবাস অঞ্চলে নতুন রুশ আক্রমণ শুরু হলেও এবং জনবহুল কেন্দ্রগুলোতে নির্বিচারে গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটলেও জার্মান সরকার নড়েনি। পরিবর্তে, জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টিন ল্যামব্রেখট ঘোষণা করেছিলেন যে ইউক্রেনকে আরো অস্ত্র সরবরাহ করা জার্মানির প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে ক্ষুণ্ণ করবে।
গত সপ্তাহে সোলজ ঘোষণা করেছিলেন যে জার্মানি ইউক্রেনকে ১ বিলিয়ন ডলার দেবে। এটি সংসদীয় অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে এই সিদ্ধান্ত জুন পর্যন্ত বিলম্বিত করা হয়েছে। অথচ রাশিয়া এখনো তার তেল ও গ্যাস বিক্রির মাধ্যমে জার্মানি ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ থেকে প্রতিদিন বিলিয়ন ডলার পায়। জার্মানি বাকি ইউরোপের তুলনায় রাশিয়ার গ্যাস ও তেলের ওপর বেশি নির্ভরশীল, তাই তার নির্ভরতা বন্ধ করা ইউক্রেনের প্রতি বিশ্বাসযোগ্য অঙ্গীকারের একটি শক্তিশালী সংকেত হবে। এ ছাড়া, এটি জার্মানির জন্য অগত্যা ভয়াবহ অর্থনৈতিক পরিণতি ঘটাবে না। একটি পরিসংখ্যানে দেখায়, জার্মানির জনসাধারণ ইউক্রেনে সামরিক ও আর্থিক উভয় সহায়তা পাঠাতে সমর্থন করে, বেশির ভাগই সোলজের নীতিতে পরিবর্তনকে সমর্থন করে। যদিও জার্মানরা রাশিয়ার জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করার বিষয়ে চিন্তিত, ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যাপক হওয়া সত্ত্বেও।
(লেখক আনা গ্রজিমালা-বুস স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct