অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ফিলিস্তিনি মুসল্লিদের ওপর আরেকটি রমজানে হামলা হল। বেশির ভাগ ইউরো-আমেরিকান রাজনীতিবিদ, মিডিয়া বিশ্লেষক এবং ভাষ্যকার এটিকে তিনটি প্রধান ধর্মীয় অনুভূতির সংমিশ্রণে উদ্ভূত ‘উত্তেজনা’ হিসেবে দেখাচ্ছেন। ইসরাইলের চারটি শহরে ‘ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী হামলার’ প্রতিক্রিয়ার কথা বলছে। ফিলিস্তিনিরা এই অযৌক্তিক ব্যাখ্যা শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। লিখেছেন মার্ক মুহান্নাদ আয়াশ। শেষ কিস্তি।
নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা বা স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য এই ধরনের সহিংসতা চালানোর কথা না। কিন্তু তারা পরিকল্পিতভাবে এটি করে থাকে। মূলত তারা ফিলিস্তিন এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর সর্বোচ্চ ইসরাইলি খবরদারি জাহির করার জন্য এটি করে থাকে। ইসরাইল সহিংসতার মধ্য দিয়ে যে বার্তাটি দিয়ে থাকে তা হল: ফিলিস্তিনিদের জীবন ও মৃত্যুর বিষয়ে ইসরাইলের রায়ই চূড়ান্ত; এসবের জন্য ইসরাইলিদের জন্য কোনো গুরুতর পরিণতি বরণ করতে হবে না এবং ইসরাইল হঠকারিতার মধ্য দিয়েও যদি কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে তা উল্টে দেওয়ার বা তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার কোনো বাস্তব উপায় ফিলিস্তিনিদের সামনে খোলা নেই। এখন আল আকসা মসজিদে যে ঘটনা ঘটছে, প্রায় এক বছর আগে ঠিক একই ধরনের একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় ধ্বংসাত্মক সামরিক আক্রমণ শুরু করেছিল। সে সময় তারা ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করেছিল এবং মসজিদগুলোতে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছিল। গত বছরের ১০ মে থেকে ২১ মে পর্যন্ত ইসরাইলের হামলায় ৬৬ জন শিশুসহ ২৫৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিল। ছয় শ শিশু ও চার শ নারীসহ দুই হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছিল। সে হামলায় অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি ছিল গুরুতর। সে সময় ২০০০ ভবন ধ্বংস হয়েছিল। আট লাখ মানুষ পানি সরবরাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল।
খেয়াল করলে বোঝা যাবে, এই সহিংসতাগুলো স্পষ্টতই অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং ঘোষিত লক্ষ্য ‘ইসরাইলের নিরাপত্তা’র জন্য প্রয়োজনীয়ও নয়। মূলত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি ইহুদিবাদের সম্পূর্ণ সার্বভৌম ক্ষমতা যে অটুট আছে তা জানান দিতেই তারা এই অসম হামলা চালিয়েছিল। যখন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় তখন ইসরাইলের চ্যানেল টুয়েলভ এর প্রকাশিত একটি জরিপে দেখা গিয়েছিল ৭২ শতাংশ ইসরাইলি ভেবেছিল গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে যাওয়া উচিত, আর ২৪ শতাংশ বলেছিলেন, ইসরাইলের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়া উচিত। সেই অবস্থা থেকে ইসরাইলিরা এক চুলও নড়েনি। আল-আকসা মসজিদ কম্পাউন্ডে সর্বশেষ হামলার সঙ্গে একটি অনুমিত মুসলিম-ইহুদি সংঘর্ষের সামান্যতম কোনো সম্পর্ক নেই। যত দিন পর্যন্ত আল আকসা মসজিদ চত্বরে ফিলিস্তিনি মুসল্লিদের আমরা ইবাদত করতে দেখব এবং যত দিন পর্যন্ত সেখানে তাদের স্বাধীনতার স্বর উচ্চকিত দেখব তত দিন পর্যন্ত আমাদের ফি বছর ফিলিস্তিনি মুসল্লিদের ওপর ইসরাইলি আক্রমণ সম্পর্কে লিখতে হবে। ফিলিস্তিনিদের ওপর যতক্ষণ ইসরাইলি আধিপত্যকে নিরঙ্কুশ বলে ইসরাইলিদের মনে না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই হামলা তারা অব্যাহত রাখবে।
(লেখক কানাডার ক্যালগারির মাউন্ট রয়্যাল ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct