অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ফিলিস্তিনি মুসল্লিদের ওপর আরেকটি রমজানে হামলা হল। বেশির ভাগ ইউরো-আমেরিকান রাজনীতিবিদ, মিডিয়া বিশ্লেষক এবং ভাষ্যকার এটিকে তিনটি প্রধান ধর্মীয় অনুভূতির সংমিশ্রণে উদ্ভূত ‘উত্তেজনা’ হিসেবে দেখাচ্ছেন। ইসরাইলের চারটি শহরে ‘ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী হামলার’ প্রতিক্রিয়ার কথা বলছে। ফিলিস্তিনিরা এই অযৌক্তিক ব্যাখ্যা শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। লিখেছেন মার্ক মুহান্নাদ আয়াশ। আজ প্রথম কিস্তি।
অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ফিলিস্তিনি মুসল্লিদের ওপর আরেকটি রমজানে হামলা হল। ইসরাইলের এই হামলার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বেশির ভাগ ইউরো-আমেরিকান রাজনীতিবিদ, মিডিয়া বিশ্লেষক এবং ভাষ্যকার এটিকে তিনটি প্রধান ধর্মীয় অনুভূতির সংমিশ্রণে উদ্ভূত ‘উত্তেজনা’ হিসেবে দেখাচ্ছেন। ইসরাইলের চারটি শহরে ‘ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী হামলার’ প্রতিক্রিয়া হিসাবে এই হামলাকে ন্যায্যতা দেওয়া হচ্ছে। ফিলিস্তিনিরা এই ধরনের অযৌক্তিক ব্যাখ্যা শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। কয়েক শতাব্দী ধরে যে ফিলিস্তিনি জনগণ এখানে বসবাস করে আসছে এবং যারা নিজেদের অস্তিত্বের অধিকার রক্ষার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে, সেই ফিলিস্তিনিদের দখলদার ইসরাইল এবং তার ইউরো-আমেরিকান মিত্ররা ‘ক্রমাগত সহিংসতার চক্র সৃষ্টি করা হিংস্র, ঘৃণ্য, আবেগপ্রবণ, অযৌক্তিক এবং পিছিয়ে পড়া মানুষ’ হিসাবে চিহ্নিত করছে। ইসরাইল যে কারণে এই সর্বশেষ আক্রমণটি শুরু করেছে, সেই একই কারণে তারা এর আগে অনেকগুলো আক্রমণ করেছে এবং তাদের আসন্ন আক্রমণগুলোর পেছনেও থাকবে সেই একই কারণ। কারণটি হলো: ইসরাইল রাষ্ট্রটি বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিক সার্বভৌমত্বের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ফিলিস্তিনের ওপর তাদের আধিপত্যকে তাদের ক্রমাগত জানান দিয়ে যেতে হবে।
ইসরাইলি রাষ্ট্র যে ঔপনিবেশিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে, সেখানে যে রাজনৈতিক দল বা জোট ক্ষমতায় থাকুক না কেন এই রাষ্ট্রটি ক্রমাগত তার ক্রিয়াকলাপ চালিয়ে যাবে। এই রাষ্ট্রের মৌলিক ধারণাটি হলো, ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি-রাষ্ট্র হিসাবে ইসরাইলকে অবশ্যই ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন ভূমির ওপর সর্বোচ্চ সার্বভৌম নিয়ন্ত্রণ সুরক্ষিত করতে হবে এবং ইহুদি বসতি সম্প্রসারিত করতে হবে। এই নীতি বাস্তবায়নই ইসরাইলি সহিংসতার প্রধান কারণ ও লক্ষ্য। জায়ানিজম বা ইহুদিবাদ মূলত ইউরোপীয় ইহুদি বিদ্বেষের ভয়াবহতা থেকে ইউরোপের ইহুদিদের রক্ষা করার আকাঙ্ক্ষা দ্বারা চালিত হয়েছিল। কিন্তু যখনই তাঁরা ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপন শুরু করে তখন থেকেই তাঁরা বসতি স্থাপনকারী-ঔপনিবেশিক সহিংসতার অনুশীলন শুরু করে। ইসরাইলি সহিংসতার প্রধান লক্ষ্য ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনের সমগ্র ভূমিতে সর্বোচ্চ আগ্রাসন নিশ্চিত করা; কারণ ইসরাইলের জন্য এখনো এই ভূমি নিশ্চিতভাবে সুরক্ষিত হয়নি। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ এখনো তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইসরাইলি পুলিশ, সেনা, বসতি স্থাপনকারী বা রাজনীতিবিদেরা ‘দাঙ্গা দমন করতে’, ‘আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে’, ‘ইসরাইলি বেসামরিকদের রক্ষা করতে’ এই সহিংসতাকে ন্যায্যতা দিচ্ছেন। কিন্তু এই সব লক্ষ্য অর্জনের জন্য মসজিদের ছবি তুলতে থাকা একজন নারীকে লাঠিপেটা করার, একজন অতি বৃদ্ধকে গরু ছাগলের মতো লাথি মেরে ফেলে দেওয়ার, ছোট ছোট বাচ্চাদের ভয়ংকর সন্ত্রাসীদের মতো করে গ্রেপ্তার করার, আল আকসা মসজিদের প্রাচীন জানালা ভেঙে ফেলার, মসজিদের ভেতরে ঢুকে নামাজ আদায়রত মুসল্লিদের ওপর টিয়ার গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ার, ১৫৮ জন গুরুতর আহত হওয়ার পরও সেখানে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে না দেওয়ার, ইসরাইলি সেনাদের তৎপরতার ছবি তুলতে থাকা সাংবাদিকদের পেটানোর, সাড়ে চার শ জনের বেশি ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করে জেলে পোরার কোনো দরকার ছিল না।
(লেখক কানাডার ক্যালগারির মাউন্ট রয়্যাল ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct