সঞ্জীব মল্লিক,বাঁকুড়া,আপনজন: দীর্ঘ ২২ বছর আগে তিনি হারিয়ে গিয়েছিলেন। একবারের জন্যেও খোঁজ পায়নি পরিবার । অবশেষে খোঁজ মিলল তাঁর । মিলল টানা ২২ বছর নিখোঁজ থাকার পর। শুধু খোঁজই মিলল তাই নয় নিজের মানসিক ভারসাম্যহীন স্বামীকে ফিরে পেলেন বাঁকুড়ার শালতোড়া থানার শ্যামপুর গ্রামের কল্পনা পরামানিক। সৌজন্যে ওড়িশার ভূমা গ্রামের একটি পরিবার। ২২ বছর আগে বাঁকুড়ার শালতোড়া থানার শ্যামপুর গ্রামে নিজের পাঁচ ও আট বছরের দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে ভরা সংসার ছিল নিতাই পরামানিকের। হঠাৎ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে একদিন ঘর থেকে বেরিয়ে হারিয়ে যান নিতাই। নিজের নাবালক দুই সন্তানকে নিয়ে আশপাশের গ্রামে ও আত্মীয়দের বাড়িতে যথাসাধ্য খোঁজাখুঁজির চেষ্টা চালান স্ত্রী কল্পনা ভান্ডারী। স্বামীর খোঁজ না পেয়ে একদিন সে আশা ত্যাগ করে সন্তানদের নিয়ে বাপের বাড়িতে চলে যান সহায় সম্বলহীন স্ত্রী কল্পনা ভান্ডারী। তারপর একে একে কেটে গেছে ২২ বছর। স্বামীকে কোনোদিন ফিরে পাবেন সে আশাও করেননি কল্পনা দেবী। কিন্তু গত সপ্তাহে আচমকাই শালতোড়া থানার পুলিশ জানায় তাঁর স্বামী রয়েছেন ওড়িশার ময়ুরভঞ্জ জেলার ভূমা গ্রামে । পুলিশের ফোনে ভিডিও কল করে স্বামীকে চিনতেও পারেন স্ত্রী কল্পনা। এরপর ভূমা গ্রামের মানুষ নিতাই পরামানিককে সঙ্গে করে বাঁকুড়ার শালতোড়া থানায় এনে তুলে দেয় পরিবারের হাতে। জানা যায় ২২ বছর আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোনোভাবে ওড়িশার ময়ুরভঞ্জ জেলার ভূমা গ্রামে পৌঁছে গিয়েছিলেন নিতাই পরামানিক। সেখানে গাছের তলায় প্রচন্ড জ্বর গায়ে পড়েছিলেন তিনি। গ্রামের হেমন্ত দাস নামের এক গ্রামীন চিকিৎসক তাঁকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সুস্থ করে তোলেন। এরপর থেকে হেমন্ত দাসের বাড়িতেই ঠাঁই হয় তাঁর। সেখানেই ২২ বছর ধরে ছিলেন নিতাই পরামানিক। সম্প্রতি নিতাই পরামানিক কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর শুধুমাত্র গ্রামের নামটুকু জানান হেমন্ত দাসের পরিবারকে। আর তাতেই কেল্লা ফতে। হেমন্ত দাসের পরিবারের লোকজন ইন্টারনেট ঘেঁটে খুঁজে বের করে যোগাযোগ করেন শালতোড়া থানায়। ওই ব্যাক্তিই ২২ বছর আগে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নিতাই এব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁকে আজ শালতোড়া থানায় নিয়ে আসেন হেমন্ত দাসের পরিবারের লোকজন। সেখানেই নিতাই পরামানিককে তুলে দেওয়া হয় স্ত্রী কল্পনা পরামানিকের হাতে। এতদিন পর নিখোঁজ স্বামীকে ফিরে পেয়ে খুশি স্ত্রী কল্পনা পরামানিক। মানসিক ভারসাম্যহীন নিতাইকে নিজের পরিবারে ফিরিয়ে দিতে পারায় খুশি ভূমা গ্রামের বাসিন্দারাও।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct