বিশেষ প্রতিবেদক,শালবনী,আপনজন: শালবনী বিডিও অফিসের ভুলে আমফানের ক্ষতিপূরণ দু’বার ঢুকে গিয়েছিল! সেই টাকা কবেই খরচ করে ফেলেছেন ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোনো’ মানুষগুলি। কেউবা ঘর সারিয়েছেন, কেউ আবার সংসার চালাতে খরচ করে ফেলেছেন। এদিকে, বিডিও অফিসের তরফে নোটিশ জারি করা হয়েছে, অবিলম্বে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিতে হবে! নাহলে, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাতেই মাথায় হাত পড়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জঙ্গল অধ্যুষিত শালবনীর নিতান্ত দারিদ্র্যপীড়িত আদিবাসী গ্রাম ভুঁইয়াপাড়ার (বুবিশোল সংলগ্ন) কমলা ভুঁইয়া, চন্ডী ভুঁইয়া, শম্ভু মাহাত-প্রমুখদের।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০২০’র মে মাসে যে ভয়াবহ আম্ফান ঝড় রাজ্যের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল শালবনী ব্লকের ১০ নং কর্নগড় অঞ্চলের এই ভুঁইয়াপাড়ার বাসিন্দারাও। কারো মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছিল, কারো বাড়ির দেওয়াল আবার কারুর খড়ের চালা বা ত্রিপল উড়ে গিয়েছিল! তারপর, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারি ক্ষতিপূরণ ধার্য করা হয় ৫০০০ টাকা করে। কিন্তু, ভুঁইয়াপাড়ার ৫ জনের অ্যাকাউন্টে এই টাকা দু’বার ঢুকে যায়! নিতান্তই দরিদ্র, লেখাপড়া না জানা মানুষগুলো তা বুঝবে কি করে। ১০ হাজার টাকাই বরাদ্দ হয়েছে ভেবে, নিজেদের মতো করে বাড়ি সারিয়েছে এবং সংসারের পেছনেও খরচ করেছে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলি। কিন্তু, প্রায় দু’বছর পর, সরকারিভাবে যে নোটিশ জারি করা হয়েছে, তাতেই এখন মহাবিপাকে কমলা, চন্ডী, শম্ভু-রা। জানা যায়, গত ৩-৪ দিন আগে শালবনী পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত কর্ণগড় গ্রাম পঞ্চায়েত মারফত ভুঁইয়াপাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত এই ৫ উপভোক্তাকে নোটিশ পাঠানো হয় শালবনী’র বিডিও-র তরফে। নোটিশে বলা হয়েছে, আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্থকারীদের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০০০ টাকার পরিবর্তে ১০০০০ টাকা প্রদান করা হয়েছে। যে অতিরিক্ত ৫০০০ টাকা প্রদান করা হয়েছে, তা দ্রুত ফেরত দিতে হবে। আর, এই নোটিশ পাওয়ার পরই বিপাকে পড়েছেন ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তরা। কমলা ভুঁইয়া’দের সহজ-সরল স্বীকারোক্তি, “যে টাকা পেয়েছিলাম দু’বছর আগে, সেই টাকা তো খরচ করা হয়ে গেছে। এখন এতদিন বাদে হঠাৎ করে টাকা ফেরত চাইলে কোথা থেকে ফের দেব!” অন্যদিকে, এই বিষয়ে কর্ণগড় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান প্রতাপ জাসুকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “সরকারি ভাবে টাকা প্রদানের সময় হয়তো ভুলবশত ওদের অ্যাকাউন্টে ডবল টাকা চলে গেছে, তাই ব্লক প্রশাসনের তরফে টাকা ফেরৎ চেয়ে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তবে, তাঁরা দরিদ্র হওয়ায় একবারে নাহলে, দু’বারে টাকাটি ফেরৎ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে।” এই বিষয়ে শালবনীর বিডিও প্রণয় দাস-এর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, তিনি ফোন ধরেননি! তবে, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মিনু কোয়াড়ি জানিয়েছেন, “এটা প্রশাসনের বিষয়। আমাদের কিছু করার নেই!”
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct