নববর্ষ
শঙ্কর সাহা
____________
সকাল থেকেই গাঙ্গুলী বাড়িতে খুব ধূম। আজ যে নববর্ষ। তাই সকাল থেকেই বাজারের ফর্দ হাতে নিয়ে কঠিন ব্যস্ততায় সৌরাশিষ। গাঙ্গুলী পরিবারের একমাত্র ছেলে সৌরাশিষ। নীচ থেকে বিনোদিনী দেবী চিৎকার করে ছেলেকে ডেকে বলে ,” বাবা সৌর, বাজারের ফর্দটা মিলিয়ে নিয়ে বাজার করিস। আর শাঁক নিতে ভুলিসনা। আজ বাড়িতে ব্রাক্ষ্ণন ভোজ আছে”। মায়ের কথামতো সৌরাশিষ বাজারে যায়। ফর্দিমতো সব্জি,দইমিস্টি ও মুদির দোকানের বাজারগুলো সেরে নেয়। হঠাতই মনে পড়ে মার কথা। মা যেন শাঁক নিতে বলেছেন তাকে। বাজারে শাঁক বলতে সেই তো বিন্দির শাঁকের দোকান। দোকানের কাছে যেতেই সৌরাশিষ বিন্দিকে ডেকে বলে,”বিন্দি, দে তো টাটকা টাটকা শাঁক কি আছে”? বিন্দি বেছে বেছে টাটকা পাটের শাঁকগুলো ব্যাগে ঢুকিয়ে দেয়।”দাম কতো হলো বিন্দি”? “পাচ টাকা বাবু” সৌরাশিষ পকেট থেকে দশটি টাকা বের করে দেয়। শাড়ির আঁচল থেকে বিন্দি পাঁচ টাকা ফেরত দিতে গেলে সৌরাশিষের নজরে পরে বিন্দির পরণে শাড়িটি বড্ডই জীর্ণ । বাজার থেকে বাড়িতে এসেই সোজা উপরে চলে আসে সৌরাশিষ । হঠাতই পাশের ঘর থেকে স্ত্রী লাবণ্য ঘরে ঢোকে। হাতে দামি বেশ কয়েকটি শাড়ি। “শুনছো, এই শাড়ি তিনটি নববর্ষে নিয়েছি। দাম পড়েছে তিনহাজার।” “হুম,আলমারিতে টাকাটি রাখা আছে। “ চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে থাকে। কিছুতেই মন বসছে না সৌরাশিষের । বারে বারে বিন্দির পরণের সেই জীর্ণ, মলিন কাপড়গুলোর কথা মনে পড়ে তার।” ইতস্ততঃ করতে করতে বাইরে বেরিয়ে যায় সে। রাস্তার মোড়ে বাইকটি রেখে ফুলপাড়ের বস্তিতে ঢোকে সৌরাশিষ। বিন্দির ঝুপড়ির কাছে গিয়ে ডাক দেয়,” বিন্দি শোন?” “ বাবু,আপনি?” বিন্দির হাতে কিছুটাকা দিয়ে সৌরাশিষ বলে,” বিন্দি,কাল নববর্ষ। এইটাকা গুলো দিয়ে একটি শাড়ি কিনিস” সৌরাশিষের হাত থেকে টাকাটি নিতেই বিন্দির চোখে জল চলে আসে “ বাবু,পৃথিবীটা এতো স্বার্থপর কেন?” পৃথিবীতে কি আমাদের মতো গরীবের জন্যে কান্না,দুঃখই কি শুধু রাখা আছে?” বিন্দির কথায় সৌরাশিষ স্তম্ভিত হয়ে যায়। “ জানি না রে বিন্দি,আমি আসছি”বাড়িতে ফেরার পথে শুধুই বিন্দির কথাগুলো মনে পড়ে তার।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct