সম্প্রীতি মোল্লা,কলকাতা,আপনজন: এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জালিয়াতির শেকড় যে গভীর তার প্রাথমিক প্রমাণ মিললো সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে। সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যেভাবে একের পর এক কার্যকরী নির্দেশ দিচ্ছিলেন সাধারণ চাকরিপ্রার্থীদের কথা ভেবে, তা কেন দিচ্ছিলেন দুর্নীতির বেড়াজাল কে কাটিয়ে তুলতে তা এদিন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে অনুসন্ধান কমিটির দাখিল রিপোর্টে উল্লেখ হল। নুতন করে সাধারণ চাকরিপ্রার্থীরা এতে উজ্জীবিত হবে বলে মনে করছেন অনেকেই। চাকরিতে কর্মরত ৬০৯ জন পাশ-ই কররে পারেননি! এসএসসির গ্রুপ ডি নিয়োগ মামলায় বিস্ফোরক রিপোর্ট পেশ করল অনুসন্ধান কমিটি । পেশ হওয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, -’প্যানেলে ওই ৬০৯ জনের র্যাঙ্ক বদলানো হয়েছে’। তাহলে এই নিয়োগ কেলেংকারীতে প্রভাবশালীরা গভীরভাবে যুক্ত ? এবার এসএসসি কেলেঙ্কারিতে নাম জড়াল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর তৈরি করা সুপারিশ কমিটিই নাকি বেআইনি। রিপোর্ট পেশ করল অনুসন্ধান কমিটি।এতে আরও চাপ বাড়ল স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা-সহ চার কর্তার।এদিন কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি পর্বে এজলাসে উপস্থিত ছিলেন এসএসসির প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা। ঠিক এইসময় এই বিস্ফোরক রিপোর্ট পেশ করে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আর কে বাগের নেতৃত্বে গঠিত অনুসন্ধান কমিটি। এই রিপোর্ট পড়ে শোনানো হয় এদিন এজলাসে । রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, -’ গ্রুপ ডি-র ক্ষেত্রে এই ৬০৯ জনকেই ভুয়ো নিয়োগ করা হয়েছিল।গত ২০১৯ সালে ১ নভেম্বর একটি সুপারিশ কমিটি তৈরি হয়েছিল। তারাই গ্রুপ ডি নিয়োগের ক্ষেত্রে এই ৬০৯ জনের প্যানেল তৈরি করেছিল। এক্ষেত্রে দফতরের প্রথম সারির বেশ কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। মূলত তাঁদের সুপারিশেই তৈরি হয়েছিল প্যানেল। আর সেগুলিকে রেজিস্ট্রারে নথিভুক্তও রাখা হয়েছিল। শর্মিলা মিত্র, সুবিলেশ ভট্টচার্য, মহুয়া মৈত্র, অভিজিত্ চট্টোপাধ্যায়, শেখ সিরাজউদ্দিনের নাম উঠে এসেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা যেতে পারে’। অন্যদিকে সমরজিত্ আচার্য ও শান্তিপ্রসাদ সিনহার বিরুদ্ধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাইকোর্টের । এদিন হাইকোর্ট জানিয়েছে, এঁরাই মূলত ভুয়ো সুপারিশ পত্র তৈরি করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, ভুয়ো নথি বানানোর অভিযোগে একাধিক ধারায় মামলা দায়ের হতে পারে’।এই মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে আগে বারবার সোচ্চার হতে দেখা গিয়েছে শান্তিপ্রসাদ সিনহাদের কে। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চ প্রথম থেকেই বলে আসছিল, এই ঘটনায় - ‘মেইন কালপ্রিট’ শান্তিপ্রসাদ সিনহা। প্রয়োজনে সিবিআই তাঁকে জেলে পুরেও জেরা করতে পারেন বলে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এসএসসির প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ প্রথম থেকেই দাবি করছিলেন, -’ তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সঠিক নয়। তবে এদিন অনুসন্ধান কমিটির এই রিপোর্ট আদালতে পেশের পর শান্তিপ্রসাদের মুখ কার্যত বন্ধ হয়ে গেল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল । এর আগেকার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে দিয়েছিল। অনুসন্ধান কমিটির পেশ করা রিপোর্টেও সিঙ্গেল বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ এর গভীরতা মিললো। একাধিক দুর্নীতি হয়েছে নিয়োগে। এবার প্রশ্ন, কী পদক্ষেপ করা হতে পারে আদালতের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে? এক, পাশ না করেই যাঁদের নিয়োগ হয়েছিল, তাঁদের চাকরি বাতিল করে দেওয়া হবে। আর যাঁরা মামলা করেছেন, তাঁদের জন্য নতুন প্যানেল তৈরি করে নিয়োগ করা হবে। তবে বিষয়টা এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। এই দুর্নীতিতে বোর্ডের রাঘব বোয়ালদের যোগ থাকার প্রমাণ আরও সুদৃঢ় হচ্ছে, সেক্ষেত্রে তাঁদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হয়, সেটা দেখার।মামলাকারীদের আইনজীবী জানান, -’ টাকার লেনদেন হয়েছিল কিনা, সে ব্যাপারে অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করেনি। তবে কমিটি বলেছে, মানি ট্রেলের ব্যাপার তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হলে, তা খতিয়ে দেখতে পারে। এতদিন ধরে কর্তারা বলে আসছিল, কমিটির রিপোর্ট না এলে তদন্ত করা যাবে না।এদিন তদন্ত কমিটি রিপোর্টে স্পষ্ট বলেছে, এসপি সিনহার সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে দুর্নীতিতে।আর্থিক প্রতারণার মত অভিযোগ উঠে আসছে শান্তিপ্রসাদ সিনহার বিরুদ্ধে। এই ঘটনার এতদিন পর্যন্ত কোথাও প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম আসেনি। তবে সোমবারের শুনানিতে এসেছে তাঁর নাম। অভিযোগ যে,নিয়োগের আগে যে সুপারিশ কমিটি তৈরি হয়েছিল, তা হয়েছিল তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো । মামলাকারীর আইনজীবী জানান - ‘আদালত সুপারিশ কমিটি গঠনের বিষয়টিকেই বেআইনি বলেছে। কারণ কেউ এই কমিটি গঠনই করতে পারে না। অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই কমিটি কোনও সরকারি আদেশে হয়নি। শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে জয়েন্ট সেক্রেটারি করেছেন। তাই এই কমিটিই বেআইনি’।এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতিতে সরাসরি নাম জড়াল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর নাম।হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ অনুযায়ী নিযুক্ত অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্টে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম এল। তাঁর তৈরি করা কমিটি বেআইনি এদিন তা ডিভিশন বেঞ্চে জানাল আদালতের তৈরি করা অনুসন্ধান কমিটি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct