ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ পূর্ব ইউরোপের একটি অংশে হলেও মিশর ও আরব বিশ্বের কিছু দেশে তার বিষ নিঃশ্বাস পড়ছে। দরিদ্র মিশরীয়রা গমের রুটি খেয়েই জীবন ধারণ করেন। মূলত মিশরীয়দের কাছে গমের রুটি প্রিয় খাবার। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মিশরে বছরে ৯৩ মিলিয়ন রুটি উৎপাদিত হয়। মিশরকে ফি বছর প্রায় ১৪ মিলিয়ন টন গম আমদানি করতে হয়। প্রায় সবটুকুর উৎস হল রাশিয়া-ইউক্রেন। তাই গম আমদানির ক্ষেত্রে চরম সঙ্কটের মধ্যে পড়তে হবে মিশরকে। কারণ, গম আমদানি করতে না পারলে মিশরের জনগণের জন্য সমূহ বিপদ। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে লিখেছেন বজলুর রশীদ। আজ প্রথম কিস্তি।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ পূর্ব ইউরোপের একটি অংশে হলেও মিশর ও আরব বিশ্বের কিছু দেশে তার বিষ নিঃশ্বাস পড়ছে। দরিদ্র মিশরীয়রা গমের রুটি খেয়েই জীবন ধারণ করেন। মূলত মিশরীয়দের কাছে গমের রুটি প্রিয় খাবার। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মিশরে বছরে ৯৩ মিলিয়ন রুটি উৎপাদিত হয়। মিশরকে ফি বছর প্রায় ১৪ মিলিয়ন টন গম আমদানি করতে হয়। প্রায় সবটুকুর উৎস হলো রাশিয়া-ইউক্রেন। রাশিয়া থেকে ৯ মিলিয়ন ও ইউক্রেন থেকে তিন মিলিয়ন টন। মানে প্রয়োজনের ৯০ শতাংশ এই দুই দেশ থেকে আসে। যুদ্ধের কারণে শিপিং বিপর্যয়ও প্রকট হয়েছে। তার পর যোগ হয়েছে আমেরিকান ও ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞা যার মধ্যে রয়েছে রাশিয়ান ব্যাংকগুলোতে সুইফট পেমেন্ট সিস্টেম বন্ধ করে দেয়া। জেনারেল আল সিসি কিভাবে অর্থ স্থানান্তর করবেন তা খুঁজে পাননি এখনো। সিসি এর মধ্যে সে দিন ঘোষণা দিয়েছে, গমের সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। কারণ মিশরে চার মাসেরও বেশি সময়ের গমের মজুদ রয়েছে এবং স্থানীয় গম-ফসল কাটার মৌসুমও এপ্রিলে শুরু হবে। সরকার আরো জানায়, অন্যান্য উৎস থেকে সঙ্কটের সময় গম পাওয়ার জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন দেশে দুর্ভিক্ষ অবস্থা দেখা দিলেও সরকার ঘোষণা দেয়, পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে- এখানেও এমনি অবস্থা। কিন্তু অন্যান্য উৎস থেকে গম পেতে মিশরের ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি হবে ও উচ্চ মূল্য দিতে হবে। সম্প্রতি মিশরীয় সরবরাহ মন্ত্রণালয় খরচের কারণে গম সংগ্রহের একটি আন্তর্জাতিক দরপত্র বাতিল করেছে। সরকার ভর্তুকি দিয়ে রুটির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা এর আগে অনেকবার হয়েছে। তবে এ সময়ে মূল্য বৃদ্ধি পেলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হবে। কেননা নানাবিধ কারণে জনগণ ফুঁসছে। সিসি সেনাবাহিনীকে ব্যাপক ক্ষমতা দিয়েছেন প্রশাসন ধরে রাখার জন্য; আবার না কখন সেনাবাহিনী-জনগণ মুখোমুখি অবস্থানে আসে।
মিশরের পর্যটন শিল্প আয়ের এক সমৃদ্ধ খাত। কোভিড মহামারীর কারণে পর্যটন ধস থেকে বেরিয়ে আসার লড়াই যখন চলছে তখন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ সে প্রচেষ্টাকে হতাশ করেছে। মিশরীয় পর্যটন তথ্য মতে, সে দেশে রাশিয়ান ও ইউক্রেনীয় পর্যটকরা প্রতি বছর মিশরের মোট পর্যটকদের প্রায় ৩৩ শতাংশ হয়ে থাকেন। হুরগাদা ও শারম আল-শেখ মিশরের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটন শহরে পরিণত হয়েছে। রাশিয়ান ও ইউক্রেনীয় পর্যটনের নেতৃস্থানীয়দের গন্তব্য এখানেই। এসব পর্যটক যুদ্ধের পর সব রিজারভেশন বাতিল করে দিয়েছে, তাই আয়ও বন্ধ। যুদ্ধ শেষ হলেই যে, আবার সবাই দলে দলে মিশরে ছুটবে তার ভরসাও নেই। যুদ্ধে যে ধ্বংস ও উদ্বাস্তুর সংখ্যা সেগুলো নিরসন করতে এক দশক কুলাবে কি না, এখনো হিসাব-নিকাশ হয়নি।অবশেষে মিশর ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট চাপে পড়ল। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে জ্বালানির দাম। যুদ্ধের ফলে ২০১৪ সালের পর প্রথমবারের মতো ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১০০ মার্কিন ডলারকে ছাপিয়ে ওপরে উঠেছিল। মিশরে তেল ব্যারেলগুলোর দাম ৬১ মার্কিন ডলার নির্ধারিত ছিল। এই বৃদ্ধির ফলে জ্বালানি ভর্তুকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে সরকারি বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা পাগলা ঘোড়ায় পরিণত হতে চলেছে। নিট জ্বালানির দাম বাড়বে, মুদ্রাস্ফীতিকে হুমকির মুখে ফেলবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct