রাজু আনসারী,অরঙ্গাবাদ,আপনজন: ভরসন্ধায় ইফতারির আগে বাংলাদেশ বেতার থেকে প্রচারিত কুরআন তেলাওয়াত হোক কিংবা ভোররাতে সেহরির সময় রমজান বিষয়ক আলোচনা- একবিংশ শতাব্দীতে এসে রেডিও’র যুগ এখন অতীতে পরিণত হয়েছে। এখন আর কেউ রেডিওর উপর ভরসা করে না, মোবাইল সব পুরাতন ঐতিহ্য কে কার্যত হারিয়ে দিয়েছে। শহর থেকে গ্রাম সকলেই এখন মোবাইল নির্ভর হয়ে পড়েছেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে রেডিওর অস্তিত্ব বিলুপ্ত হলেও এখনও প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় রেডিও’র আনাগোনা লক্ষ করা গেল মুর্শিদাবাদ জেলার সুতি ব্লকে এখনও রেডিও’র উপর ভরসা করেই জীবন অতিবাহিত করছেন সাধারণ মানুষ। যদিও তা অতি নগন্য।
শনিবার সুতি ব্লকের অরঙ্গাবাদ মোমিন পাড়া এলাকায় একগুচ্ছ হয়ে বিড়ি বাঁধছিলেন জনা পাঁচেক ব্যক্তি। পাশেই পুরাতন একটি রেডিও। তাতে বাংলাদেশ বেতার খুলনার কিছু পুরাতন গান সমানে বেজে চলছে। রমজান মাসেও পুরাতন সেই ঐতিহ্য বাহী গানের তালে তালে চলছে বিড়ি বাধার কাজ । এই আধুনিক যুগেও এসেও রেডিও বাজান? প্রশ্ন শুনে বছর পঞ্চান্ন এর বৃদ্ধ আবুল মহলদার বলেন, ছোট থেকেই রেডিও’ই আমাদের ভরসা। আবহাওয়ার খবর কিংবা রমজান মাসের সন্ধ্যায় ইফতারের আগে বাংলাদেশ বেতারের কুরআন তেলাওয়াত অথবা পুরাতন গান সবকিছুই এই রেডিও তে রয়েছে। যতদিন বাঁচবো রেডিওই বাজবে। পাশে রেডিও থাকলে যেন বিড়ি বাঁধার কাজে মন লাগে-জানান আবুল। শুধু আবুল মহালদারই নয়, তার সাথে রেডিও’র তালে তালে একনাগাড়ে বিড়ি বাধার কাজ করে চলেছেন ভোদু শেখ, মজিবুর রহমানরা। সুতি ব্লকেরই অরঙ্গাবাদ এলাকার আরেক বিড়ি শ্রমিক মোকিম মোমিন। রমজান মাসের বিকেল টাইমে পাশে তাঁর জড়ানো সেই পুরাতন রেডিওতে বাজছে বাংলার এক মহিলা শিল্পীর কন্ঠের গজল “একদিন মাটির ভিতরে হবে ঘর, রে মন আমার...”।তার সাথে কথা বলতেই তিনি জানান, রেডিও এখন আর খুঁজে পাওয়া দুরস্ত। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে আগে রেডিও থাকলেও এখন গোটা গ্রামে হয়তো জনা পাঁচেক বাড়িতে রেডিও মিলবে। তাও আবার একবার খারাপ কিংবা ব্যাটারী শেষ হলে অর্ডার দিয়ে মেরামত করিয়ে নিয়ে আসতে হয়। রেডিও’র সব দোকানগুলোও আজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
আজ আর রেডিও নেই। একসময়ে চিটফান্ড গুলোর রমরমা বাজারে তৈরি হওয়া রেডিও’র লোকাল সেন্টারগুলোও আর নেই। রমজান মাসের সন্ধ্যায় বাংলাদেশ বেতারে ক্বারী সাইফুল ইসলামের কন্ঠের তেলাওয়াতও এখন অতীত। ইফতারির ঠিক পাঁচ মিনিট আগে সুমধুর কন্ঠের আজানও এখন বন্ধ। আধুনিক যুগের ব্যস্ততম এই সময়ে রেডিও’র অস্তিত্ব এখন বিলীন। একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে অস্তিত্ব সংকটের মুহূর্তেও গ্রামীন এলাকাতে রেডিও কে আকড়ে ধরে এখনও পুরাতন ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখছেন রেডিও প্রেমী আবুল, মজিবুর,মোকিমরা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct