সম্প্রীতি মোল্লা , কলকাতা, আপনজন: সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের এজলাসে ঝালদার কং কাউন্সিলার খুনে সিবিআই তদন্ত দাবিতে দাখিল পিটিশনের শুনানি চলে। এদিন পুরুলিয়ার ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুর হত্যা মামলা সিবিআইকে দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। অবিলম্বে রাজ্য পুলিশের হাতে থাকা সব নথি সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট । অভিযোগকারী এবং সাধারণ মানুষের মনে আস্থা ফেরানোর জন্যই এই নির্দেশ বলে জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট ।নিহতের পরিবারের তরফে প্রথম থেকেই স্থানীয় থানার খুনের ষড়যন্ত্রে তৎকালীন আইসির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হচ্ছিল। অভিযোগ, - 'আইসি শাসক দলের হয়ে কাজ করছিলেন। কারও নির্দেশে কাজ করছিলেন'। অভিযোগ উঠছে, মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট আসার আগেই আইসিকে ক্লিন চিট দেওয়া হচ্ছে জেলা পুলিশের তরফে । এই পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্ট তপন কান্দুর হত্যা মামলা সিবিআইকে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে তাতে পুরুলিয়া জেলা পুলিশে চাঞ্চল্য পড়ে গেছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল ।কলকাতা হাইকোর্টের আরও নির্দেশ , -' তদন্তের এই পর্যায়ে রাজ্য পুলিশের তরফে কোনও অস্বচ্ছতা বা গাফিলতি রয়েছে, এমনটা মনে হচ্ছে না। যেহেতু পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাই সাধারণ মানুষের মনে আস্থা ফেরানোর জন্যই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে'।দেড়মাসের মধ্যে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের প্রাথমিক রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে বলেও, হাইকোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এরপর আরও সময় লাগলে, তা বিবেচনা করে দেখা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে হাইকোর্টের তরফে। কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশকে অনেক বড় জয় বলেই উল্লেখ করেছেন পুরুলিয়ার কংগ্রেস নেতা নেপাল মাহাতো।এদিন মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, -' অভিযোগকারী এবং মানুষের মনে আস্থা ফেরানোর জন্যই এই নির্দেশ। এই হত্যাকাণ্ডে আইসি'র বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করার এবং কারও নির্দেশে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। এই মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট আসার আগেই আইসিকে ক্লিনচিট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তদন্তের এই পর্যায়ে এসে রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও অস্বচ্ছতা বা গাফিলতি রয়েছে এমনটা মনে হচ্ছে না। তবে, কিছু খামতি অবশ্যই রয়েছে।এদিকে হাইকোর্ট এও জানায় যে, -' পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠছে'। আদালতের পক্ষ থেকে প্রশ্ন, মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট আসার আগে কীভাবে আইসিকে ক্লিনচিট দেওয়া হল? কেন এখনও মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হল না? এও অভিযোগ উঠছে যে, সঙ্গে সঙ্গে ঘটনার ফটোগ্রাফি হয়নি। ধৃত কলেবর সিংকেও ট্রানজিট রিমান্ডে আনা হয়নি।তৎকালীন আইসি সঞ্জীব ঘোষকে হেফাজতে নেওয়া হয়নি কেন। তিনি এখনও কর্মরত। এরপরই নিরপেক্ষ তদন্তের প্রয়োজনে আছে মনে করে আদালত ,তাই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।অন্যদিকে, নিহত কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুর পরিবারের আইনজীবী আদালতে দাবি করেছেন , - গত রবিবার জেলা পুলিশসুপার আইসি সঞ্জীব ঘোষকে ক্লিনচিট দিয়েছেন। এর হত্যাকাণ্ডকে তাঁরা পারিবারিক বিবাদ বলছেন। সত্য ধাপাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছ। আবার রাজ্যের পক্ষ থেকে পাল্টা দাবি করা হয়েছে, পুলিশ সত্য সামনে আনার জন্য সব পদক্ষেপ নিয়েছে। বেশ কয়েকজঙ্কেই গ্রেফতার করেছে এ পর্যন্ত'। গত ১৩ মার্চ হাঁটতে বেরিয়ে কান্দু ঝালদা-বাগমুণ্ডি সড়কপথে গোকুলনগরের কাছে আততায়ীদের ছোঁড়া গুলিতে প্রাণ হারান ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন। এরপরই কাউন্সিলরের মৃত্যুতে ক্ষোভে ফুঁসতে থাকে গোটা ঝালদা। খুনের নেপথ্যে ঝালদা থানার আইসি সঞ্জীব ঘোষ জড়িত রয়েছেন বলেই অভিযোগ করেন নিহতের স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দু।এরপর তৎকালীন আইসি সঞ্জীবের সঙ্গে নিহত কাউন্সিলরের ভাইপো মিঠুন কান্দুর একাধিক অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় । ভাইরাল হওয়া ওই অডিও ক্লিপে শোনা গেছে, তপন কান্দু এবং তাঁর স্ত্রী-সহ মোট তিনজনকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য মিঠুনকে বারবার চাপ দিচ্ছেন আইসি সঞ্জীব ঘোষ। আবার অন্য ভাইরাল হওয়া অডিওতে আইসিকে অভিযোগের বয়ান বদলে দেওয়ার কথাও বলতে শোনা যায়। এরপর এই ঘটনা থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য ভাইপো মিঠুনের কাছে কাতর প্রার্থনা করতেও শোনা যায় ওই আইসিকে। যদিও অভিযুক্ত আইসি সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।কিন্তু এতো কিছুর পরেও ওই আইসির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেই অভিযোগ মৃত কংগ্রেস কাউন্সিলরের পরিবারের।অন্যদিকে, নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে যান নিহত কংগ্রেস কাউন্সিলরের স্ত্রী।কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থারের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের হয়। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন তপন কান্দু হত্যা মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি। অবিলম্বে সিটের হাতে থাকা সব নথি সিবিআইকে হস্তান্তর করার নির্দেশ দেন। আদালতের এই নির্দেশে স্বাভাবিকভাবেই খুশি নিহত কাউন্সিলরের স্ত্রী।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct