রাশিয়ানদের সক্ষমতা নেই গতানুগতিক যুদ্ধের মাধ্যমে সরাসরি বিজয় লাভ করা। বিশেষজ্ঞরা শুরু থেকেই বলে আসছেন, শহর দখল করে সেটি আয়ত্তে রাখার মতো প্রয়োজনীয় পদাতিক সৈন্যদল রাশিয়ার নেই। পেন্টগনের অনুমান অনুসারে যুদ্ধের প্রথম ২০ দিনে প্রায় ৭ হাজারেরও বেশি রাশিয়ান সৈন্য নিহত হয়েছে, যেটি গত ২০ বছরে আফগানিস্তান ও ইরাকে নিহত আমেরিকান সৈন্যদের চেয়েও বেশি। তাই ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে লিখেছেন এম এল ক্যাভানাফ। আজ শেষ কিস্তি।
স্পিলার লিখেছেন, যুদ্ধকে সংজ্ঞায়িত করা হয়ছে তার ভয়াবহতাকে ভিত্তি করে নয়, তার সীমাবদ্ধতাকে তুলে ধরে। একটি যুদ্ধের প্রাথমিক লক্ষ্য যতই অদম্য আর আপসহীন হোক না কেন, সেই লক্ষ্য আর উদ্দেশ্যগুলো যুদ্ধে সংঘটিত ঘটনাবলি আর চাপের কারণে প্রতিনিয়তই সংশোধিত হয় এবং সব পক্ষই ধীরে ধীরে যুদ্ধ বন্ধ করার লক্ষ্যে ঐক্যমতে পৌছায়। আমরা সম্ভবত এখন সেটিই দেখতে পাচ্ছি—ক্ষত ও ব্যর্থতার বাস্তবতা আমলে নিয়ে পূর্বে যেসব বিষয় আলোচনার ঊর্ধ্বে ছিল, সেই সব বিষয়কে স্বীকার করে নেওয়ার এক অভূতপূর্ব আগ্রহ। দুই পক্ষের কূটনীতিকেরা মঙ্গলবার তুরস্কে আলোচনায় বসেছিলেন। রাশিয়া বলছে, শান্তিচুক্তির একটি খসড়া প্রস্ত্তত হলেই তারা পুতিন ও জেলেনস্কির বৈঠকের ব্যাপারে প্রস্ত্তত হবেন। রাশিয়ার একজন ডেপুটি প্রতিরক্ষামন্ত্রী দাবি করেছেন, রাশিয়া কিয়েভের আশপাশে সামরিক কর্মকাণ্ড কমিয়ে আনবে। মাসখানেক আগেও রাশিয়ার যে অবস্খান ছিল, সেখান থেকে তাত্পর্যপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত তার এই বক্তব্য; রাশিয়া বরাবরই হুংকার দিয়ে আসছিল, ক্ষমতার পরিবর্তন হবে আর ইউক্রেন ক্রেমলিনের সব শর্ত মেনে নেবে।
জেলেনস্কি ইতিমধ্যে ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের যেই লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ছিল, সে ব্যাপারে নমনীয় হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং ক্রিমিয়া ও ডনবাসের বিষয়ে আলোচনার কাঠামো নির্দেশ করেছেন। এই পর্যায়ে এসে অপরিপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত কৌশলগত বাজে চর্চাকেই বাড়াবে। কিন্তু আমরা জানি কীভাবে শান্তির পথ তৈরি করতে হয়। পুতিন যতটুকু চেয়েছিলেন, সেটি তার আর্মিদের পক্ষে অর্জন করা সম্ভব নয়—বিষয়টি তিনি মেনে নেওয়ার মাধ্যমেই সমঝোতার শুরু হয়। রাশিয়ার দিক থেকে সমঝোতার বিষয়টি উদার ভাবার কোনো কারণ নেই, কিন্তু অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক এবং অন্য সব নিষেধাজ্ঞা রোধ করার জন্য জেলেনস্কিকে কনভিনস করতে যতটা করার দরকার ততটাই করেছেন পুতিন। এরপর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে জেলেনস্কি। শুধু তিনিই বাকি বিশ্বকে রাশিয়ায় প্রতি নমনীয় করতে ভূমিকা রাখতে পারেন। এটাই তার আলাপ-আলোচনার একমাত্র উদ্দেশ্য। পুতিনের রকেট ও আরপিজি বেশি থাকতে পারে, কিন্তু বর্তমানে জেলেনস্কির সুমধুর ভাষণ সারা পৃথিবীকে আলোড়িত করছে।
পুতিন যেটাকে পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক অভিযান বলছেন, সেই হাওয়ার গতিপথ পালটে দেওয়ার জাদুর কাঠি এখন জেলেনস্কিরই হাতে। জেলেনস্কি একাই পারেন শত শত গ্লোবাল কোম্পানি যারা রাশিয়া (এবং ইউক্রেন) থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে, তাদের ফিরিয়ে আনতে। এই কোম্পানিগুলো অবৈধ যুদ্ধের কারণে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে এবং তারা শুধু শান্তির নিশ্চয়তা পেলেই ফিরতে পারে। এবং এই শান্তির জন্য সমঝোতাকারী দুই পক্ষের বাইরেও অনেক কিছু প্রয়োজন। সর্বশেষ বাধা ইউক্রেনের নাগরিকদের যে কোনো সমাঝোতার বিষয়ে রাজি করানো। যে কোনো সুনির্দিষ্ট চুক্তিই উত্থাপিত হোক না কেন, সেখানে বিভিন্ন ছাড়ের বিষয় থাকবেই। ইউক্রেনের যে কয় ইঞ্চি ভূমি ছেড়ে দেওয়া হবে, সেটিই পবিত্র ভূমি হিসেবে গণ্য হবে। শর্তগুলোকে মনে হবে আত্মসমর্পণ করা এবং যেই লাখ লাখ মানুষের জীবন রাশিয়ার আগ্রাসনে ধ্বংস হয়ে গেছে, তাদের পক্ষে এটা মেনে নেওয়াটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে—যে কোনো আপস তাদের ত্যাগ স্বীকারের চাইতেও মূল্যবান। এখন পর্যন্ত এটাই সম্ভবত জেলেনস্কির সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ যুদ্ধ কঠিন, শান্তিও কঠিন। (সমাপ্ত)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct