শ্রীলঙ্কা তার স্বাধীনতা-উত্তর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। দেশটির নেতারা এ সংকটকে ২০১৯ সালের এপ্রিলের ইস্টার বোমা হামলা ও ২০২০ সালে শুরু হওয়া কোভিড-১৯ মহামারির ফল বলে দাবি করে দায় এড়াতে চাইলেও বাস্তবতা আদতে তা নয়। নিশ্চিতভাবেই এ দুটি ধাক্কা দেশের পর্যটনশিল্পে উল্লেখযোগ্যভাবে পর্যটনপ্রবাহকে হ্রাস করেছে ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তা নিয়ে লিখেছেন ডব্লিউ জে বিজেওয়ার্ধনা। আজ শেষ কিস্তি।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী ২৫ মাসে ব্যাংক থেকে সরকারের নেওয়া ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি রুপিতে দাঁড়ায়। অর্থাৎ এ ২৫ মাসে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ১৭৩ শতাংশ বেড়েছে। এর ফলে ব্যাংক নোটের (যেটিকে এখন শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ ‘টাকা ছাপানো’ বলে প্রায়ই উল্লেখ করছে) মজুত ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে ৩ লাখ কোটি রুপি পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। এতে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ মুদ্রাস্ফীতি অনেক বেড়ে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০১৯ ডিসেম্বরে ছিল ৭৬০ কোটি ডলার। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষে তা মাত্র ২৩০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। এরপরও কথা আছে। এ শেষোক্ত অঙ্কের রিজার্ভের মধ্যে ইললিকুইড ব্যালান্স (যে অর্থ তরল বা নগদ অবস্থায় নেই) এবং চীনের মুদ্রা ইউয়ানের সঙ্গে সোয়াপ সুবিধাভিত্তিক বিনিময়যোগ্য অর্থের পরিমাণ ১৬০ কোটি ডলার। এ অর্থ বাদ দিলে শ্রীলঙ্কার হাতে ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ আছে মাত্র ৪০ কোটি ডলার, যা দিয়ে এক সপ্তাহের আমদানি কার্যক্রম চালানো সম্ভব। পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ, তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। উভয় ব্যাংকই এখন পর্যন্ত স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণের ওপর ভর করে কোনোমতে টিকে আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মোট বৈদেশিক ঋণ সমন্বয় করলে তার ঋণাত্মক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৩২০ কোটি ডলার। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট ঋণাত্মক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৮০ কোটি ডলার।
শ্রীলঙ্কার ঘাড়ে এ ঋণাত্মক ঋণের বোঝা থাকলেও আগামী ১২ মাসের মধ্যে তার ৮৯০ কোটি ডলারের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ কারণে একটি জরুরি ঋণ পুনর্গঠনের কথা বলা হচ্ছে। এ সংকটময় সময়ে ভারত শ্রীলঙ্কাকে আগে থেকে দেওয়া দুটি বাণিজ্যিক ঋণের সম্প্রসারণ হিসেবে জরুরি ভিত্তিতে আরও দেড় শ কোটি ডলারের সহায়তা করতে এসেছিল। শ্রীলঙ্কায় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেই হার ১৭ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছেছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো সরকারের বিশদ পরিসরে অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষি উৎপাদন ভয়াবহভাবে কমে গেছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ২৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ১ মার্কিন ডলার ২০০ শ্রীলঙ্কান রুপির বিনিময়ে পাওয়া যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এ রেটে কোনো ডলার মিলছে না। সেখানে কালোবাজারে ২৫০ থেকে ২৬০ রুপিতে ১ ডলার মিলছে। এ অবস্থা থেকে শ্রীলঙ্কাকে বের করে আনতে সরকারের মধ্যে আলোচনা চলছে। তবে মোটাদাগে যা বোঝা যাচ্ছে, এ খাদ থেকে দেশটির বেরিয়ে আসা খুবই কঠিন হবে। এর জন্য কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।
(সমাপ্ত)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct