নাজমা আহমেদ,আপনজন : গ্রীষ্মের সকালে ঘুম থেকে উঠে দরজা খুললেন। রোদে ঝলমল করছে বারান্দা। বাইরে বের হওয়ার আগে মুখে সানস্ক্রিন লাগাতে আমাদের ভুল হয় না। অথচ চুলের জন্য সেটা আর মনে থাকে না! যদিও মুখের জন্য যে রকম সানস্ক্রিন জরুরি, চুলের জন্য ততটা না হলেও জরুরি। নতুবা চুলের ফ্যাশন ভুলে মাথায় স্কার্ফ পরতে হবে বা চুল বেঁধে রাখতে হবে। যাতে সামান্য অংশ সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির সংস্পর্শে আসে! নতুবা রোদ পড়ে গেলে তবেই ঘর থেকে বাইরে পা রাখতে হবে। নাহলে রোদের তেজে ক্ষতিগ্রস্ত হবে চুল, রুক্ষ হবে, ভেঙে যাবে, নষ্ট হবে স্বাভাবিকতা।চুলের জন্য ব্যবহার করতে হয় এসপিএফ (সান প্রটেকশন ফ্যাক্টর)। এটা সব ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে চুলকে রক্ষার করে।
রোদ থেকে চুলের ক্ষতি হতে পারে। তবে রোদে জ্বলে যাওয়া চুল থেকে কোনো জটিল অসুখ হবে না। যেমনটা হতে পারে ত্বকের ক্ষেত্রে। ত্বকে আল্ট্রাভায়োলেট থেকে ত্বকের ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। চুলের ক্ষেত্রে এ রকম কোনো আশঙ্কা নেই। তাই চুলের সানস্ক্রিন নিয়ে বাড়াবাড়ি না করলেও চলে। চুলের জন্য মূলত দুই ধরনের সানস্ক্রিন পাওয়া যায়। হেয়ার সিরাম ও হেয়ার স্প্রে। যাঁরা চুলে রং কিংবা মেহেদি ব্যবহার করেন, তাঁদের চুলে সানস্ক্রিনের বেশি প্রয়োজন। যেকোনো রং একধরনের কৃত্রিম পিগমেন্ট। এটা আমাদের চুলে বসে চুলকে অন্য রঙে রাঙায়। এ ধরনের পিগমেন্ট কড়া রোদে খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়। ফলে রং করা চুলের জন্য সানস্ক্রিন অতি জরুরি। নিয়মিত চুলে সানস্ক্রিন ব্যবহার না-ই করতে পারেন। তবে আপনি যদি সমুদ্রের ধারে বেড়াতে যান, তা হলে অবশ্যই চুলের সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন। কেননা সমুদ্রপাড়ের রোদ সাধারণ রোদের তুলনায় কড়া। তা আপনার চুলের ক্ষতি করবেই!
চুলের সানস্ক্রিন বানোর ঘরোয়া পদ্ধতি
একটি স্প্রে করা মুখ লাগানো বোতলে এক কাপ পানি নিন। এর ভেতর এক টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল, এক চা–চামচ সৈন্ধব লবণ (সমুদ্রের পানি বাষ্পীভূত করে তৈরি করা হয় এই লবণ। বাজারেই পাওয়া যাবে। দানাদার এই লবণের তেজ সাধারণ লবণের চেয়ে বেশি হয়। রান্নায়, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বা ব্যথা কমানোর জন্য গরম সেঁক দেওয়ার সময় ব্যবহার হয়। খাবার বা শরবতের স্বাদ বাড়িয়ে তুলতে এই লবণ ব্যবহার করা হয়), এক চা–চামচ নারকেল তেল ও এক টেবিল চামচ মধু ঢালুন। ভালো করে ঝাঁকিয়ে নিন। রোদে বসার আগে কিংবা বাইরে বের হওয়ার আগে চুলে এই মিশ্রণটি একবার স্প্রে করে নিন।
পাতিলেবুর খোসা ও নারকেল তেল দিয়েও বানানো যাবে চুলের সানস্ক্রিন। মিক্সচার মেশিনে দুই কাপ পানি, একটি পাতিলেবুর খোসা আর আর এক টেবিল চামচ নারকেল তেল দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে নিন। স্প্রে বোতলে ভরে রাখুন। শীতকালে নারকেল জমে যেতে পারে। তাই ব্যবহারের আগে গরম পানিতে এক মিনিট চুবিয়ে রাখলেই হবে। বাইরে বের হবার আগে শ্যাম্পু করার পর সিরাম লাগানোর মতো করে চুলে এই মিশ্রণটি লাগাতে পারেন। এ ছাড়া বাজারে একটু খোঁজ করলেই পাওয়া যাবে চুলের সানস্ক্রিন। প্রয়োজনে চুল বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলাপ করে নিতে পারেন। এমনিতেই নারকেলের তেল আর অ্যালোভেরার জেল চুলের জন্য ভালো। এগুলো চুলের ওপর একটা আলাদা প্রলেপ তৈরি করে। সেটা রোদের ক্ষতিকর রশ্মিকে সরাসরি চুলের সংস্পর্শে আসতে দেয় না। আপনি চুলে তেল বা জেল মেখে ছাদে বা বারান্দায় বসে গায়ে রোদ মাখতেই পারেন। কিন্তু তেল আর জেল মেখে তো আর বাইরে যাওয়া যাবে না।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct