সম্প্রীতি মোল্লা, কলকাতা,আপনজন: এবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির দারস্থ হলেন খোদ হাইকোর্টের বিচারপতি। পাশাপাশি ওই 'বিচারপ্রার্থী' বিচারপতি সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট অর্থাৎ কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকেও বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছেন। যা শুধু রাজ্য নয় সর্বভারতীয় আইনমহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য পড়ে গেছে। একবার - দুবার নয় বারবার তাঁর(সিঙ্গেল বেঞ্চ) নির্দেশ ডিভিশন বেঞ্চে স্থগিত হয়ে যাচ্ছে।এতেই আপত্তি ওই বিচারপতির।তাই সংশ্লিষ্ট মামলাগুলির সমস্ত কাগজপত্র দিয়ে তিনি নিজেই দারস্থ সুবিচারের আশায়। ‘কাদের সুবিধা পাইয়ে দিতে ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের হাত বেঁধে দিচ্ছে?’ কলকাতা হাইকোর্টে লিখিতভাবে এই প্রশ্ন তুললেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির বেশ কয়েকটি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। আর ডিভিশন বেঞ্চ সেই নির্দেশ গুলি বারবার স্থগিতাদেশ দেয়।এবার এইবিধ মামলাগুলিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ দাবি করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। কলকাতা হাইকোর্টের এই নজিরবিহীন 'প্রতিবাদী' বিচারপতি সুবিচারের আশায় সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হলেন ।ইতিপূর্বে শুনানি চলাকালীন কলকাতা হাইকোর্টের কোনও বিচারপতিকে এভাবে ডিভিশন বেঞ্চের বিরুদ্ধে সাহসী মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। সম্প্রতি স্কুল সার্ভিস কমিশনের চারটি আলাদা মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। তাছাড়া এসএসসি-র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তি প্রসাদ সিনহার সম্পত্তির হিসেবও চেয়েছিলেন তিনি। বুধবার ছিল এই মামলার শুনানি। আর শুনানিচলাকালীন ডিভিশন বেঞ্চের বিরুদ্ধে এইবিধ প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি।সম্প্রতি শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা গুলিতে তাঁর দেওয়া চারটি সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে ডিভিশন বেঞ্চের তরফে। মামলাগুলির নথি এবং সেই সব মামলায় বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চের দেওয়া স্থগিতাদেশের নির্দেশ কপি গুলি দেশের সর্বোচ্চ আদালত অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতি এজলাসে জানিয়েছেন , - ‘দেশ দেখুক, বিচার করুক বেআইনি চাকরি দেওয়া নিয়ে কী চলছে'।সম্প্রতি এক আইনজীবীর একটি মন্তব্য নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়। এসএসসি-র নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলায় ভার্চুয়াল শুনানিতে এক আইনজীবীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘কথা হয়ে গেছে, স্টে হয়ে যাবে’। এই বক্তব্যের রেকর্ডিং বের করার আর্জি জানান আইনজীবীদের বড় অংশ । তবে ভার্চুয়াল শুনানির কোনও রেকর্ড থাকে না। তাই তা বের করা যায়নি। একইসঙ্গে লিখিত নির্দেশে বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ' তাঁর কাছে মঙ্গলবার এক আইনজীবী এসে এই সব মামলা নিয়ে এক প্রভাবশালী রাজনীতিকের হয়ে কথা বলতে এসেছিলেন'। বিচারপতি উল্লেখ করেন যে, ‘তাঁর কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়ে বলেছি, আমাকে মাফ করবেন।’এসএসসি-র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তি প্রসাদ সিনহার সম্পত্তির হিসেব নিয়ে তাঁর দেওয়া নির্দেশের পর ডিভিশন বেঞ্চের তরফে বলা হয়েছে, সিল বন্ধ খামে দিতে হবে হিসেব। খোলা যাবে না খাম। এই মামলার শুনানিতেই এ দিন প্রকাশ্যে আসে বিচারপতির সাম্প্রতিক সময়কালে অসন্তোষ।
যে ভাবে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় তাঁর দেওয়া একের পর এক সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশকে খারিজ অথবা স্থগিতাদেশের নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ, সেই ব্যাপারে ক্ষুব্ধ এই বিচারপতি ।তাই দেশের সর্বোচ্চ আদালত অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির দারস্থ তিনি।বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে এদিনের প্রশ্ন, -' কাদের সুবিধা পাইয়ে দিতে ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের হাত বেঁধে দিচ্ছে ?" লিখিতভাবে এই প্রশ্ন তুললেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় । তিনি প্রশাসনিক চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, -' গত মাস দুয়েক ধরে নিয়োগ দুর্নীতিতে তাঁর দেওয়া চারটি সিবিআই অনুসন্ধানের মামলার নথি এবং সেগুলিতে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চের দেওয়া স্থগিতাদেশের নির্দেশের কথা' । সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে সেই চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি ।বিচারপ্রার্থী বিচারপতির বক্তব্য,- 'দেশ দেখুক, বিচার করুক বেআইনি চাকরি দেওয়া নিয়ে কী চলছে । একইসঙ্গে 'কথা হয়ে গিয়েছে, মামলায় স্থগিতাদেশ হয়ে যাবে' - এক আইনজীবীর এই মন্তব্যের রেকর্ডিং ভার্চুয়াল শুনানির রেকর্ড থেকে বের করার কথাও বলেছেন তিনি । লিখিত প্রশাসনিক নির্দেশে তিনি জানান, -' তাঁর কাছে মঙ্গলবার এক আইনজীবী এসে এই সব মামলা নিয়ে এক প্রভাবশালী রাজনীতিকের হয়ে কথা বলতে এসেছিলেন । তাঁর কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়ে তিনি বলেছেন , আমাকে মাফ করবেন' ।এসএসসি প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তি প্রসাদ সিনহার সম্পত্তির হিসেব নিয়ে তাঁর দেওয়া নির্দেশের পাল্টা হিসেবে সিল করা খামে রিপোর্ট দেওয়ার যে নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চ, সেই বিতর্কেও ক্ষুব্ধ বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় ।উল্লেখ্য প্রথমে গ্রুপ-ডি নিয়োগ, তারপর গ্রুপ-সি নিয়োগে দুর্নীতিতে সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় । গত ২০২৬ সালের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একাধিক ব্যক্তিকে কোথাও নাম না থাকা সত্ত্বেও চাকরি দেওয়া হয়েছে বলে সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন । তবে গ্রুপ ডি ও গ্রুপ সি মামলায় প্রাক্তন বিচারপতির নেতৃত্বে বিশেষ কমিটি গঠন করে তদন্ত করার নির্দেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ । তারপর শিক্ষক নিয়োগের মামলায়ও আপাতত সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে । সেই মামলা দুটির এপ্রিল মাসে শুনানি রয়েছে ডিভিশন বেঞ্চে। এখন দেখার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি কলকাতা হাইকোর্টের অভিযোগকারী বিচারপতির অভিযোগ নিয়ে কি নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্ট কে?
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct