রঙ্গিলা খাতুন,বড়ঞা,আপনজন: চোর পুলিশের খেলাতে ব্যস্ত সারাদিন। পুলিশ মানে কখনো রাজনৈতিক হাতিয়ার নিয়ে উত্তাল হচ্ছে রাজ্য রাজনীতি। কিন্তু এর মধ্যেও পুলিশ যে মানুষের জন্য তার মানবিক উদাহরণ উঠে এলো বড়ঞা থানায়। বড়ঞা থানার অন্তর্গত নিমা বাহাদুরপুর বিদ্যালয়ের তুহিনা আফরিন নামের এক ছাত্রীর সাইকেল হারিয়ে যাওয়ায় তাকে নতুন সাইকেল উপহার হিসেবে কিনে দেন বড়ঞা থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক দেবদাস বিশ্বাস। বড়ঞা থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের এই উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়েছে বড়ঞার আমজনতা। মুর্শিদাবাদের বড়ঞা থানার অন্তর্গত বেলগ্রামে বেশিরভাগ বাসিন্দা দিনমজুর, পরিযায়ী শ্রমিক। তুহিনা আফরিন বড়ঞা নিমা বাহাদুরপুর হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রণির ছাত্রী। বাবা তপন শেখ কলকাতায় নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজে যাওয়ায়, মামার বাড়ি বেলগ্রামে থাকেন মা, মেয়ে ও এক ভাই। ৬ ভাই ও চার বোনের কেউই স্কুলের গন্ডি পার হয়নি। মা রুশনেহারা মাধ্যমিকের ইচ্ছা পূরণ করতে পারেনি তাই মায়ের ইচ্ছে উচ্চশিক্ষিত হওয়ার জন্য তুহিনা ও তার ভাই স্কুলে পড়ুক।
উল্লম্ব গত ২৬ মার্চ বাহাদুর স্কুলে করোনা টিকাকরণ করতে গিয়ে সাইকেল সাইকল হারিয়ে যায়। দিনভর খোঁজাখুঁজির পরদিন স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পরামর্শে বড়ঞা থানায় অভিযোগ জানাতে যান মা ও মেয়ে। এতো ব্যস্ততার মধ্যেও গুরুত্ব সহকারে অভিযোগটি শুনেন বড়ঞা থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক দেবদাস বিশ্বাস। জানতে পারেন অর্থনৈতিকভাবে শোচনীয় তুহিনার পরিবার ফলে দ্বিতীয় বার সাইকেল কেনা দুষ্কর। বাড়ি থেকে আধঘণ্টার পথ, ভাইবোনের স্কুল যাওয়ার একমাত্র ভরসা। স্কুল বন্ধ হলে পড়াশোনার সমস্যায় পড়তে হবে তুহিনা সহ ভাইয়ের। অশ্রুসিক্ত মা ও মেয়ের চোখের ভাষার দেখে ওসি দেবদাস বিশ্বাস চুরির তদন্তের আশ্বাস দিয়ে বাড়ি পাঠালেন মা ও মেয়েকে। তার কিছু সময় পরেই নিজের টাকা থেকে সাইকেল কিনে সোজা বেলগ্রামের তুহিনার বাড়িতে হাজির হয়ে তুহিনার হাতে গোলাপি সাইকেল তুলে দিয়ে বড়ঞার ওসি দেবদাস বলেন “ পড়াশোনার জন্য যে কোনো সহযোগিতায় তুহিনার পাশে আছি। আমি চাই তুহিনা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হোক। তবে হ্যাঁ পরিবারের কাছে একটাই অনুরোধ যাতে করে অল্প বয়সে বিয়ে না দেওয়া হয়। “প্রসঙ্গত গোটা বড়ঞা ব্লকে গত তিন মাসে অন্তত ১৫টি নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করেছে প্রশাসন। সঠিক সময় খবর না পাওয়ায় গোপনে হয়েছে আরও তিনগুণ, তা মানছেন প্রশাসনের কর্তারাও। এ। বিষয়ে তুহিনা বলেন “ আমি স্যারকে অনেক ধন্যবাদ দিতে চাই এবং পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে চাই। আমি স্যার কে কথা দিচ্ছি অল্প বয়সে বিয়ে করব না “এদিকে সাইকেলটি বড়বাবুর কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়ে ছোট্ট তুহিনা বেজায় খুশি আর ছোট্ট মেয়েটির চোখের জল মুখের হাসিতে পরিণত হতে দেখে তাতেই খুশি দেবদাস বাবু।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct