পোল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া ইউক্রেনের শরণার্থীর সংখ্যা এখন ২১ লাখ ছাড়িয়েছে। রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেন যে প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু করেছে, তাতে সামরিক সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো। অস্ত্রশস্ত্রের চালানের একটি অংশ আসছে পোল্যান্ড হয়ে। ন্যাটোভুক্ত দেশ পোল্যান্ডের সীমান্তের একেবারে কাছাকাছি ইউক্রেনের সামরিক ঘাঁটিতে রুশ বিমান হামলা বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। তা নিয়ে লিখেছেন এ কে এম জাকারিয়া। আজ প্রথম কিস্তি।
আমার এক বন্ধু তৈরি পোশাক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের রপ্তানি করা পোশাকের একটি বড় অংশ যায় পোল্যান্ডে। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে এ সংঘাতের সবচেয়ে বেশি আঁচ লেগেছে সেখানে। পোল্যান্ডেও আশ্রয় নেওয়া ইউক্রেনের শরণার্থীর সংখ্যা এখন ২১ লাখ ছাড়িয়েছে। রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেন যে প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু করেছে, তাতে সামরিক সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো। অস্ত্রশস্ত্রের চালানের একটি অংশ আসছে পোল্যান্ড হয়ে। ন্যাটোভুক্ত দেশ পোল্যান্ডের সীমান্তের একেবারে কাছাকাছি ইউক্রেনের সামরিক ঘাঁটিতে রুশ বিমান হামলা বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে।
পোল্যান্ডে পোশাক রপ্তানি করা একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য এসব খবর বেশ আতঙ্কের। এমন পরিস্থিতিতে বেশ বিচলিত হয়েই পোল্যান্ডের ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে আমার সেই বন্ধুর প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ‘বায়ার’কে নাকি পাওয়া গেল বেশ ফুরফুরে মেজাজে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো সমস্যা নেই। বরং পোশাকের চাহিদা আরও বাড়তে পারে। কারণ, ইউক্রেন থেকে শরণার্থীরা আসছেন, তাদের জন্যও তো পোশাক লাগবে।’ যে যুদ্ধকে আমরা অনেকেই শুধু মৃত্যু আর মানবিক বিপর্যয় হিসেবে বিবেচনা করি, তা সব সময়ই কারও কারও ব্যবসা বা বেচা-বিক্রি বাড়ানোর এক বড় সুযোগও বটে! যুদ্ধ নয়, শান্তি—এ স্লোগান নিয়ে যাঁরা মাঠে নামেন বা এখন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, তাঁদের জন্য হতাশার দিক হচ্ছে, যুদ্ধ শুধু কারও কারও মুনাফাই বাড়ায় না, যুদ্ধ নিজেই একটি ভালো ব্যবসা। বিশ্ব এখন যে মাত্রায় ‘ব্যবসাবান্ধব’ হয়ে উঠেছে, তাতে যুদ্ধ বা যুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। হিসাব সহজ, যুদ্ধ না থাকলে বিশাল সামরিক শিল্প ও অস্ত্রপাতির বাণিজ্যের কী হবে!
২০২০ সালে বিশ্বের সামরিক খরচ বেড়ে প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে (১ হাজার ৯৮১ বিলিয়ন ডলার)। এ হিসাব স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই)। করোনা মহামারির আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২০ সালে খরচ ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারিও সামরিক খাতের খরচ কমাতে পারেনি, বরং করোনার প্রথম বছর খরচ বৃদ্ধির চিত্র পেলাম। করোনার দ্বিতীয় বছর, মানে ২০২১ সালের সামরিক খরচের হিসাব-নিকাশ এখনো বের হয়নি। আর ২০২২ সালের শুরুতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর পাল্টে যাওয়া বিশ্ব পরিস্থিতিতে অস্ত্রপাতির চাহিদা কোথায় গিয়ে ঠেকবে, কে জানে! ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এখন ইউক্রেনকে অস্ত্র দিচ্ছে। এতে তাদের অস্ত্রভান্ডারের যে অংশ খালি হচ্ছে, তা তো পূরণ করতেই হবে, সঙ্গে সামনের বিপদ মোকাবিলা বাড়তি অস্ত্রও যুক্ত করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, ন্যাটো দেশগুলো এখন ব্যাপকভাবে অস্ত্র সংগ্রহ ও কেনার দিকে ঝুঁকবে। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে জার্মানি। ৩০ বছর ধরে যে জার্মানি তার সামরিক শক্তিকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসার চেষ্টায় ছিল, সেই দেশটিকে এখন হয়তো এ খাতে শত শত কোটি ডলার ঢালতে হবে। (ক্রমশ)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct