সম্প্রীতি মোল্লা,কলকাতা,আপনজন: বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে বীরভূমের বগটুই কান্ডে সিটের প্রাথমিক রিপোর্ট জমা পড়লো।তবে এদিন মামলাকারী আইনজীবীদের তথ্যপূর্ণ সওয়াল-জবাবে নানান প্রসঙ্গ উঠে এলো।মামলাকারী আইনজীবীদের রাজ্যের তদন্তে বিন্দুমাত্র আস্থা নেই,তা বারবার ফুটে উঠেছে।পাশাপাশি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই তদন্ত দাবিতে জোরালো সওয়াল তাঁরা চালিয়েছেন এদিন। বীরভূমের রামপুরহাটের বগটুই এলাকার ৮ জন গ্রামবাসীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টে তরফে স্বতঃপ্রণোদিত মামলার শুনানি দীর্ঘক্ষণ চলে ঘটনার অমানবিক বিষয়টি গুরত্ব অনুভাব করে । এদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের বেঞ্চ জানায়, -'হাইকোর্টের কাজের নির্ধারিত সময় শেষ হলেও এই মামলার শুনানি চলবে।কোনও আইনজীবীর অসুবিধা না থাকলে কোর্টের সময় পেরিয়ে গেলেও মামলা শোনা হবে। মামলার গুরুত্ব অনুধাবন করেই এই সিদ্ধান্ত'।এতে বিচারপ্রার্থী আইনজীবীরা খুশি।রামপুরহাটের বগটুইয়ে ৮ জন গ্রামবাসীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় গত বুধবার স্বতঃপ্রণোদিত মামলা গ্রহণ করে থাকে কলকাতা হাইকোর্ট। এদিন দুপুরে কলকাতা হাইকোর্ট এর প্রধান বিচারপতি শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে চলে এই মামলার শুনানি। বৃহস্পতিবার শুরুতেই আদালতে আবেদনকারী পক্ষের অন্যতম আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় জানান , 'বুধবার রাত দশটা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়নি'।গত বুধবারেরই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ জারি করে, -' কেস ডায়েরির রিপোর্ট বৃহস্পতিবার জমা করতে হবে আদালতে। নিশ্চিত করতে হবে, ওই জায়গার কোনও তথ্য নষ্ট হয়নি। ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা লাগাতে হবে। আদালতের আগামী নির্দেশ ছাড়া সিসি ক্যামেরার রেকর্ড যেন বন্ধ করা না হয়। পূর্ব বর্ধমান জেলা আদালতের বিচারকের নজরদারিতে সিসিটিভি নজরদারি চালানো হবে। পাশাপাশি, ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়ার কথাও বলা হয় আদেশনামায়। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ আরও নির্দেশ দেয়, -' রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং আইজি-কে সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনও ভাবেই তাঁদের হুমকি বা ভয় দেখানো যাবে না'।এদিন আদালতের নির্দেশ মেনে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কেস ডায়রি জমা দেন সিটের তরফে । এজি জানান ,- 'সিসিটিভি ক্যামেরা ইনস্টল করার কথা বলা হয়েছিল। গত বুধবার হাইকোর্ট সেই নির্দেশ দিয়েছিল। ওইদিন সন্ধ্যাবেলা নির্দেশের প্রতিলিপি হাইকোর্টের সাইটে আসে। এর পর তা জেলায় পাঠানো হয়। জেলা প্রশাসনের তরফে যোগাযোগ করা হয় পূর্ব বর্ধমানের জেলা বিচারককে। এখন সেখানে ৩১টি সিসিটিভি ক্যামরা লাগানো হয়েছে।'যদিও মামলাকারীদের বড় অংশ সিবিআই তদন্তের দাবিতে সওয়াল-জবাব অব্যাহত রেখে চলেছেন । এদিন মামলাকারীদের আরেক আইনজীবী রবিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় আদালত কে জানান , ' পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রাম ঘটনায় পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। আদালত স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। এ ক্ষেত্রেও রাজ্য পুলিশ বা সিট নয়, সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হোক। তাতে নজরদারি করবেন হাইকোর্টের কোনও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি'। এই আইনজীবীর আরও দাবি,- 'সিট এবং রাজ্য পুলিশের উপর প্রভাব খাটানো হতে পারে। তাই সিবিআই-কে দেওয়া হোক এই তদন্ত। ইতিমধ্যে রাজ্যের ডিজি তদন্ত না করেই বলে দিয়েছেন ওই ঘটনা রাজনৈতিক নয়।' আরেক মামলাকারী আইনজীবী শামিম আহমেদ এজলাসে শুনানি পর্বে জানান , - ''কয়লা পাচার মামলায় ইডি এই ঘটনার তদন্তে গঠিত সিটের অন্যতম সদস্য জ্ঞানবন্ত সিংহকে নোটিস দিয়েছিল। তিনি ওই পাচারে যুক্ত। আর তাঁকেই কিভাবে সিটে রাখা হল। তথ্য প্রমাণ লোপাট করতেই কি পদক্ষেপ?' মামলাকারীদের অপর আইনজীবী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল এজলাসে জানান ,- 'মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিপূরণ দিচ্ছেন, তাতে অসুবিধা নেই। কিন্তু তিনি কিভাবে রাজ্য ডিজিকে বলতে পারেন, কী কী করতে হবে?'বৃহস্পতিবার বীরভূমের রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে গিয়ে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছ্রন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন , - ক্ষতিগ্রস্থদের বাড়ি তৈরিতে ১ লক্ষ, হাতে ৫ লক্ষ, সঙ্গে ১০ জনের পরিবারকে একজন করে চাকরি দেওয়া হবে'। বাড়ি তৈরির এক লক্ষ টাকা করে হাতে হাতে দিয়েও দেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রয়োজনে আরও এক লক্ষ করে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct