অমরজিৎ সিংহ রায়,বালুরঘাট,আপনজন: হারিয়ে যাচ্ছে কুলু সম্প্রদায়, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাদের ঘানি। সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে ঘানিতে ভাঙা খাঁটি সরিষার তেল। ফলে খাঁটি সরিষা তেলের স্বাদ আর পাচ্ছে না মানুষ। আজো দক্ষিন দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট ব্লকের অন্তর্গত কামারপাড়া ডুমইর এলাকার সুনীল সাউ এর তেলের ঘানিটা টিকে আছে শুধু মায়ায়। লাভ-লোকসানের হিসাব করছেন না তিনি। আসলে বাবার স্মৃতি ধরে রাখছেন। সুনীলবাবু নিদারুণ অভাবকে সঙ্গী করে তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে শতাব্দী প্রাচীন সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরী এই সরিষার তেলের ঘানি চালিয়ে যাচ্ছেন। উল্লেখ্য, এটি এমন একটি যন্ত্র যাতে একটিও পেরেক নেই। ৫ কিলো সরিষা থেকে ১ কিলো তেল বের হয়। ১৭৭২ সালের সেনসাস থেকে জানা যায় যে অবিভক্ত দিনাজপুরে মোট কলু সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন ১৬৮৪ জন। আগে দিনরাত গরু দিয়ে কাঠের ঘানির সাহায্যে ফোটায় ফোটায় নিংড়ানো খাঁটি সরিষার তেল দিনাজপুরের বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে মাটির হাড়িতে ফেরি করে এবং হাট-বাজারেও এই তেল বিক্রি করা হতো। এ তেল বিক্রি করেই জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতেন এক শ্রেণির কুলু সম্প্রদায়। কিন্তু দিন বদলের সাথে সাথে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। আর নতুন প্রযুক্তিযুক্ত হয়েছে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে। কলু সম্প্রদায়ও এর প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেনি।
পরিশ্রমের তুলনায় লাভ প্রায় হয়না বল্লেই চলে তাই সাংসারিক অভাব এর জন্য বর্তমানে ঘানি চলানোর পাশাপাশি ভ্যান চালান, ঠিকা শ্রমিকের কাজ করেন সুনীল বাবু। তাঁর দীর্ঘ অভাবের সংসারে রয়েছে স্ত্রী ওএক সন্তান। সুনীল সাউ জানান, প্রতি কিলো তেল তিনি মাত্র ৩৫০টাকা কেজি দরে হাটে হাটে বিক্রি করেন। এমতাবস্থায় সরকারী সাহায্য না পেলে তিনি সহ তার ঘানি অল্প দিনের মধ্যেই উঠে যাবার উপক্রম। এবিষয়ে বিশিষ্ট সমাজ সেবক তথা শিক্ষক কৌশিক বিশ্বাস জানান,কৃত্রিম সরিষার তেল বাজার দখল করায় কলু সম্প্রদায় এ ব্যবসা বাদ দিয়ে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন।তাই শতাব্দী প্রাচীন সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরী এই সরিষার তেলের ঘানি ঐতিয্যকে ধরে রাখতে সরকারী সহায়তা একান্ত ভাবে প্রয়োজন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct