নিজস্ব প্রতিবেদক,কলকাতা,আপনজন: সরকারি বিদ্যালয়ে কর্মরত এনএসকিউএফ বৃত্তিমূলক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের দীর্ঘ পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে বেতন মিলছে না বলে অভিযোগ। তাদের অভিযোগ, বিদ্যালয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ উদ্যোগে পার্শ্ব শিক্ষক, এসএসকে, এমএসকে,আইসিটি পরিচালিত হলেও এনএসকিউএফ বৃত্তিমূলকের ক্ষেত্রে অসহযোগিতা দেখা দিচ্ছে। আন্দোলন রত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা জানান, মূলত সরকারি ও সরকার পোষিত উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সমগ্র শিক্ষা অভিযানের অন্তর্গত ন্যাশনাল স্কিল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক বিভাগে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ্যসূচিতে থাকা বৃত্তিমূলক বিষয়ে শিক্ষাদানের জন্য ২০১৩ সালে শিক্ষকদের নিয়োগ করা হয়। ধাপে ধাপে সরকারি নির্দেশ মেনে নিয়োগ করার পর ২০১৮ সালে ল্যাবরেটরি পরিচালনা করার জন্য ২১৮ জন শিক্ষাকর্মীকে নিয়োগ করা হয়, যাঁদের খুব স্বল্প বেতন দিয়ে কাজে রাখা হতো। তাদের অভিযোগ, সেই বেতনটাও কখনো সময়ে পাননি, মাসের পর মাস এমনকি ১ বছর ২ বছর বাদে বেতন মিলেছে। ২০১৮ সালে আবারো বৃত্তিমূলক বিষয়ে শিক্ষাদানের জন্য আরো বেশ কিছু শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। বর্তমানে ৬৭৬ টি বিদ্যালয়ে বৃত্তিমূলক বিষয়গুলি যেমন: আইটি/আইটিইএস, হেলথ কেয়ার, প্লাম্বিং, কন্সট্রাকশন প্রভৃতি ১৩টি বিষয় চলছে। বিষয়গুলি কারিগরী দপ্তর দ্বারা পরিচালনা হওয়ার জন্য দীর্ঘ ৯ বছর ধরে সমস্যা চলছে। অভিযোগ কারিগরী দপ্তরের বেশ কিছু আধিকারিক মোটা টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন বেসরকারি ঠিকাদারি সংস্থা হাতে শিক্ষক নিয়োগ সহ ল্যাবরেটরি পরিকাঠামো, বিদ্যালয়ে হাতে কলমে শেখার যন্ত্রপাতি সরবরাহ, ছাত্র-ছাত্রীদের বই সরবরাহ সবকিছুর দায়িত্ব পাইয়ে দেওয়া হয়। যার ফলস্বরূপ বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে কোনো যন্ত্রপাতি সরবরাহ, বই, কিছুই সরবরাহ করা হয়নি, এমনকি শিক্ষকদের মাইনে পর্যন্ত বছরের পর বছর আটকে রাখা হতো, তবুও কারিগরী দপ্তর কোনো নিয়ন্ত্রন করতেন না বেসরকারি ঠিকাদারি সংস্থাগুলিকে।ঠিকাদারি সংস্থাগুলি ইচ্ছেখুশী সরকারি বিদ্যালয়গুলিকে তাঁদের নিজস্ব ব্যবসার জায়গায় পরিণত করেছেন। হঠাৎ করে ৬০০ শিক্ষকদের অক্টোবরের পর থেকে বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং ইতিমধ্যেই ২১৮ জন শিক্ষাকর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। বাকী শিক্ষকদের পুনর্নবীকরণ, অনিয়মিত বেতন ও বিভিন্ন সমস্যা চলছে। বেসরকারি ঠিকাদারি সংস্থা সরকারি আধিকারিকদের মদতে শিক্ষকদের বলপূর্বক বেতন বন্ধ করে রাখছেন, মানসিক নির্যাতন করছেন, হুমকি দিচ্ছেন , এমনকি বিদ্যালয়ে কাজে যোগ দিতে বাধা দিচ্ছেন।প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশ অমান্য করেই এইধরনের বেনিয়ম করে চলেছেন বেসরকারি ঠিকাদারি সংস্থারা। বেশ কিছু বেসরকারি ঠিকাদারি সংস্থারা শাসকদলের নেতাদের সঙ্গে যোগসাজস থাকায় তাঁরা পরিচালনা করার দায়িত্বভারও অনায়াসে পেয়ে যায়। এমনকি সরকারি বিদ্যালয়ে বেসরকারী ঠিকাদারি সংস্থা ছাত্র-ছাত্রীদের তাঁদের নিজেদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে বাধ্য করায় এর ফলে সরকারি বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ক্রমশ কমছে বলে অভিযোগ। দীর্ঘ ৯ বছর কাজ করার পর শিক্ষকদের দিয়ে বিভিন্ন বিদ্যালয় পঞ্চম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ের ক্লাস নেওয়া করানো হয়। এতকিছুর পরে রাজ্যের প্রায় দুইহাজার শিক্ষক,শিক্ষাকর্মীদের পরিবার অথৈ জলে পড়েছেন। এব্যাপারে তাঁরা বারংবার মুখ্যমন্ত্রী ও কারিগরী মন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীকে জানিয়েও কোনো সুরাহা মেলেনি। পশ্চিমবঙ্গ এনএসকিউএফ শিক্ষক পরিবারের রাজ্য সম্পাদক শুভদীপ ভৌমিক বলেন “কেন্দ্র রাজ্যের সংঘাতের জন্য কেনো এরাজ্যের শিক্ষক ও সরকারি বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা সমস্যায় পড়বে। অবিলম্বে ছাঁটাই হওয়া শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের সবেতন সহ বিদ্যালয়ে পুনর্বহাল ও ৬০ বছর পর্যন্ত কাজের সুনিশ্চিত করতে হবে। পেটে খিদের জ্বালায় আমরা শিক্ষকরা মরে যাচ্ছি,তবুও মানবিক সরকারের পক্ষ থেকে এখনও আমরা কোনো সহযোগীতা পেলাম না”।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct