আপনজন ডেস্ক: হিজাব পরা ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী আবশ্যিক নয়। সেই কারণে এই রীতি ভারতীয় সংবিধানের ২৫তম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রক্ষাকবচ হতে পারে না। কর্নাটক হাইকোর্টের তিন বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ মঙ্গলবার এই রায় দিল। তবে তাতে বিতর্কের অবসান ঘটল না। কারণ, রায়ে অসন্তুষ্ট পক্ষ সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হয়েছেন যে পাঁচজন ছাত্রী কর্নাটক হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন, তাদের একজন। উদুপির সরকারি পি ইউ কলেজের ওই ছাত্রীর নাম নিবা নাজ। কর্নাটক হাইকোর্টের রায়ের পর নিবা নাজ বলেন, সংবিধান আমাদেরকে আমাদের ধর্ম পালনের অধিকার দিয়েছে। আমরা হতাশ। আমরা অনেক কিছু আশা করেছিলাম। তবে হিজাব ছাড়া আমরা কলেজে যাব না। তাই কর্নাটক হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে লড়াই করার অঙ্গীকার। উল্লেখ্য, গত ৫ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে কর্নাটক সরকার স্কুল ও কলেজে সমতা, সততা ও জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে এমন ধর্মীয় পোশাক নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। এদিন তার বিরুদ্ধে মামলার রায় দেয় কর্নাটক হাইকোর্ট। এদিন কর্নাটক হাইকোর্ট হিজাব নিয়ে তার রায়ে বলেছে, আমরা মনে করি যে মুসলিম মহিলাদের হিজাব পরা ইসলামী বিশ্বাসের অপরিহার্য ধর্মীয় অনুশীলনের অংশ নয়। তাই রাজ্য সরকারের নিষেধাজ্ঞা রদ করতে অস্বীকার করে শিক্ষার্থীদের আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়। রায়দানের আগে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্বাই রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা ও ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষার আবেদন জানান। রাজধানী বেঙ্গালুরুতে আগামী এক সপ্তাহের জন্য যেকোনো ধরনের বড় জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে। ম্যাঙ্গালুরুতেও শনিবার পর্যন্ত বড় সমাবেশ নিষিদ্ধ। উদুপি জেলায় বন্ধ রাখা হয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের গোড়ায় কর্ণাটকের কোনো কোনো স্কুল কর্তৃপক্ষ মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরে আসা বন্ধ করে দেয়। সে নিয়ে সৃষ্টি হয় বিতর্ক। পরে রাজ্যের অন্য জেলাতেও তা ছড়িয়ে পড়ে। হিজাবের পাল্টা গেরুয়া চাদর পরে আসতে শুরু করে ছাত্র-ছাত্রীদের কেউ কেউ। তা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।হিন্দুত্ববাদী সংগঠন উৎসাহিত হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে রাজ্য সরকার স্কুল-কলেজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। রাজ্য সরকার জানায়, স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষের তৈরি পোশাক নীতিই চূড়ান্ত। সেখানে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই।
হিজাবে আপত্তি নিয়ে অবশেষে রাজ্যের হাইকোর্টে মামলা করা হয়। মুসলিম ছাত্রীদের দাবি, হিজাব পরা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। ইসলামেও এর মান্যতা রয়েছে। ১০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট অন্তর্বর্তী রায়ে বলেন, মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো রকমের ধর্মীয় পোশাক বা প্রতীক পরে ক্লাসে আসা যাবে না। টানা ১১ দিন শুনানি শেষে গত মাসের ২৫ তারিখ হাইকোর্ট রায় স্থগিত রাখেন। মঙ্গলবার মোট ৫টি আবেদন খারিজ করে প্রধান বিচারপতি ঋতুরাজ অবস্থি, বিচারপতি কৃষ্ণ এস দীক্ষিত ও বিচারপতি জে এম খাজির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ জানান, ইসলাম ধর্মাচরণের জন্য হিজাব অপরিহার্য নয়। তাঁরা বলেন, স্কুল ইউনিফর্ম যুক্তিসংগত নিয়মবিধি। সাংবিধানিকভাবেও বৈধ। স্কুল ইউনিফর্ম নিয়ে রাজ্য সরকারের আদেশ জারির ক্ষমতাও রয়েছে। এই রায়ে আবেদনকারীরা অসন্তুষ্ট। এবার তারা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনা এর আগে এই মামলায় হস্তক্ষেপে অরাজি হয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল হাইকোর্ট আগে বিতর্কের মীমাংসা করুক। তারপর আবেদনকারীরা সুপ্রিম কোর্টে এলে বিবেচনা করা হবে।
হাইকোর্টে মামলা চলাকালে কোনো কোনো আবেদনকারীর যুক্তি ছিল, মুসলিম নারীদের শিক্ষা ও হিজাবের মধ্যে একটি বেছে নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। দেশের তো বটেই, মুসলিম সমাজের অগ্রগতির ক্ষেত্রেও তা বাঞ্ছনীয় নয়। মুসলিম নারীদের ক্ষমতায়নে তা বাধা সৃষ্টি করবে। কোনো কোনো আইনজীবী বলেছিলেন, শিখ পড়ুয়ারা পাগড়ি পরলে তা যদি ধর্মীয় রীতি হিসেবে গ্রাহ্য হয়; হিন্দু বিবাহিত নারী যদি সিঁদুর, শাঁখা, পলা, টিপ পরে ক্লাসে আসতে পারেন, তা হলে মুসলমান ছাত্রীদের হিজাবে কেন বাধা? কারও কারও অনুরোধ ছিল, স্কুল ইউনিফর্মের রঙের কাপড়ে হিজাব পরার অনুমতি দেওয়া হোক।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct