সম্প্রীতি মোল্লা,কলকাতা,আপনজন: সোমবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার-এর এজলাসে হাওড়ার আমতায় আনিস মৃত্যু বিষয়ক মামলার শুনানি চলে। এদিন নিহত আনিস খানের মৃত্যুর তদন্তে রাজ্যের বিশেষ তদন্তকারী দলের কাজ কতদূর এগোল, সে নিয়ে প্রশ্ন তুললেন হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার। এতদিন পরেও তদন্তপ্রক্রিয়া কেন একই জায়গায় আটকে রয়েছে? সে নিয়ে প্রশ্ন তোলে কলকাতা হাইকোর্ট। সিটের কাজ আশানুরূপ নয়, এই নিয়ে বারবার অভিযোগ তুলেছেন নিহত আনিসের বাবা।
এদিন মামলার শুনানির সময় হাইকোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, ‘কোনওরকম ভাবেই সিটের তদন্তপ্রক্রিয়ায় প্রভাব খাটানো যাবে না’। আগামী দশ দিনের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশও দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। েসই সঙ্গে এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাওড়ার আমতায় নিজের বাড়িতে ছাত্রনেতা আনিস খানের রহস্যমৃত্যু নিয়ে রাজ্যের বিশেষ তদন্তকারী দলের রিপোর্ট কলকাতা হাইকোর্টে দাখিল করার পাশাপাশি তার প্রতিলিপি মৃতের পরিবারের আইনজীবীদের দেওয়া হয়েছিল। সিটের রিপোর্ট গত সপ্তাহে হাইকোর্টে জমা পড়লেও এখনও তা প্রকাশ্যে আসেনি। হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল, ওই রিপোর্ট নিয়ে যা বলার, তা আদালতেই বলতে হবে। রিপোর্টের কোনও অংশ যেন শুনানির আগে প্রকাশ্যে না আসে। সোমবার এই মামলার শুনানির দিন আনিসের পরিবার আইনজীবী মারফত ফের অভিযোগ করেছে, ‘সিটের তদন্তে কোনও অগ্রগতিই নেই’। তাতে রাজ্য সরকারের আইনজীবী আদালতকে জানান, ফরেন্সিক রিপোর্ট সামনে না আসা অবধি তদন্তে অগ্রগতি সম্ভব নয়। ফরেন্সিকের তথ্য হায়দরাবাদ থেকে আসবে। সিটের ওপর অনাস্থা প্রকাশ করে সিবিআই তদন্তের দাবি করেছেন আনিসের বাবা সালেম খান। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মাঝরাতে তাঁদের বাড়িতে পুলিশ পাঠানোর পিছনে কারা ছিল? সেই প্রশ্নও বারবার তুলছেন তিনি। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে হোমগার্ড কাশীনাথ বেরা ও সিভিক ভলান্টিয়ার প্রীতম ভট্টাচার্যকে। ধৃতেরা এখনও হেফাজতে রয়েছে । হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দিয়েছে সিট। গত শুনানির সময় এজলাসে বিচারপতি রাজশেখর মান্থার প্রশ্ন তুলেছিলেন, সংশ্লিষ্ট থানার ওসি-কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি কেন, গোপন জবানবন্দিও নেওয়া হয়নি’।মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে জানান, সিট যে রিপোর্ট পেশ করেছে তাতে কিছুই নেই। শুধু আদালতের নির্দেশ মত কি হয়েছে সেটা বলা আছে। কারা জড়িত তাদের নাম নেই’। হাইকোর্টের নির্দেশ, আগামী দশ দিনের মধ্যে এফএসএল ও সিএফএলের রিপোর্ট জমা করতে হবে। সিটের তদন্তে কোন রকম ভাবেই হস্তক্ষেপ করা যাবে না। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১৮ই এপ্রিল। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে বলেন, -’ আপাতত রাজ্য পুলিশ আনিসের মৃত্যুর তদন্ত করবে’। বিচারপতির গুরত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ, ‘রাজ্যের পুলিশ পৃথিবীর কারও থেকে কম নয়, যদি কেউ তাদের বাধা না দেয়। নিজেদের প্রমাণ করার সময় এটা। তারাই এই ঘটনার তদন্ত করবে’। আগামী একমাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশ মেনেই দ্বিতীয়বার আনিস খানের দেহ ময়নাতদন্ত করা হয়। আদালত আগেই জানিয়েছিল, ময়নাতদন্তের পর ভিসেরার নমুনা সংরক্ষণ করতে হবে। আর তা হবে কোনও জেলা জজের উপস্থিতিতে। একইসঙ্গে আনিসের যে মোবাইল ফোনটি তাও জেলা জজের তত্ত্বাবধানে সিএফএসএলকে পাঠাতে হবে।জেলাজজ সেটিকে সিল করে পাঠাবেন। যাবতীয় ডিজিটাল তথ্য, হাতের ছাপ, মোবাইল ফোনে থাকা সমস্ত কিছু সংরক্ষিত করার কথাও বলেছিল হাইকোর্ট। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দ্রুত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল রাজ্য ও মামলাকারীর হাতে। আগামী ১৮ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct