আপনজন ডেস্ক: চার রাজ্যে বিজেপি সরকার গঠন করতে পারলেও পাঞ্জাবে অধরা। বুথ ফেরত সমীক্ষাকে ছাপিয়ে গিয়ে এই প্রথম বার কেজরিওয়ালের আপ বিপুল ভোটে জিতে পাঞ্জাবে সরকার গঠন করতে চলেছে। এতদিন বলতে গেলে দিল্লির মধ্যে ক্ষমতা সীমাবদ্ধ ছিল। এবার তা প্রসারিত হল অন্য রাজ্যেও। পাঞ্জাব দখল করে নজির সৃষ্টি করার পর গোয়াতে প্রথমবার ভোটে লড়ে দুটি আসন পেয়েছে। উজ্জীবিত অরবিন্দ কেজরিওয়াল তাই পাঞ্জাবের বিরাট সাফল্য নিয়ে বললেন, দিল্লির পর এবার পাঞ্জাবে ‘ইনকিলাব’। শীঘ্রই গোটা ভারতে ‘ইনকিলাব’ শুরু হবে। পাঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর বিরুদ্ধে প্রচারে কোনও অভিযোগই আনতে বাদ দেননি বিরোধীরা। এমনকী, কেজরিওয়ালের গায়ে ‘সন্ত্রাসবাদী’ তকমাও লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। তা কাজে আসেনি। কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে মানুষের অস্বস্তিতে তারা অকাতরে সমর্থন জানিয়েছেন আপকে। তাই পাঞ্জােব বিধানসভার ১১৭টি আসনের মধ্যে আপ একাই দখল করেছে ৯২টি। বিজেপি মাত্র দুটি আসন পেয়েছে। আর ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং, চান্নি থেকে শুরু করে সিধু সবাই হেরেছেন। পাঞ্জাবে এবার আপের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ভগবন্ত মান প্রায় ৬০ হাজার ভোটে জিতেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রী হলেও, সাধারণ মানুষ হিসেবে থাকবেন।।
৭১ সালের পর থেকে হয় অকালি, নয়তো কংগ্রেসকেই শাসকদল হিসেবে দেখেছে পঞ্চনদের রাজ্য। এই প্রথম আপের ঝাড়ুতে সাফ হবে পঞ্জাবের পথঘাট। দিল্লি রাজ্য হলেও আধা ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে। তাই নিয়ে আপ আর বিজেপির টানাপোড়েনের জল নেহাত কমদূর গড়ায়নি। সেই হিসেবে এই প্রথম আম আদমি পার্টি প্রথম কোনও পূর্ণাঙ্গ রাজ্য শাসনের ভার পেল। তারমধ্যেই যে উন্নয়নের দিল্লি মডেল তাঁদের মন ছুঁয়েছে, তা ইভিএমে বুঝিয়ে দিলেন পঞ্জাবের জনতা। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার দিল্লি মডেল তাঁরা পঞ্জাবেও চালু করতে চান। নির্বাচনী প্রচারে সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কেজরিওয়াল। সেই প্রতিশ্রুতি যে তাঁরা ক্ষমতায় এসে রক্ষা করবেন, বৃহস্পতিবার তা স্পষ্ট করে দিলেন আপ সুপ্রিমো। কেজরিওয়াল বলেন, ‘ভগত্ সিং একবার বলেছিলেন, স্বাধীনতার পর যদি আমরা ব্যবস্থা না-বদলাই, তাহলে কোনও উপকারই হবে না। গত ৭৫ বছরে এই সব দল ও রাজনীতিবিদরা ব্রিটিশদের ব্যবস্থাই রেখে দিয়েছেন। তাঁরা কোনও হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করেননি। আপ গত সাত বছরে এই ব্যবস্থাই বদলেছে। আমাদের সবাইকে এক নতুন ভারত গড়ে তোলার শপথ নিতে হবে। যেখানে কোনও ঘৃণা থাকবে না। যেখানে আমাদের বোন এবং মায়েরা নিরাপদে থাকতে পারবেন। যেখানে ধনী থেকে দরিদ্র, সবাই সুশিক্ষা পাবেন। এমন এক ভারত গড়ে তোলার শপথ নিতে হবে।’
পঞ্জাবে এবার আপের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ছিলেন ভগবন্ত মান। প্রাক্তন কমেডিয়ান মান যে কমেডি অনুষ্ঠানের প্রতিযোগী ছিলেন, সেই অনুষ্ঠানের বিচারক ছিলেন পঞ্জাব কংগ্রেসের নেতা নভজ্যোত্ সিং সিধু। বৃহস্পতিবারের নির্বাচনী ফল জানাল, নেতা হিসেবে সেই প্রতিযোগী ফুল মার্কস পেয়েছেন। কিন্তু, বিচারক ফিরলেন শূন্য হাতে। শুধু সিধুই নন। বিরোধী শিবিরের বহু তাবড় নেতা এবারের পঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে কার্যত আপের জোয়ারে ভেসে গিয়েছেন। দলের জয়ের পর সেনিয়ে কটাক্ষ শোনা গেল কেজরিওয়ালের গলায়। তিনি বললেন, ‘বড়ি বড়ি কুর্সিয়া হিল গ্যয়ি হ্যায় পঞ্জাব মে। সুখবীর সিং বাদল হার গ্যয়ে। ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং স্যার হার গ্যয়ে। চান্নি স্যার হার গ্যয়ে। নভজ্যোত্ সিং সিধু হার গ্যয়ে।’ সত্যিই এ ‘ইনকিলাব’ই বটে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct