ফরাসি নির্বাচন চলতি বছর, আগামী ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফ্রান্সজুড়ে ৪০টিরও বেশি প্রার্থী দেশের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। প্রধান দলগুলি ফ্রান্সের পাঁচ মিলিয়নেরও বেশি মুসলিম জনসংখ্যার কাছে কোনও আশ্বাসবাণী দেয়নি, বরং বছরের পর বছর ইসলামোফোবিয়া বৃদ্ধিতে সহায়তা দিয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে মুসলমানরা ভোট দেওয়ার যোগ্য কি না ও যোগ্যরা কোন নেতাকে ভোট দেবেন তা নির্ণয় হয়নি। এ নিয়ে লিখেছেন বজলুর রশীদ। আজ প্রথম কিস্তি।
ফরাসি নির্বাচন চলতি বছর, আগামী ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফ্রান্সজুড়ে ৪০টিরও বেশি প্রার্থী দেশের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। প্রধান ফ্রন্ট-রানাররা ফ্রান্সের পাঁচ মিলিয়নেরও বেশি মুসলিম জনসংখ্যার কাছে কোনো আশ্বাসবাণী দেয়নি, বরং বছরের পর বছর দেশের মধ্যে ইসলামোফোবিয়া বৃদ্ধিতে সহায়তা দিয়েছে। সমানাধিকার ও মানবাধিকারের পতাকাধারী ম্যাক্রোঁ সরকার আসন্ন নির্বাচনে মুসলমানরা ভোট দেওয়ার যোগ্য কি না ও যোগ্যরা কোন নেতাকে ভোট দেবে তা দলগতভাবে এখনো নির্ণয় করতে পারেনি। সর্বজনীন ভোটাধিকারের জন্য সেখানকার মুসলমানরা সংগ্রাম করছেন মর্মে কিছু কিছু তথ্য মিডিয়ায় এসেছে। ফরাসি রাজনৈতিক প্রার্থীদের ইসলামোফোবিয়া এবং খোলাখুলিভাবে বর্ণবাদী মতামতের বহিঃপ্রকাশে মুসলমানদের জন্য নানা ইস্যু তৈরি হচ্ছে। ফ্রান্সের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ২০১৭ সালে ক্ষমতায় আসেন। ম্যাক্রোঁ ‘ফ্রান্সের সব মানুষের জন্য’ প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু তার মেয়াদকালে, প্রথম ইউরোপীয় দেশ হিসেবে পুরো মুখের পর্দা নিষিদ্ধ করে মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর আঘাত করেন। নির্দিষ্ট পাবলিক অনুষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করার জন্য আইন পাস করেছিলেন আর মিডিয়ায় প্রচার করছিলেন ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’। খ্রিষ্টান নানরাও হিজাব পরিধান করে, আপাদমস্তক গাউন পরে, কনভেন্টে মেয়েরা পুরো শরীর ঢেকে রাখে, গির্জায় সার্ভিসের সময় মহিলারা মুখ ছাড়া পুরো শরীর ঢেকে রাখে। নানরা যখন বাজার-ঘাটে যায় তখন হিজাব ও শরীর আবৃত রেখেই যায়। কিন্তু তাদের বেলায় কোনো আইন প্রয়োগের কথা ওঠেনি। ফরাসিরা আলজেরিয়া ও লিবিয়ায় কলোনির সময় কী ববর্তার হোলি খেলেছে তা ইতিহাসের পাতা খুললেই দেখা যায়। তাদের অত্যাচারের কাহিনী নিয়ে নির্মিত হয়েছে কালজয়ী অনেক চলচ্চিত্র। তেমনি এক বীর ওমর আল মুখতার, লিবিয়ার স্বাধীনতার জন্য তাকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে। ‘লায়ন অব ডেজার্ট’ চলচ্চিত্রে তার বীরত্ব ও করুণ পরিণতি তুলে ধরা হয়েছে।
আলজেরিয়ায় উপনিবেশ স্থাপনের ১৩২ বছরের সময়কালে, ফ্রান্স পদ্ধতিগত, জাতিগত নির্মূলকরণ ও যুদ্ধাপরাধ চালিয়েছিল। এ সময় প্রায় এক কোটি আলজেরিয়ান নিহত হয়। এটিই ফরাসি উপনিবেশবাদের বাস্তবতা, আলজেরিয়ার নাগরিকত্বের ধারণাটি মুছে ফেলার জন্য এবং দেশটিকে ফ্রান্সের অংশ করার জন্য মূল অধিবাসীদের হত্যা করে বা তাদের সংস্কৃতি ও ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে তাদের ফরাসিতে পরিণত করা হয়। ফরাসি ঔপনিবেশিকরা মসজিদ ধ্বংস করে, আলজেরিয়ান ও ইসলামী ঘটনা ও অনুষ্ঠান পালন করা বন্ধ করে এবং ফরাসি ভাষাকে দেশের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। এসব সামান্য কিছু উদাহরণ। মুসলমানদের বিরোধিতা করে, ধর্ম ও ভাষা থেকে দূরে সরিয়ে ফরাসি বানানোর চেষ্টা করেছে সব সরকার। ফরাসিরা মনে করে তারাই দুনিয়ার সেরা। বিশ্বের সেরা পারফিউম ও মদ এ দেশেই উৎপন্ন হয়। ফরাসি চিত্রকলা, সঙ্গীত ও সুর, ফিল্ম, পোশাকের নতুন স্টাইলের জন্য বিশ্ব ফ্রান্সের দিকে তাকায়। ফ্রান্স মাঝে মধ্যেই ইসলামপন্থী উগ্রপন্থীদের হামলার শিকার হলে পশ্চিমা মিডিয়া সেগুলো হেড নিউজ করতে থাকে দীর্ঘ দিন পর্যন্ত। কেন এসব হামলা হয় তার পেছনের সমস্যা দূর করার কোনো পদক্ষেপ নেয় না। ২০১৫ সালে চার্লিহেবডো হামলা এবং ২০২০ সালে একজন স্কুলশিক্ষকের শিরচ্ছেদ করার পরে যথেষ্ট ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অথচ ম্যাক্রোঁ চার্লিহেবদোকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে বরং ডিফেন্স দিয়েছেন, মুসলমানদের কাছে যে ব্লাসফেমি অপরাধ হলো তার কোনো সুরাহা করার কথা এ পর্যন্ত তার কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। তিনি সচরাচর এক বিষয় নিয়ে দুই বিপরীতমুখী বক্তব্য দেন। এ জন্য এরদোগান বলেছিলেন ‘ম্যাক্রোঁ ‘ব্রেনডেথ’ সমস্যায় আক্রান্ত, তার চিকিৎসা দরকার।
(ক্রমশ...)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct