আপনজন ডেস্ক: বেসামরিক মানুষদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য দুইটি শহরে সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েও তা মানছে না রাশিয়া। মারিউপোল এবং ভলনোভাখা শহরে মস্কোর স্থানীয় সময় শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে এই বিরতি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মারিউপোলের ‘মানবিক করিডোর’ এর জন্য নির্ধারিত রুটে রুশ বাহিনী বোমা হামলা অব্যাহত রাখায় লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি।
শনিবার প্রথম বারের মতো আংশিক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয় রাশিয়া। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, বেসামরিক মানুষদের নিরাপদে সরে যেতে দেওয়ার জন্য দুইটি শহরে এই সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। এ বিষয়ে ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে। কিন্তু এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই মারিউপোলে রুশ সেনারা যুদ্ধবিরতি মানছে না বলে অভিযোগ ওঠে। মারিউপোলের ডেপুটি মেয়র সেরহাই অরলভ বলেন, রুশ সেনারা আমাদের ওপর এখনো বোমা ফেলছে, গোলাবর্ষণ করে চলেছে। মারিউপোলে কোন যুদ্ধবিরতি নেই, শরণার্থী যাতায়াতের পথেও কোন যুদ্ধবিরতি নেই। আমাদের বেসামরিক মানুষ শহর ছাড়তে চায়, কিন্তু তারা গোলাবর্ষণের হাত থেকে বাঁচতে পারছে না। পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, ঐ শহর থেকে বেসামরিক মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। তবে রাশিয়া অভিযোগ করে বলেছে, ইউক্রেনের জাতীয়তাবাদীরা বেসামরিক মানুষদের শহর ছাড়তে বাধা দিচ্ছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার ব্যাপারে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে ইউক্রেনের আকাশে নো-ফ্লাই জোন করার পদক্ষেপ নেবে না ন্যাটো। তাদের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শনিবার দশম দিনের মতো ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে হামলা অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া। তবে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেকসি রেজনিকভ বলেছেন, ইউক্রেনের সেনারা শত্রুদের প্রতিহত করছে। প্রতিরোধের মুখে রুশ সেনারা এখন ধীরে এগোচ্ছে। তিনি বলেন, রুশ সেনারা এখন ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোকে টার্গেট করে হামলা করছে। এর মধ্যে পরমাণু ও হাইড্রো বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো বিপজ্জনক অবকাঠামোও রয়েছে। তার মতে, রুশ সেনারা এখন জোর দিচ্ছে কিয়েভকে ঘিরে ফেলতে এবং প্রতিরোধ ভাঙতে। ১০ দিন ধরে চলা যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কতজন বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছে, তা পরিষ্কার নয়। তবে প্রায় ১২ লাখ মানুষ ইউক্রেন ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। আরো কয়েক লাখ মানুষ এখন আশ্রয়ের সন্ধান করছেন। অন্যদিকে ন্যাটোর সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। শুক্রবার ব্রাসেলসে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক শেষে ন্যাটো মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ বলেন, ইউক্রেনের আকাশে নো-ফ্লাই জোন করার পদক্ষেপ তারা নেবে না। এর কারণ ইউক্রেন কিংবা রাশিয়া কেউই ন্যাটোভুক্ত দেশ নয়। নো ফ্লাই জোনের পদক্ষেপ নেওয়ার আরেক অর্থ হল—রুশ যুদ্ধবিমানে ন্যাটোর হামলা। যাতে পরমাণু শক্তিধর রাশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের যুদ্ধ বাধার আশঙ্কা আছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct