সন্তানের উপর থেকে প্রত্যাসার চাপ সরিয়ে নিন
ড শামসুল আলম
প্রধান শিক্ষক, মুরলিগঞ্জ হাই স্কুল
__________________________
দু’দিন আগে বিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে ২৫৬ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর হাতে অ্যাডমিট কার্ড তুলে দেওয়ার আগে শিক্ষক- শিক্ষিকারা মাধ্যমিক পরীক্ষার বিষয়ে নানা নিয়ম কানুন বোঝাচ্ছিলেন। আমিও ঐ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। দেখলাম সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের চোখে মুখে টেনশনের ছাপ স্পষ্ট। মাধ্যমিক পরীক্ষা একেবারেই দোরগোড়ায় তা ওদের দিকে তাকিয়ে যে কেউই অনুমান করতে পারবে। এরপর মাইক্রোফোন হাতে নিয়েই ওদের কাছে জানতে চাইলাম পরীক্ষার জন্য কারা কারা ভীষণ ভয় পাচ্ছে। প্রথমে কেউ সাড়া দিল না বরং একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছে। পরে বললাম কোন ভয় নেই হাত তুলে জানাও তোমরা। দেখলাম দুই এক জন ছাড়া প্রায় সব ছাত্র ছাত্রীরা হাত তুলে তাদের মনের কথা জানাল। মনে মনে ভাবলাম তাদের এই ভীতির জন্য দায়ী আমরা অর্থাৎ বড়োরাই। আমরা বড়োরা অনেক সময় ভুলে যাই এই ধরণের অনেক পরীক্ষা জীবনে আমরা পেরিয়ে এসেছি। আমরা যদি সেই দিনগুলোতে ফিরে যাই তবে মনে পড়বে আমাদের পরীক্ষার সময় সবচেয়ে বড়ো চাপ ছিল নিজের বা বাবা-মা বা অন্যের প্রত্যাসা পূরণ করতে পারবো কি না? এই যেমন- তোকে ফার্স্ট হতে হবে, -- অঙ্কে ১০০তে ১০০ পেতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। ধরুণ মাঠে নামার আগে কোন কোচ যদি বলে দেন তোমাকে সেনচুরি, ছ’টা ওভার বাউন্ডারি মারতে হবে। তাহলে বলুন মাঠে নেমে কোন খেলোয়াড় তার প্রতিভাকে তুলে ধরতে পারবে? আসলে প্রত্যাশার চাপে তার সেরাটা দিতে পারবে না।
এই সব কথা ভেবেই ছাত্রছাত্রীদের বললাম যে তোমরা প্রত্যেকে নিজের উপর থেকে প্রত্যাসার বোঝা ফেলে দাও। নিজের উপর আস্থা রাখো যে তুমি পাশ করবে। এটা জেনে রাখ পরীক্ষায় বেশী বেশী নম্বর পেলেই জীবনে সফল হওয়া যায় না। এরকম অনেক উদাহরণ দিতে পারি যে, পরীক্ষায় ভালো নম্বর পায়নি কিন্তু জীবনে ভীষণ ভাবে সফল হয়েছে, উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে গেছে। তাই তোমাদের এবং তোমার বাবা-মাদের উদ্দেশ্যে বলবো প্রত্যাসার বোঝা সরিয়ে নিতে। পরীক্ষার হলে তোমরা চাপ মুক্ত হয়ে, ভরপুর আত্মবিশ্বাস নিয়ে যাও- দেখবে খুব খুব ভালো রেজাল্ট হবে। এই সব কথা এবং আরো কিছু অনুপ্রেরণামূলক গল্প শোনার পর প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর মধ্যে একটা স্বস্তির নিশ্বাস দেখতে পেলাম। প্রত্যেকেই মনে হলো একে বারে চাপ মুক্ত। বাবা-মাদের বলবো পরীক্ষার আগের রাত্রে সন্তান ভালো করে ঘুমাচ্ছে কিনা দেখুন এবং তাদের হালকা খাবার খেতে দিন। আমার অভিজ্ঞতা আছে পরীক্ষার প্রথম দিন অভিভাবকরা অযথা পরীক্ষার ঘরে ঢুকে ছাত্র ছাত্রীদের পাশে থেকে নানারকম পরামর্শ দিতে থাকেন, দয়া করে এটা করবেন না এতে এদের মনোসংযোগ নষ্ট হয় বরং ঐদিন ওদের একা থাকতে দিন তাতে সন্তানেরই মঙ্গল হবে। এছাড়া সবসময় সন্তানদের আত্মবিশ্বাস বাড়ার জন্য উৎসাহ দিন। দেখবেন সন্তানের পরীক্ষার ফলাফল আপনার প্রত্যাসাকেও ছাপিয়ে যাবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct