রিজওয়ানুর হত্যার ১৫ বছর পর রিজয়ানুরের মা কিশওয়ার জাহান ইনসাফ চেয়েও পাননি, এখনো শুনানি চলছে। এক সপ্তাহ আগে এক তরুণ যুবক আনিসের মৃত্যু হল । আনিস আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকলেও তিনি এমন বিখ্যাত ছিলেন না যে রাজ্য ব্যাপী এই উত্তাল আন্দোলন হবে। তাহলে কেন এই আন্দোলন ? তা রাজ্যের তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভেবে দেখা একান্ত জরুরি। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন এস এম শামসুদ্দিন।
আনিস খুন নিয়ে রাজ্য উত্তাল। শহর কলকাতা ছেড়ে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ব্লকের পাড়ায় পাড়ায় আনিস খুনের প্রতিবাদে চলছে মিছিল মিটিং প্রচার। তাঁদের একটাই দাবি বিচার চাই- প্রকৃত খুনিদের সাজা চাই । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেরিতে হলেও এই খুনের হদিস বার করতে তদন্ত কমিটি গড়েছেন ‘সিট’। আনিসের বাবা সিটের তদন্ত দলের উপর অনাস্থা প্রকাশ করে সি বি আই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। কলকাতা হাইকোর্ট সিটের তদন্ত গতিবিধি দেখে সিবিআই নয় সিটের উপর আস্থা রেখে সহযোগিতা করতে আনিসের বাবা ও পরিবারকে নির্দেশ দিয়েছেন। সিট তদন্ত দলের উপর আস্থাহীনতা নানান কারণ থাকতে পারে আনিসের বাবা বা দাদার কিন্তু রাজ্য পুলিশের উপর বিশ্বাস নেই। সেটা প্রকাশ করতে যে এই সিবিআই-এর দাবি । সি বি আই তদন্ত হলেই যে সবটা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে এবং অপরাধী ধরা পড়বে এমন নিশ্চিয়তা কোথায় ,সি বি আই এর তদন্ত সম্পর্কে রাজ্যবাসীর স্পষ্ট ধারণা কি নেই ? এর আগে সারদা নারদা সহ নানান তদন্তের কি হল আমরা কি দেখিনি। তদন্তের নামে তাঁরা অদৃশ্য শক্তির আঙ্গুলি হেলনে কিভাবে হয়রানি করেছে সেটাও আমরা দেখেছি। আবার এটাও ঠিক সীট দল সঠিক তদন্ত করে অপরাধীর সূলুক সন্ধান করতে পারবেন কিনা সেটা নিয়ে সাধারণ রাজ্যবাসীর মনে প্রশ্নচিহ্ন । আসলে রিজওয়ানুর হত্যার ১৫ বছর পর রিজয়ানুরের মা কিশওয়ার জাহান ইনসাফ চেয়েও পাননি, এখনো শুনানি চলছে। অন্যদিকে অভিযুক্ত অপরাধী টোডিরাও এখন নাকি মমতার অনুগামী দলের সদস্য। সেই সব আবহের মধ্যে এই এক সপ্তাহ আগে এক তরুণ যুবক আনিসের মৃত্যু হল । আনিস আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকলেও তিনি এমন বিখ্যাত ছিলেন না যে রাজ্য ব্যাপী এই উত্তাল আন্দোলন হবে। তাহলে কেন এই আন্দোলন, তা রাজ্যের তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভেবে দেখা একান্ত জরুরি।
রাজ্যে বিরোধী দলের তেমন অস্তিত্ব না থাকলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে যে চাপা ক্ষোভ এই আন্দোলন সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলে সমাজসচেতন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ব্যাখ্যা করছেন। তাঁদের মতে বিগত নির্বাচনে বিজেপি নামক কট্টর হিন্দুত্ববাদী দলের বিরুদ্ধে উজাড় করে সমর্থন দিয়ে শাসক দলের পাশে থেকেছে রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। অথচ তাঁদের প্রতিনিধিত্ব কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি দলের সাংগঠনিক পদেও সংখ্যানুপাতে রাখা হয়নি। এছাড়া ৭০-৮০% শতাংশ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় অঞ্চল সভাপতি বা ব্লক সভাপতির জায়গায়ও তাদের স্থান হয়নি। তাই সংখ্যালঘুদের মনে প্রশ্ন, কেন এই বৈষম্য? কি অপরাধে এই কৌশল অবলম্বন ? এমনকি বিধানসভা থেকে পৌর নির্বাচনে প্রার্থী নির্বাচনেও তাদের সংখ্যানুপাতে প্রতিনিধিত্ব নেই বলে তাদের মনে গুঞ্জন, চাপা ক্ষোভ। এমনকি বর্তমান সংখ্যালঘু মন্ত্রীর নির্দেশকেও তোয়াক্কা করা হচ্ছে না বলে নানান অভিযোগ আসছে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে -চাপা ক্ষোভ। অদ্ভুত ভাবে সম্প্রদায়ের মধ্যে শ্রেণী বিভাজন তথা শহর ও গ্রামীণ সংখ্যালঘুদের ভাগ করার চেষ্টা হচ্ছে বলে তাঁরা মনে করছেন ।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যার সমাধানে সরকার আন্তরিক নন এমন একটা ধারণা সৃষ্টির নিরন্তন চেষ্টা চালিয়ে গেছে কিছু উমেদার শ্রেণীর মানুষ। যাঁরা ভুল পরামর্শ - ভুল তথ্য দিয়ে ক্ষমতার কাছাকাছি ঘুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উজ্বল মানবিক ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছেন। পঞ্চায়েত স্তর থেকে রাজ্য স্তর পর্যন্ত একটা বৃহত্তর শ্রেণীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ থাকলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের সমস্ত শ্রেণীর জন্য জনহিতকর যে সমস্ত প্রকল্প নিয়েছেন তা ভারত কেন বিশ্বে বিরল। সাধারণ মানুষের মধ্যে এতদসত্ত্বেও কেন ক্ষোভ, কাদের কারণে তিনি আজ প্রশ্ন চিহ্নের সামন, মাননীয়ার ভাবা একান্ত প্রয়োজন। দলীয় সংগঠন নেতৃত্ব ছাড়াও তাঁর হাতে রাজ্যের গোয়েন্দা বিভাগ থেকে তথ্য সংগ্রহ করার নানান বিভাগ রয়েছে। সমাজ থেকে সরকারি অফিসার কোনও বিষয়েই তথ্য সংগ্রহ আজ কঠিন নয় বরং অতি সহজও। আনিস হত্যার সুলুক সন্ধান অবিলম্বে উঠে আসবে বলে আমার দৃড় বিশ্বাস। সেক্ষেত্রে কোনও রাখঢাক না করেই অপরাধীরা সাজা পাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি আন্তরিকতা দেখাতে কুণ্টা করবেন না । কিন্তু দলীয় ও সমাজের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সম্পর্কে তথ্যানুসন্ধান ও ব্যবস্থা নিলে তাঁর স্থায়িত্ব দীর্ঘায়িত হবে এবং তিনি মহিমান্বিত হবেন সন্দেহ নাই ।
লেখক শিক্ষক ও বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct