আপনজন ডেস্ক: মস্কো আর পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে গিয়ে গত কয়েক দিনে ভারতকে কূটনীতির এক কঠিন পথে এগোতে হয়েছে। তারা কোনওভাবে রাশিয়ার সমালোচনায় সামিল হতে পারছে না। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া বিবৃতিতে ভারত বলেছে, 'ইউক্রেইন প্রশ্নে কূটনৈতিক চেষ্টা আর আলোচনার যে আহ্বান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জানিয়েছিল, তাতে সাড়া না মেলাটা ‘খুবই দুঃখজনক'। যদিও সরাসরি কোনো দেশের নাম সেখানে উল্লেখ করেনি নয়াদিল্লি। এভাবে ভারত তার মিত্র রাশিয়ার সমালোচনা করার পথ এড়িয়ে গিয়েছে। ইউক্রেন ও রাশিয়া- দুই দেশই চলমান সংকটে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার আহ্বান রেখেছিল ভারতের সামনে। কিন্তু ভোটদানে বিরত থেকে দিল্লি যে বিবৃতি দিয়েছে, 'সেটা সতর্কভাবে পড়লে বোঝা যায়, ভারত আসলে তাদের ওই মধ্যপন্থা থেকে আরও এক ধাপ এগিয়েছে। পরোক্ষভাবে তারা মস্কোকে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান দেখাতে বলেছে। জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক আইন, এবং রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর গুরুত্ব তুলে ধরে ভারত বলেছে, 'একটি গঠনমূলক পথ খুঁজে বের করার জন্য জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রকে এই নীতিগুলোর প্রতি সম্মান দেখাতে হবে।' কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদে আনা নিন্দা প্রস্তাবে ভারতের ভোটদানে বিরত থাকার বিষয়টি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, বিশেষ করে পশ্চিমের দেশগুলোতে। প্রশ্ন উঠেছে, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারত আরও স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া উচিত ছিল কি না।
ইউক্রেনের এই সঙ্কটে ভারতের এভাবে কূটনৈতিক ভারসাম্য খোঁজার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। সবচেয়ে বড় কারণ হল মস্কোর সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক, যা কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। রাশিয়া ভারতের বৃহত্তম অস্ত্র যোগানদাতা। যদিও ভারত নিজের দেশে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনে মনোযোগী হওয়ায় রাশিয়ার ভাগ ৭০ শতাংশ থেকে ৪৯ শতাংশে নেমে এসেছে। রাশিয়া এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্রের মত প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম দিচ্ছে ভারতকে। ফলে চীন ও পাকিস্তানের বিপক্ষে কৌশলগত জায়গায় পাল্লা দিতে পারছে ভারত। আর সে কারণেই মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকির মধ্যেও ওই ক্ষেপণাস্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত এগিয়ে নিয়েছে ভারত।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct