আফগানিস্তানে তালিবানের চেয়ে অনেক বড় বিপদ, বহু বেশি ভয়ঙ্কর হল, আইএস-আলকায়েদা প্রমুখ উগ্রবাদী গোষ্ঠী। এখন তারা তালিবান প্রশাসনের জন্যও মাথাব্যথার বিরাট কারণ। তাদের ভয়াবহ সন্ত্রাসী তাণ্ডবে সবাই দিশাহারা ও আতঙ্কিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন তাই ‘ইসলামিক’ স্টেট খোরাসান (আইএসকে)-এর মোকাবেলায় আফগানিস্তানের তালিবান শাসক মহলের সাহায্য চাইছে। তা নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন মীযানুল করীম। আজ প্রথম কিস্তি।
আফগানিস্তান নিয়ে লিখতে গেলে আবার লিখতে হবে ‘পুরনো ক্যাঁচাল’ - সেই তালিবান, আশরাফ গনি সরকার, যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্য, মানবাধিকার প্রভৃতি। তবে বাস্তবতা হলো, দেরিতে হলেও আমেরিকার মন গলছে অন্তত আফগান ইস্যুতে। তাদের নেতৃত্বে বিশ্বব্যাংকসহ পশ্চিমা জগৎ আফগান দেশে ‘মানবিক’ ত্রাণ দিতে যাচ্ছে। অর্থাৎ এতদিন তাদের নিজের কার্যক্রম যে, ‘অমানবিক’ বা নিষ্ঠুর ছিল, পক্ষান্তরে এটা স্বীকার করে নেয়া হলো। তা হলে কেন এত বিলম্ব? এক দিকে গণতন্ত্র, অন্য দিকে মানবাধিকারের অবমাননা। তালিবান তো এখন আফগান রাষ্ট্রের বাস্তবতা। তা স্বীকার না করে অন্যদের উপায় কী? আফগান জাতিকে কেউ কষ্টে ফেলার কোনো মানে হয় না। এটা বহু আগেই ভেবে দেখা উচিত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। তা হলে চরম শীতে কারো দুর্ভোগ ঘটত না। তালিবানও কারো সমালোচনার সুযোগ পেত না। মার্কিন নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্য হতো প্রশংসিত সবার কাছে। তালিবানের দুর্ভোগ ঘটাতে গিয়ে আমরা যেন পুরো আফগানিস্তানের দুর্ভোগ ঘটিয়ে না ফেলি।
সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে একটি খবর সামনে আসে তা হল, ‘তালিবানের সহায়তা চায় যুক্তরাষ্ট্র।’ আঁতকে ওঠার মতো ব্যাপার! তালিবান ‘ভয়াবহ সন্ত্রাসী’ এবং ‘কট্টর মৌলবাদী চক্র’। তাদের প্রতি প্রথমে কথিত ‘সদয়’ হয়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে না করতেই আমেরিকা এদের কাছেই উল্টো সাহায্য চাইছে। কথায় বলে Nothing is unfair in love and politics. তাহলে শেক্সপিয়ারের এ কথাই সঠিক। মার্কিন মহাশক্তির কাছে তাদের ‘জাতীয় স্বার্থ’-এর চেয়ে বড় কিছু নেই। এ জন্য তারা তালিবানকে গালাগালি ও গলাগলি একসাথে চালাতে পারে; মাথায় হাত বুলিয়ে সাথে সাথে গলায় ছোরা ধরতেও বাধা নেই তাদের। এ জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন ‘American first’ আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন ওয়াদা করেন আমেরিকার ‘সুদিন’ ফিরিয়ে আনার জন্য। তাদের কথা হলো, রাজনীতিতে স্থায়ী শত্রু-মিত্র নেই; জাতীয় স্বার্থই প্রধান।
আফগানিস্তান থেকে সৈন্য দল সরিয়ে নিলেও এখনো আফগান ইস্যু আমেরিকার বিরাট মাথাব্যথার হেতু। এ যেন ‘ম্যায় তো কমলি কো ছোড় দিয়া, লেকিন ও তো মুঝকো ছোড়তা নেহি - আমি কম্বল ফেলে দিয়েছি; কিন্তু কম্বল আমাকে ছাড়ে না।’ ঘটনা হলো, এক লোক বন্যার পরে নদীর পাড় থেকে দেখে, প্রচণ্ড স্রোতে কম্বলের মতো কিছু একটা নদীর পানিতে ভেসে যাচ্ছে। আসলে সেটি ছিল একটা জীবন্ত ভালুক যদিও তা লোকটা বুঝতে পারেনি। সে কম্বলের লোভে ভোম্বলের বা বোকার মতো কাজ করল। নদীর পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে তা ধরে যত টানে, ততই ‘বেয়াড়া’ ভল্লুক নাছোড়বান্দা। অবশেষে না পেরে লোকটি ক্ষান্ত হয়ে সেটিকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু ততক্ষণে ভালুকটি তাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার প্রয়াস পাচ্ছে। তখন সে নিরুপায় হয়ে এ কথা বলেছিল।আফগানিস্তানে তালিবানের চেয়ে অনেক বড় বিপদ, বহু বেশি ভয়ঙ্কর হল, আইএস-আলকায়েদা প্রমুখ উগ্রবাদী গোষ্ঠী। এখন তারা তালিবান প্রশাসনের জন্যও মাথাব্যথার বিরাট কারণ। তাদের ভয়াবহ সন্ত্রাসী তাণ্ডবে সবাই দিশাহারা ও আতঙ্কিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন তাই ‘ইসলামিক’ স্টেট খোরাসান (আইএসকে)-এর মোকাবেলায় আফগানিস্তানের তালিবান শাসক মহলের সাহায্য চাইছে।
(ক্রমশ...)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct