বর্তমানে নেতাজি আইল্যান্ড নামে খ্যাত
রস আইল্যান্ড
বেবি চক্রবর্তী
____________________________
আন্দামানের সাধারণ জনসাধারণ কিংবা এখানকার পর্যটকদের সবার প্রিয় এই আইল্যান্ড। স্যার ড্যানিয়েল রসের নাম অনুসারে এই দ্বীপের নামকরণ করা হয়েছে রস আইল্যান্ড । তিনি ছিলেন ব্রিটিশ জরিপকর্মী। পোর্টব্লেয়ার বন্দরকে পাহারা দেওয়ার কাজে তিনি এই দ্বীপকে চিহ্নিত করেন। ব্রিটিশ শাসনে এই দ্বীপই ছিল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের হেড কোয়ার্টার। 0.3 বর্গকিমি আয়তনের এই দ্বীপ তখন ঘন বন জঙ্গলে ঢাকা। জঙ্গল কেটে দ্বীপকে বাসযোগ্য করার পরিশ্রমসাধ্য কাজ করতে হয়েছিল বন্দিদের। তখন ব্রিটিশ সাহেবরা ছিলেন জাহাজে,তাঁরা ডাঙায় পা রাখেননি। শাসনের কেন্দ্রবিন্দুকে মনের মতো করে এই রস আইল্যান্ড কে সাজিয়েছিল ব্রিটিশরা। কি ছিলো না সেখানে ?বিলাসবহুল বাংলো, বড় গির্জা,প্রিন্টিং প্রেস,পোস্ট অফিস,সুইমিং পুল,ড্যান্স বার,পাওয়ার হাউস,বেকারি থেকে শুরু করে সমাধিস্থান। জীবনযাপনের সব প্রয়োজনকে এখানে বন্দিদের দিয়ে তৈরি করিয়েছিলেন ব্রিটিশ শাসকরা।তখনকার রস আইল্যান্ড যেনো এ যুগের এক বিলাসবহুল পাঁচ তারা হোটেল। রস আইল্যান্ডের বাসিন্দা বলতে এখন শুধু একপাল হরিণ ও ময়ূর। বিশ শতকের গোড়ায় হরিণদের সেখানে শুধু রাখা হয়েছিল ব্রিটিশদের শিকার শিকার খেলার জন্য। সেই খেলা বন্ধ হয়েছে বহু দিন। এখন দ্বীপের সবুজকে আশ্রয় করে অতীত কারাগারে বসবাস করছে এই হরিণের আর ময়ূরের দল। অতীতের প্রাণস্পন্দনের সব চিহ্নকে নিয়ে আজও প্রাণহীন হয়ে পড়ে আছে এই দ্বীপ। শোনা যায় অতীতের বন্দিদের আত্মা এখনও নাকি ঘুরে বেড়ায় পরিত্যক্ত জনপদের আনাচে কানাচে। আন্দামানের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নেতাজির সুভাষ চন্দ্র বসুর নাম। ১৯৪১ সালের বিধ্বংসী ভূমিকম্প হয় আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে। কিন্তু তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি পোর্টব্লেয়ার বা রস আইল্যান্ডের ব্রিটিশ উপনিবেশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ দখল করে জাপানিরা। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত এই দ্বীপ ছিল জাপানিদের অধীনে। ঠিক সেই সময় ১৯৪৩-এর ৩০ শে ডিসেম্বর এই রস আইল্যান্ডের মাটিতে পা রেখেছিলেন নেতাজী সুভাস চন্দ্র বসু, সেখানে একদিন একরাত ছিলেনও তিনি । ১৯৪৩ সালে ৩০ ডিসেম্বর পরাধীন ভারতে পোর্ট ব্লেয়ারের (সাউথ পয়েন্টে)ভারতবর্ষের সর্ব প্রথম তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলনও করেন। বর্তমানে যেটা তেরঙ্গা পয়েন্ট নামে পরিচিত।
আন্দামানে বাঙালি জনসংখ্যা বেশি তাই বাঙালি দের কথা ভেবে এবং ২০১৯ শের লোকসভা ভোটের ভোট ব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে ২০১৮ সালে ৩০ শে ডিসেম্বর অতীতের ঘটনাকে স্মরণ করে রস আইল্যান্ডের নতুন নামকরণ করেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।এবং সাউথ আন্দামান জেলার এই দ্বীপের(রস আইল্যান্ডের) নাম পরিবর্তন করে নাম হয় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু দ্বীপ নামে। এবং ওই দিনে (৩০ ডিসেম্বর)ঠিক একই জায়গায় (১৯৪৩ সালে ৩০ ডিসেম্বর যেখানে ভারতের প্রথম পতাকা উত্তলন করেছিলেন নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসু) ঠিক সেখানেই নতুন করে পতাকা উত্তলন করেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
নেতাজী কে নিয়ে পরাধীন অথবা স্বাধীন ভারতে চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়েই চলেছে যুগের পর যুগ,অতীত এবং কত সরকার যায় আর কত সরকার আসে ! যেন ভাঙাগড়া খেলা মাঝখানে নদী বয়ে যায় অসহায় মানুষের অসহতায় জল আজও বয়ে চলে ফুটপাতে রাস্তায় খোলা আকাশের নীচে নিত্য জীবন যাপন যে সব খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ তীর্থের কাকের মত আজও চেয়ে - কেন্দ্রীয় সরকারের বা রাজ্য সরকার সবই লাগে একই যখন সাধারণ মানুষের চোখ থেকে ঝরে ঝর্ ঝর্ করে অসহতার নোনা জল। বরং মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষ চিরকাল বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু আন্দামানের এর বিস্তৃত এবং অপ্রকাশিত ইতিহাসের উন্মোচন যদি না করা না হয় তাহলে আগামী প্রজন্মের মানুষের কাছেও নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসু নিয়ে ধোঁয়াসা থেকেই যায়। মান্না দে র গানের কথায়... মানুষ খুন হলে পরে মানুষই তার বিচার করে। তবে যাই হোক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আজও আমাদের কাছে আলোচ্য বিষয়। ১৯৩১ সালে গান্ধী আরউইন চুক্তি তা স্পষ্ট দেখা যায়। ভগৎ সিং এর ফাঁসি একমাত্র গান্ধীজি আটকাতে পারতো কিন্তু না তিনি এটা করলেন না বিপ্লবীদের পক্ষ থেকে ছিলেন গান্ধীজি ইংল্যান্ড থেকে আগত বনিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ছিলেন লর্ড আরউইন সেইদিন ছিল সূর্যের প্রখর রোদ দাঁড়িয়ে নীচে সাধারণ মানুষ ওই দিন বৈঠক চলেছিল জনসমক্ষে রায় “ভগৎ সিং ফাঁসি”। লর্ড আরউইন বললেন গান্ধীজিকে সাধারণ মানুষের কি চাইছেন ! গান্ধীজি বললেন সাধারণ মানুষ বলছেন ভগৎ সিং কে ছেড়ে দেওয়া হোক্। লর্ড আরউইন এর জবাবে সেখানে বলেছিলেন আসম্ভব ( Impossible)। বিপ্লবীদের পক্ষ থেকে তখন সবাই ভেবে ছিল গান্ধীজি ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে চলে আসবে কিন্তু না গান্ধীজি তা করলেন না বরং খচ্ খচ্ সাইন করলেন গান্ধী আরউইন চুক্তিতে। এই ঘটনার পর সুভাষচন্দ্র চন্দ্র বসু এবং আরও অনেক বিপ্লবী কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে আসে অ - কংগ্রেসি দল গঠন করেন। ব্রিটিশ এবং জাপানিদের কিছু কিছু তথ্য সেলুলার জেল এবং রস আইল্যাণ্ডের লাইট এন্ড সাউন্ড থেকে নেওয়া হয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct